প্রীতিলতা স্বদেশ:
“ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত।” এ কথা গতকাল আর কেউ সাহস করে বলতে পারেননি। কারণ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে সেই বসন্তের প্রথম দিন আজ। দিনপঞ্জি বদলে ফেলা হয়েছে। বাংলার বিশেষ দিনগুলিকে ইংরেজি দিনে ঠিক রাখতেই বিশিষ্টজনদের এই বিশেষ আয়োজন। তার ফলে এতোদিন পহেলা ফাল্গুল ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে পড়লেও এবার থেকে পড়ছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। তাতে ক্ষতিটা খুব সম্ভবত হল রোমান্টিক জুটিগুলোর। ভালবাসায় ডুবে থাকতে প্রথম বসন্ত আর ভালবাসা দিবসের পৃথক আয়োজন দুটি যেন একদিনেই মিশে গেল।
গতকালটা ফাগুন রঙে রাঙা হলেও তা বসন্তের প্রথম স্বাদটা ভুলে থাকতে হয়েছে একান্ত অনিচ্ছায়। ১৩ আর ১৪ই ফেব্রুয়ারির পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিছুটা মন খারাপই ছিলো অনেকের। দুটো দিন নিজেদের মতো করে হলুদ আর লালে মিলিয়ে কাটানোর সংকোচনে এই মন খারাপ। যদিও অনেকেই আবার মনের ভুলে প্রগাঢ় প্রেমে আহবান জানিয়েছেন বসন্তকে সেই গতকালই। পহেলা ফাল্গুন মনে করে অনেকেই বেরিয়েছিলেন বাসন্তী পোশাকে।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ঘুরছিলেন অনেকেই। হাতে হাত রেখে বসেছিলেন কণা আর আজাদ।একটু কথা কথা বলা যাবে কি না, বলতেই তারা সাদরে আহবান জানালেন পাশে বসতে। দুইজনই পড়েছেন বাসন্তী রঙের পোশাক। আজতো বসন্তের প্রথম দিন নয়, তকে কেন এই বিশেষ আয়োজন? জিজ্ঞেস করতেই দুজনেই উঠলেন খানিকটা। বললেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী পহেলা ফাল্গুন হলুদ পোশাক আর ভালোবাসার দিনে লাল পোশাক পড়ে বের হবার কথা অনেক আগেরই। বাংলা নতুন ক্যালেন্ডারের কথা মনে ছিল না।তাই আগের পরিকল্পনাতেই বের হওয়া। এই পরিবর্তনে তারা কিছুটা নাখোশই। তাই তারিখ পাল্টে গেলেও উপলক্ষ্য উদযাপনে ওদের মতো অনেকেই বেরিয়েছেন বাইরে, সময় কাটিয়েছেন নিজেদেন মতো।
কেন এই পরিবর্তন? এই পরিবর্তনে কিইবা এমন লাভ হলো, এটা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। তবে বাস্তবতা এই যে, সংশোধিত বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী এখন বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত ছয়মাস ৩১ দিন আর কার্তিক থেকে চৈত্র মাস হবে ৩০ দিন। এর মধ্যে অবশ্য ফাল্গুন হবে ২৯ দিন। এখানেই শেষ নয় গ্রেগরীয় পঞ্জিকা মতো অধিবর্ষে ফাল্গুন মাসকে আবার গুনতে হবে ৩০ দিনে। এতে কী লাভ হবে? লাভ হল, দেশের বিশেষ ঐতিহাসিক দিনগুলোর বাংলা এবং ইংরেজি তারিখ একই থাকবে, ঠিক থাকবে বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখও। বিশেষ দিনগুলোর সঙ্গে ইংরেজি তারিখের আর গরমিল হবেনা।
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেছেন, এই পরিবর্তনের ফলে এখন থেকে আর বিশেষ বিশেষ তারিখের আর কোন সমস্যার তৈরি হবেনা। ইতিহাসের বিশেষ দিনগুলো কিংবা এছাড়া এই বর্ষপঞ্জি তৈরিতে বাংলা ভাষাবিদ, বিশেষজ্ঞ ছাড়াও পঞ্জিকা তৈরিতে বিশেষজ্ঞদেরও সহায়তা নেয়া হয়েছে।
আবার ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষ্যে আগে খুব একটা আয়োজন থাকতো না সংস্কৃতি অঙ্গনের। তবে বসন্ত বরণের আয়োজন থাকে বেশ। এবারও তার ব্যত্যয় হচ্ছেনা। বরং আজ শুক্রবার মানে ছুটির দিন হওয়ায় এসব আয়োজনে রঙ লাগবে বেশ এটা বলাই যায়।