নিজস্ব প্রতিবেদক:
কখনও তিনি পরিবহন শ্রমিক নেতা, কখনও পরিবহন মালিক, কখনও’বা গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা। কখনও মন্ত্রী, কখনও আবার যুদ্ধাপরাীদের বিচারের আন্দোলন নেতা। জাসদের রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে হয়েছেন দলের শীর্ষ নেতাদের একজন। তিনি শাজাহান খান। এবার আদালতের কাঠগড়ায় উঠতে হচ্ছে সরকারের সাবেক এই মন্ত্রীকে।
গত ২৫ বছর ধরে সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন করে আসা ‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের’এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের দায়ের করা মানহানির মামলায় আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মামলাটির গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকার এক নম্বর যুগ্ম জেলা জজ উৎপল ভট্টাচার্য।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে শাজাহান খান বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন কোথা থেকে কত টাকা পান, কী উদ্দেশ্যে পান, সেখান থেকে কত টাকা নিজে নেন, পুত্রের নামে নেন, পুত্রবধূর নামে নেন সেই হিসেবটা আমি জনসম্মুখে তুলে ধরব’।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন নিরাপদ সড়ক চাইসহ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচারের মাধ্যমে অসত্য, বানোয়াট ও উদ্ভট বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে গত বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) আদালতে ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেন শাজাহান খানের বিরুদ্ধে।
শাজাহান খানকে নিয়ে বিতর্ক এবারই প্রথম নয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি আছেন নানা আলোচনা-সমালোচনায়। মন্ত্রী থাকা অবস্থায় আরও বেশি বিতর্কের সৃষ্টি করেন তিনি।
২০১১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনির নিহত হলে চালকদের লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা নিয়ে কথা উঠলে তিনি বলেছিলেন, ‘গরু-ছাগল চিনতে পারলেই তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান তখন ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোল ‘ নামের একটি সংগঠনের জন্ম দিয়ে বনে যান সেটির আহবায়ক। এতে সরকারকে যেমন বিব্রত হয়ে হয়েছিল, একইভাবে বিব্রতবোধ করছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে থাকা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
২০১৫ সালে পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় তিনি বলেছিলেন, ‘দেশে কোটি মানুষের বাস। এর মধ্যে ঢাকায় থাকেন দুই কোটি মানুষ। তাই এমন ঘটনা ঘটতেই পারে।’
২০১৭ সালে সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে ঢাকার আদালত ট্রাকচালকের ফাঁসির রায় দিয়েছিলেন। ওই সময় তার অবস্থান ছিল আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সারাদেশ অচল করে দেয়া পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষে। তখন তার মন্তব্য ছিল, ‘ফাঁসি দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে-তা ভুল ধারণা। একজন মন্ত্রীর সন্তান কুকুর বাঁচাতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন। তাই বলে কি সে কুকুরের ফাঁসি হবে?’
২০১৮ সালে সড়কে দুই শিক্ষার্থীর ওপর বাস তুলে দেয়ায় নিহতের ঘটনার দিনই শাজাহান খান হাসিমুখে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মহারাষ্ট্রের দুর্ঘটনার উদাহরণ টেনে এনে বিষয়টি উড়িয়ে দেয়ায় সারাদেশ ফুসে ওঠে তার বিরুদ্ধে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে কখনও কোনভাবে জড়িত না থাকলেও এখাতের শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের নামে বিশাল সমাবেশ করেও বিতর্কের জন্ম দেন সাবেক এই নৌ-পরিবহন মন্ত্রী।