প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
জাতীয়

‘ভ্যাকসিন যেন সময়মতো সবাই পায়’

সান নিউজ ডেস্ক:

করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে সব দেশ যেন এটি সময় মতো এবং একইসঙ্গে পায়, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে কারিগরি জ্ঞান ও মেধাস্বত্ত্ব পেলে বিপুল পরিমাণে ভ্যাকসিন উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৫তম অধিবেশনে ভার্চ্যুয়াল ভাষণে তিনি বলেন, তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের আহ্বানও জানান তিনি।

নিউইয়র্কে চলমান জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর আগে রেকর্ড করা ভাষণ ভার্চ্যুয়ালি প্রচারিত হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ১১ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিককে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তিন বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। এই সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এর সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে আরও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।’

ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থনের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে বাঙালি জাতি অবর্ণনীয় দুর্দশা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের শিকার হয়েছে। সেই কষ্টকর অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছি।’

করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে সারা বিশ্বে সৃষ্ট সংকটের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা প্রমাণ করেছে, আমাদের সবার ভাগ্য একই সূত্রে গাঁথা। আমরা কেউই সুরক্ষিত নই, যতোক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছি। এ মহামারি আমাদের উপলব্ধি করতে বাধ্য করেছে যে, এ সঙ্কট উত্তরণে বহুপাক্ষিকতাবাদের বিকল্প নেই। জাতিসংঘের ৭৫তম বছরপূর্তিতে জাতিসংঘ সনদে অন্তর্নিহিত বহুপাক্ষিকতাবাদের প্রতি আমাদের অগাধ আস্থা রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও বহুপাক্ষিকতাবাদের আদর্শ সমুন্নত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

করোনাকালে অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের মতো বিষয়গুলো বাড়াচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা এ বিষয়গুলোর মোকাবেলা করতে পারি।

সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শান্তির প্রতি অবিচল থেকে আমরা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরোটলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি। মহামারির ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতীয় উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও অপরিহার্য।

‘পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী বিনির্মাণে বৈশ্বিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি আমাদের সমর্থন অবিচল। সে বিবেচনা থেকে পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্যক্রমকে আমরা জোর সমর্থন জানাই।’

জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বিদ্যমান সমস্যা প্রতিনিয়ত প্রকট হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সঙ্কটকালেও আমাদের বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সিভিএফআই ভি-২০ অর্থমন্ত্রীর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ূ সমস্যা উত্তরণে টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়নে নেতৃত্ব দেবে। এ ছাড়াও গ্লাসগো পার্টির সম্মেলনের (সিওপি) গঠনমূলক ও কার্যকর ফলাফল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সর্বদা সচেষ্ট থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আশা করা হচ্ছে, বিশ্ব শিগগিরই কোভিডের ভ্যাকসিন পাবে। এই ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। সব দেশ যেন এই ভ্যাকসিন সময়মতো এবং একইসঙ্গে পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

ভ্যাকসিন উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারিগরি জ্ঞান ও মেধাস্বত্ত্ব দেওয়া হলে, এই ভ্যাকসিন বিপুল পরিমাণে উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তিগত বিভাজন নিরসন, সম্পদ আহরণ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য আমাদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল এবং সদ্য উত্তরিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই আপদকালীন, উত্তরণকাল ও উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বর্ধিত আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং প্রণোদনা প্যাকেজ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

‘মহামারি নিরসনে আমাদের উদ্যোগ এবং এজেন্ডা-২০৩০ অর্জনে আমাদের প্রচেষ্টা সমানতালে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ভলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ রিপোর্ট উপস্থাপন প্রমাণ করে যে, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে আমরা যথাযথভাবে এগিয়ে চলেছি। বাংলাদেশকে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ব-দ্বীপে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি।’

অভিবাসী শ্রমিকদের বিষয়টি সহমর্মিতার সঙ্গে ও ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচনা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও অভিবাসীগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘প্রবাসী শ্রমিকরা স্বাগতিক ও নিজ দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রেখে চলেছেন। এই মহামারির কারণে অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। অনেককে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা দেশে ফিরে আসা অভিবাসী শ্রমিকদের প্রণোদনা বাবদ ৩৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছি। তবে কোভিড পরবর্তী সময়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

বিশ্বব্যাপী কোভিডের কারণে জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্বনেতারা বিশ্বের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভার্চ্যুয়াল অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন।

এবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘আমরা ভবিষ্যৎ চাই, জাতিসংঘ আমাদের প্রয়োজন: বহুমুখিতার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিতের মাধ্যমে।’

করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু করোনা আমাদের এ অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করেছে।’

‘এ ভাইরাস আমাদের অনেকটাই ঘরবন্দি করে ফেলেছিল। এর ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।’

করোনা মহামারি সংকট মোকাবেলায় সবার ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের বিষয়টি আবারও সামনে এনেছে মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেমন জাতিসংঘ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ওপর গুরুত্বারোপের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, তেমনি এ মহামারি আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক নেতৃত্ব দিতে প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।’

স্বাস্থ্যকর্মীসহ যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিয়ে চলেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে করোনা দুর্যোগে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব ও সংস্থাটির প্রশংসা করেন তিনি।

সান নিউজ/ এআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

তৌহিদ-জয়শঙ্কর বৈঠক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের...

৫৩ পোশাক কারখানা বন্ধ

জেলা প্রতিনিধি: ঢাকা জেলার সাভার...

ড. ইউনূস-বাইডেনের বৈঠক আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের...

ট্রাকে ট্রেনের ধাক্কা

জেলা প্রতিনিধি: জয়পুরহাটে রেলক্রসিং পারাপারের সময় থেমে যাওয়...

শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত 

নিজস্ব প্রতিবেদক: মজুরি বৃদ্ধি এবং বছর শেষে ১০ শতাংশ হারে &l...

ঠাকুরগাঁওয়ে বজ্রপাতে নিহত ৩

জেলা প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে ৩ জন নিহত...

খুব শিগগিরই বড় পর্দায় দেখা যাবে

বিনোদন ডেস্ক: ছোট পর্দার বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তান...

বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

নিজস্ব প্রতিবেদক: পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উত্তর-প...

লেবাননে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৫৫৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: লেবাননে ইসরায়েলের চালানো বিমান হামলায় নিহ...

বাতিল পরীক্ষার টাকা ফেরত পাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্দোলনের মুখে বাতিল হওয়া এইচএসসির ৬ বিষয়ে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা