নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য (ইইউ) রাষ্ট্রগুলোর ভিসা সেন্টার ভারতের দিল্লি থেকে সরিয়ে রাজধানী ঢাকা অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ইইউ’র কূটনীতিকদের সাথে বৈঠকে তিনি এ অনুরোধ করেন।
আরও পড়ুন: বিচার বিভাগ-দুদক দাসে পরিণত হয়েছিল
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, পুরো ডিসেম্বর মাস আমরা বিজয় দিবস উদযাপন করি। বিজয়ের এই মাসে আপনাদের সাথে এমন একটি ইনট্যারক্টিভ আলোচনায় অংশ নিতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত।
এ সময় বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তিনি গত ১৬ বছর ধরে অত্যাচার, শোষণ, বলপূর্বক গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সম্পর্কে সংক্ষেপে তুলে ধরেন। এ সময় তিনি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রের বিষয় উল্লেখ করে দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং ব্যাংকিং সিস্টেমকে কীভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছিলো কূটনীতিকদের সে সকল কথা জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক আকারে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। আমরা এই অপপ্রচার ঠেকাতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা ব্যাপক টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে, তা দিয়েই তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
সম্প্রীতি জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময়ের কথাও এই বৈঠকে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও তিনি ইইউ প্রতিনিধিদের বিশদভাবে জানান।
আরও পড়ুন: সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ভারত
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করায় আমাদের অনেক শিক্ষার্থী দিল্লি গিয়ে ইউরোপের ভিসা নিতে পারছেন না। এর ফলে তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এতে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। এ সময় ভিসা অফিস রাজধানী ঢাকা বা তার প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তর হলে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে।
এই বৈঠকে উপস্থিত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে বুলগেরিয়া বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করেছে। তিনি অন্যান দেশগুলোকেও এই একই প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানায়।
এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন ইইউ প্রতিনিধিরা। এরপর তারা পরামর্শ ও সুপারিশ জানিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দেন তারা।
এ সময় ইইউ’র ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার। প্রধান উপদেষ্টার সাথে এই বৈঠকে অংশ নেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
আরও পড়ুন: নাগরিকদের ভোটার হওয়ার আহ্বান
প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে ১৫ জন প্রতিনিধি তাদের নিজ নিজ মতামত তুলে ধরেন। এই বৈঠকে শ্রম অধিকার, বাণিজ্য সুবিধা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন ও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে উভয়ের অঙ্গীকার ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে।
সান নিউজ/এমএইচ