নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রামের যোগাযোগ আরো সহজ করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল রেল লাইনের নির্মাণ কাজ চলতি বছরের জুনের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
ডাবল লাইনে চলাচল শুরু হলে মাত্র সোয়া তিন ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন ভ্রমণ সম্ভব হবে। বর্তমানে এ পথে ট্রেনে পৌঁছাতে সময় লাগছে সোয়া পাঁচ ঘণ্টা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ করতে দিন-রাত পরিশ্রম করছেন দেশি বিদেশি শ্রমিকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন এটি চালু হলে জ্বালানি তেল খরচ যেমনি কমবে, তেমনি সময়েরও সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়ে উঠবে আরেও বেশি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার লাকসাম-আখাউড়া অংশের ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণের কাজ শেষ হলে ঢাকা-চট্টগ্রামের ৩২৫ কিলোমিটার রেলপথের পুরোটাই ডাবল লাইনে উন্নীত হবে।
দ্রুতগতির ট্রেন কিংবা বুলেট ট্রেন চালুর উপযুক্ত পথ হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ৩২৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১১৮ কিলোমিটার ডাবল লাইন আগেই করা ছিল। এরমধ্যে ২০১১ সালে টঙ্গী-ভৈরববাজার পথে ৬৪ কিলোমিটার ও লাকসাম-টিনকি আস্তানা পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ করা হয়।
ডাবল লাইন নির্মাণ হলে একইসঙ্গে একাধিক সরাসরি ট্রেনসহ আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু করা যাবে।
বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পুরো রেলপথকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। এরইমধ্যে ৩২৫ কিলোমিটারের মধ্যে ২৫৩ কিলোমিটার রেল লাইন ডুয়েলগেজ লাইনে উন্নীত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ছিল কেবল কুমিল্লার লাকসাম-আখাউড়া সড়কের ডুয়েল লাইনের কাজ।
লাকসাম-আখাউড়া ডুয়েলগেজ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ছয় হাজার ৫০৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে এডিবি ঋণ হিসেবে সহায়তা দিচ্ছে চার হাজার ১১৮ কোটি ১৪ লাখ এবং ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) দিচ্ছে এক হাজার ৩৫৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বাকি এক হাজার ২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি ২০১৪ সালে ডিসেম্বরে অনুমোদন পায়।
সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ মেইন লাইন ও ৪০ দশমিক ৬০ কিলোমিটার লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে। মেইন লাইনে ১৩২ পাউন্ড ও লুপ লাইনে ৯০ পাউন্ড রেলপাত ব্যবহার হবে। এছাড়া ১১টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়ন, ১৩টি মেজর ও ৪৬টি মাইনর ব্রিজ, ১১টি স্টেশনের ভবনসহ ৬৮ হাজার ১৯০ বর্গমিটারের ইঞ্জিনিয়ার্স অফিস নির্মাণ করা হবে।
‘আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ ও বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর’ প্রকল্পের পরিচালক ডিএন মজুমদার জানান, এ প্রকল্প যথাসময়ের মধ্যে সমাপ্ত করতে ব্যাপক চাপ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল রেল লাইনের নির্মাণকাজের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছেন। প্রকল্পটির কাজ সমাপ্ত হবে ২০২০ সালের জুনে।
তিনি আরো বলেন, এ প্রকল্পটি জয়েন্ট ভেঞ্চার গ্রুপের মাধ্যমে কাজ করছে। এর মধ্যে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিটিএম জয়েন্ট ভেঞ্চার) মিলে কাজগুলো করছে। এরইমধ্যে লাকসাম-আখাউড়া রেলপথের ডুয়েলগেজ কাজের অগ্রগতি প্রায় ৬৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
সান নিউজ/সালি