প্রীতিলতা স্বদেশ, লালমনিরহাট:
বীর শহীদদের সন্মান আকাশ সমান উঁচুতে তুলে ধরতেই প্রতীকী অর্থে তৈরি হয় শহীদ মিনার। সেই প্রতীকী চিহ্নের শক্তি এতোটাই প্রবল যে ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারটিকে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি ভয়ে গুড়িয়ে দিয়েছিল রাতের অন্ধকারে।
অথচ এই স্বাধীন দেশেই বাঙালির অহঙ্কার শহীদ মিনারকে রাখা হয় অনাদরে অবহেলায়। এমন কী প্রভাবশালী কারো কারোর ব্যক্তিগত একটা বাড়ির সামান্য সৌন্দর্যের কাছেও তা তুচ্ছ হয়ে ওঠে।
এমন অভিযোগই উঠেছে লালমনিরহাটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে ঘিরে। দেশের সকল গাণতান্ত্রিক আন্দলোন, সব ধরণের অন্যায় আর অপশক্তির বিরুদ্ধে সাহস যোগায় যে ২১শে ফেব্রুয়ারি, সেই ভাষার মাসেই শহীদ মিনারটিকে রক্ষার দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন সেখানকার ভাষা সৈনিক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা।
এখানকার মানুষের বেশিরভাগ সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড আবর্তিত হয় প্রায় পাঁচ দশক আগে নির্মিত এই শহীদ মিনারকে ঘিরে। শহীদ মিনারটির পেছন দিকে নির্মিত এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার বিলাসবহুল বাড়ির সৌন্দর্য যাতে ঢাকা না পড়ে সেজন্য নাকি অদৃশ্য ইশারায় বদলে ফেলা হচ্ছে মিনারের নকশা।
এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ লাখ টাকার বাজেটে এটির সংস্কারের কাজ শুরু হয় কয়েকদিন আগে। আর সেই সুযোগে শুরু হয় শহীদ মিনারটির মূল বেদি অন্যপাশে সরিয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র। প্রাঙ্গনের মাঝখান থেকে সরিয়ে এক কোনে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন মিনার। এতে ওই বাড়ির সৌন্দর্য প্রকাশ হলেও অনেকটাই আড়াল হবে শহীদ মিনার। এতে বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সবাই।
তারা বলছেন, নিজের বাড়ির সৌন্দর্যকে তুলে ধরতে আওয়ামী লীগ নেতা এবং ব্যবসায়ী শাখাওয়াত হোসেন সুমনের ষড়যন্ত্রেই সরিয়ে ফেলা হচ্ছ মিনারের মূল বেদি। অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, শহীদ মিনার যেখানেই নির্মিত হোক তার কোন সমস্যা নেই।
মূল বেদি সরানোর কারণ হিসেবে পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম মিন্টু ও জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলছেন, অধিক সংখ্যক মানুষ যাতে বেদিতে আসতে পারে সেজন্যই স্থান পরিবর্তন। আর কোন সমস্যাও দেখছেন না তারা।
তবে সমস্যা দেখছেন স্থানীয়রা। সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ বলছেন একজন ব্যক্তির সামান্য স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে এভাবে মিনারের স্থান নির্বাচন কোনভাবেই মানবেন না তারা।