নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর যানজট নিরসনসহ যাত্রীদের ভ্রমণ নিরবচ্ছিন্ন ও আনন্দদায়ক করতে চালু হলো আন্তঃজেলা বাসের গেটলক সিস্টেম। এতে যাত্রীদের নির্দিষ্ট পথের যাত্রায় সময়ও বাঁচবে। যেসব বাস এ সিস্টেম না মেনে যত্রতত্র যাত্রী তুলবে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেবে ট্রাফিক পুলিশ।
আরও পড়ুন: অবশেষে দেশে ফিরল এমভি আবদুল্লাহ
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ সিস্টেমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত আন্তঃজেলা বাসগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে পারবে না। এতে যানজট অনেকটাই নিরসন হবে। এ সিস্টেম মহাখালী থেকে উত্তরা পর্যন্ত বৃদ্ধি করার পরামর্শও দেন তারা।
গুলশান ট্রাফিক বিভাগ জানায়, গেটলক চেকিং সিস্টেমে টার্মিনাল থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে বাস গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়ার পর নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া আর কোথাও দাঁড়াতে পারবে না।
টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে কাকলী, কুর্মিটোলা, খিলক্ষেত ও সর্বশেষ আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে চলে যাবে। যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
পুলিশের দেয়া তথ্যানুযায়ী, মহাখালী থেকে বাস ছাড়ার আগে যাত্রীদের তালিকা, চালকের নাম, গাড়ির নম্বরসহ একটি প্রস্থানপত্র দেয়া হচ্ছে। বাস কাকলীতে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, তালিকা অনুযায়ী যাত্রী আছে কিনা।
ট্রাফিক পুলিশ বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করছে। সেই সঙ্গে পরিবহন সংশ্লিষ্টরাও বিষয়টির দেখভাল করছেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার
মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া সব বাস বনানী পর্যন্ত যত্রতত্র যাত্রী উঠা-নামা করায়। ফলে যানজট তৈরি হয়। এ সমস্যা দীর্ঘ দিন ধরে চলছে।
আমরা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান ও গুলশান ডিভিশনের ট্রাফিকের উপ-কমিশনার আব্দুল মোমেনসহ শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছি।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, মহাখালী থেকে ছেড়ে যাওয়া কোনো গাড়ি বনানী পর্যন্ত কোনো যাত্রী উঠাবে না। এর মাধ্যমে এ এলাকায় যানজট নিরসন হবে।
মহাখালী থেকে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলোতে যাত্রীদের তালিকা, ড্রাইভারের নাম ও গাড়ির নম্বরসহ একটি প্রস্থানপত্র দেয়া হবে। পরে বনানীতে আমাদের সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেখানে দেখবেন, যাত্রীর সংখ্যা সঠিক আছে কিনা।
মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, বর্তমানে যেহেতু পার্কিংয়ের জায়গার সংকট, তাই টার্মিনালের সামনে আমরা নির্ধারিত সময়ে নিয়মমাফিক বাসগুলো এক লাইনে রাখবো যাতে যানজটের সমস্যা না হয়। রাস্তা যানজটমুক্ত রাখতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি, ট্রাফিক পুলিশকেও পাশে পাচ্ছি।
আরও পড়ুন: ডোনাল্ড লু ঢাকায় আসছেন কাল
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ঢাকার যানজট শুধু মহাখালীর জন্য হয় না। লক্ষ্য করে দেখুন মহাখালীতে প্রবেশের মুখে কাঁচাবাজারের সামনে রাস্তা দখল করে কাপড়ের মার্কেট, আইসিডিডিআরবির সামনে ফুটপাতে চায়ের দোকান, এগুলোও প্রশাসনের নজরে আসতে হবে।
আমরা নিজেদের এলাকা যানজটমুক্ত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তাই আন্তঃনগর বাসগুলো যাতে বনানী পর্যন্ত যাত্রী না নিতে পারে, সেটার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উত্তরাতেও আন্তঃনগর বাসগুলো ব্যাপক যানজট তৈরি করে। আমরা উত্তরা ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।
আন্তঃনগর বাসের চালকরা জানান, গেটলক সিস্টেম চালু হওয়ায় তাদের সুবিধা হয়েছে। যত্রতত্র যাত্রী উঠালে অন্য যাত্রীদের কথা শুনতে হয়, রাস্তায় যানজটের কবলে পড়তে হয়, প্রশাসনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। এখন বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রী উঠবে।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাস করলে ছাড় দেয়া হবে না
ট্রাফিক গুলশান দক্ষিণের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এ এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, গেটলক চেকিং সিস্টেম চালুর পর আইন অমান্য করে যত্রতত্র যাত্রী তোলায় ২৩টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এর মধ্যে মহাখালী টার্মিনাল এলাকায় ৭টি, আইসিডিডিআরবি এলাকায় ৫টি, আমতলী এলাকায় ৬টি, সৈনিক ক্লাব এলাকায় ২টি ও কাকলীতে ৩টি বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ প্রতিনিয়ত গেটলক সিস্টেম তদারকি করবে। কোনো পরিবহন এ নিয়ম অমান্য করে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
ঢাকা-জামালপুর আন্তঃনগর একটি বাস সার্ভিসের যাত্রী মিজানুর রহমান বলেন, মহাখালী থেকে জামালপুর সদর যেতে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩-৪ ঘণ্টা লাগে। কিন্তু বাসস্টেশন আর মহাখালী ছাড়তে কমপক্ষে ৩০-৪০ মিনিট সময় নেন।
এরপর আমতলী, চেয়ারম্যানবাড়ি, সৈনিক ক্লাব ও কাকলী পর্যন্ত আরও ১ ঘণ্টা যাত্রী নেয়ার চেষ্টা থাকে। বাসের গতিও কম থাকে। ফলে ঢাকার এক অংশেই প্রায় ২ ঘণ্টা চলে যায়।
নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে ৫ থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টাও লেগে যায়। এ সিস্টেম চালুর ফলে এমন ভোগান্তিতে আর যাত্রীরা পড়বে না এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে যাত্রাপথে ভ্রমণ করতে পারবে সবাই।
সান নিউজ/এনজে