নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। এ সময় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘জলাতঙ্ক নিমূলে প্রয়োজন সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসন’। এই দিবসটির উপলক্ষ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে র্যালি ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মালদ্বীপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চাই
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে র্যালি ও আলোচনা সভা করতে দেখা যায়।
এবারের প্রতিপাদ্যে হিসেবে- দেশে জলাতঙ্ক নির্মূলে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা, সমতার গুরুত্ব এবং সামগ্রিক ব্যবস্থাকে ওয়ান হেলথ এর মাধ্যমে সম্পন্ন করার বিষয়গুলোতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সম্প্রতি পুরো বিশ্বে কুকুর-বিড়ালসহ অন্যান্য প্রাণীর আক্রমণের শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বিগত বছর বিভিন্ন প্রাণীর কামড়-আঁচড়ে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে টিকা নিয়েছেন। এতে জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগীর বহুলাংশে সংখ্যা কমেছে। বাংলাদেশে ২০১০ সালের আগে প্রতিবছর এই রোগে ২০০০ এর বেশি মানুষ মারা যেত, যা ২০২৩ সালে কমে মাত্র ৪২ জনে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০২২ এ ছিলো ৪৪ জন। রাজধানীর মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু
মরণঘাতী এই জলাতঙ্ক বহু পুরোনো একটি সংক্রামক রোগ। এই রোগের লক্ষণ একবার দেখা দিলে মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু সময় মতো সঠিক ব্যবস্থা অথাব টিকা গ্রহণ করলে এই রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। কুকুর, বিড়াল, বানর, বেজি ও শিয়ালের কামড় বা আঁচড় দিলে সাথে সাথে ক্ষারযুক্ত সাবান পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধুয়ে নিতে হবে। সাথে যথাসময়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার জলাতঙ্ক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেন। এরপর স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রাণিসম্পদ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের যৌথ উদ্যোগে (২০১১-১২) সাল থেকে জলাতঙ্ক রোগ নির্মূল কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। জলাতঙ্ক রোগ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কৌশল পত্র প্রস্তুত করে দেশকে জলাতঙ্কমুক্ত করার অঙ্গীকার নিয়ে এবং তা বাস্তবায়নে রোডম্যাপ তৈরি করা হয়। আর এ সকল বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করছে জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন: বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই তিস্তার পানি
জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর মাধ্যমে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য সারাদেশে সব জেলা সদর হাসপাতাল ও ৩৩৮টির বেশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর পরে পর্যায়ক্রমের দেশের সকল উপজেলায় এই রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
রাজধানীর মহাখালীতে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও ঢাকার ৫টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে জলাতঙ্কের আধুনিক চিকিৎসা কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে। এ সময় কুকুর বা অন্যান্য প্রাণীর কামড়ের ঘটনায় এ সকল কেন্দ্রে আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্নভাবে বিনামূল্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: জাপানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ইশিবা
এদিকে, জাতীয় গাইডলাইন অনুসারে বর্তমানে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের পূর্ণ ডোজ ৩টি (০, ৩ ও ৭) দিনে নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে ১ সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় রোগীদের অর্থ ও সময়, দুই-ই সাশ্রয় হচ্ছে। সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সকল সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। যা দক্ষিণ এশিয়ায় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এরই পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ল্যাবে প্রাণীদেহে জলাতঙ্কের জীবাণু নিশ্চিতকরণের কাজ করছে। এতে করে নির্দিষ্ট স্থানে এ রোগের উপস্থিতি ও প্রাদুর্ভাব নির্ণয় করে মানুষ ও প্রাণিদেহে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর নির্ভর করে পরিবেশে জলাতঙ্কের প্রধান উৎস কুকুরের মধ্যে ব্যাপকহারে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।
সান নিউজ/এমএইচ