নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল : পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, “বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা গড়ার জন্য তিনি সারাটা জীবনই কষ্ট করে গেছেন। নিজের জীবনের ১৪টি বছর তিনি কারাগারে ছিলেন। সেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তারই সুযোগ্য কন্যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন।”
শনিবার (০৩ অক্টোবর) দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউজের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে গুচ্ছগ্রামে পুর্ণবাসিত পরিবারের মধ্যে দলিল হস্তান্তর ও সুবর্ণ নাগরিকদের মধ্যে হুইল চেয়ার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামচরি গুচ্ছগ্রামে পুর্নবাসিত ৬০ পরিবারের মাঝে দলিল হস্তান্তর ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ২০ সুবর্ণ নাগরিকদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এমন বড় প্রকল্প নিয়েছেন, যা বিশ্বের ধনী দেশগুলোও হাতে নেয়ার সাহস পেতো না। কারণ পৃথিবীর ধনী দেশগুলোর আর বাংলাদেশের জনসংখ্যার পার্থক্য আকাশ-পাতাল। বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ, যেখানে ১৬ কোটি মানুষের বসবাস। এক স্কয়ার কিলোমিটারে ১২শত লোক বসবাস করে। যেখানে আমাদের জায়গা নেই, সেখানে এই প্রকল্প নিতে প্রধানমন্ত্রী যে সাহস করেছেন সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।”
তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদেশের মাটি ও মানুষের কথা চিন্তা করেন দেখেই এ ধরণের প্রকল্প নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী যে কতো ধরণের প্রনোদনার ব্যবস্থা করেছেন তার হিসেব নেই, সারাদিন লেগে যাবে সেসব প্রনোদনার কথা বলতে। প্রধানমন্ত্রী যে কতগুলো ভাতার ব্যবস্থা করেছেন সরকার থেকে তা বললেও শেষ করতে পারবো না।”
তিনি বলেন, “প্রতিবন্ধী কথাটা পরিবর্তন করে সুবর্ণ নাগরিক শব্দটা প্রধানমন্ত্রীই দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিবন্ধী বলতে কোন জিনিস নেই, প্রতিবন্ধী বলা যাবে না। যার জন্যই নামটি পরিবর্তন করা হয়েছে। সুবর্ণ নাগরিকদের হুইল চেয়ার দেয়া হয়েছে, যাতে তারা নিজের ওপর নির্ভশীল থাকে, অন্যের ওপর নয়। আর যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন তাদের সরকার থেকে যে ধরণের ঘর দেয়া হচ্ছে তা কল্পনাও করা যায় না। একটা মানুষ সারাটাজীবন চাকুরি, ব্যবসা করে তার পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাই নিশ্চিত করেন, আর সেটা কিন্তু এখন অবলীলায় পেয়ে যাচ্ছেন। এর কারণ প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষকে নিয়ে চিন্তা করেন। আমার বিশ্বাস যাদের ঘর ও জমি দেয়া তারা সেগুলোকে সুন্দরভাবে পরিচর্যা করবেন।”
তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে যে ঘর দেয়া হয়েছে সেটাকে আপনাকে রক্ষনাবেক্ষন করতে হবে। রক্ষনাবেক্ষনের জন্য সরকারের দ্বিতীয়বার আসা সম্ভব না। তাই ঘরটিকে স্বজত্নে দেখভাল করে রাখলে দীর্ঘকাল ব্যবহার করতে পারবেন। আর রক্ষনাবেক্ষন না করলে সেটা ভেঙ্গে যাবে এবং সরকারকে দোষারোপ করবেন।”
তিনি বলেন, “পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খুবই করুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমি দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটে বেড়াই। আমি কোন শুক্র-শনিবার বাসায় সময় কাটাই না। নদীভাঙ্গন এলাকার দুঃখ দুর্দশাগ্রস্থ মানুষদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর যে ব্রত, সেটাকে বাস্তবায়ন করার জন্যই তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমি ছুটে বেড়াই।”
তিনি বলেন, “আমরা বার বার বলছি, নদীর তীর থেকে বালু ওঠাতে দেবেন না। সবাই একজোট হন, প্রতিরোধ করেন। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রলোভন দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজনকে কনভেন্স করে রাতের বেলা বালু উঠিয়ে নিয়ে যায়। এতে সাময়িকভাবে আর্থিক উপকৃত হলেও, পরবর্তীকালে বর্ষা মৌসুমে যে পুরো গ্রাম প্লাবিত হবে তা কিন্তু বুঝলো না।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা নদীর তীর রক্ষাকরি। এক কিলোমিটার নদীর তীরে মাটির বাধে খরচ পড়ে ১ থেকে দেড়কোটি টাকা, আর সেই বাধ যদি ব্লক দিয়ে তৈরি করি তবে ছোট নদীতে খরচ পরে ৩০ কোটি আর ভোলার মতো বড় নদীতে ৮০-৯০ কোটি টাকা। আপনাদের টাকাতেই বাধগুলো নির্মাণ হচ্ছে। কারণ আপনাদের ট্যাক্সের টাকাই সরকারের টাকা। কিন্তু আমরা বলি সরকারের টাকা তো সরকারের, আমাদের না।”
তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যেভাবে গণমানুষের কথা চিন্তা করতেন, তার কন্যাও কিন্তু একইভাবে চিন্তা করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও কিন্তু একইভাবে তার মায়ের পথ অনুসরণ করছেন। আজ যে আমরা সুবর্ণ নাগরিকদের কথা বলছি, তার ওপরে কাজ করে গোটা পৃথিবীতে এখন তিনি সন্মানিত। গোটা বিশ্ব জানেন সুবর্ণ নাগরিকদের নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তার পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই আজ আমরা জানি সুবর্ণ নাগরিকদের নিয়ে কি করা উচিত। তাদের উন্নয়নের কথা, সুযোগ সুবিধার কথা এখন আমরা চিন্তা করি।”
জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ড. অমিতাভ সরকার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, গুচ্ছগ্রাম-২য় পর্যায় প্রকল্পের আঞ্চলিক প্রকল্প পরিচালক মোঃ রেজাউল বারী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শহিদুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মুনিবুর রহমান, সদর উপজেলার ভূমি কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান।
সান নিউজ/এস