নিজস্ব প্রতিবেদক:
সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক রাকেশ আস্তানা। ঢাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের সম্মেলন শেষে তিনি এ কথা জানান।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে এ সম্মেলন শুরু হয়। এতে বিজিবির মহাপরিচালক মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন। বিএসএফের পক্ষ থেকে অংশ নেন রাকেশ আস্তানার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল।
সীমান্তহত্যা ও নির্যাতন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিজিবি-বিএসএফের সম্মতি ও যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে এ সম্মেলন। শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে দুই বাহিনী প্রধান যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন।
এতে বলা হয়, সীমান্তহত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, মাদকদ্রব্য, অবৈধ অস্ত্র, মানবপাচার রোধ এবং মানবাধিকারের বিষয় প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়ে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালকের পর্যায়ের বৈঠকে সম্মত হয়েছে দুই বাহিনী।
সীমান্তহত্যাকে অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ বিষয়ে বিজিবির সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়ত আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তে ‘নন লিথ্যাল’ (প্রাণঘাতী নয় এমন) অস্ত্র ব্যবহারে আমাদের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। একেবারে প্রাণ সংশয়ে না পড়লে লিথ্যাল অস্ত্র ব্যবহার না করতে বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাদক-পশু-অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যবশত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তবে সন্ত্রাসীদের গতিবিধির ওপর নজরদারি চালাতে আমাদের দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যেই গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
সন্ত্রাসীদের কোনো দেশ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রায় ৭০ শতাংশ মৃত্যুই রাতের বেলা অর্থাৎ রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে ঘটে থাকে। এ সময় সাধারণত নানা ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমই ঘটে থাকে। তখন সন্ত্রাসীরা বিএসএফ সদস্যদের চ্যালেঞ্জ করে বসে। এছাড়া রাতের বেলা আবহাওয়া অনুকূলে থাকে না, সবকিছু দৃশ্যমানও থাকে না।
এমন ৬০ শতাংশের বেশি ঘটনায় বিএসএফ সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন এবং ৫২ জন বিএসএফ সদস্য বিভিন্ন আক্রমণে আহত হয়েছেন দাবি করে রাকেশ আস্তানা বলেন, শুধু আক্রান্ত হলেই বিএসএফ লিথ্যাল অস্ত্র ব্যবহার করে।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্যই সীমান্ত হত্যা বেড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। আমরা সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ সমন্বয়ে জয়েন্ট পেট্রোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে এটা বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। তবে এটা আমরা আবারও ব্যাপকভাবে শুরু করতে চাই। আমরা সীমান্তে মৃত্যু শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে কমিটেড (দৃঢ়প্রতিজ্ঞ)।’
সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে সকালে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত হওয়ার বিষয়ে বিএসএফ প্রধান বলেন, ‘দিনে কিংবা রাতে যখনই এমন ঘটনা ঘটে, প্রত্যেকটি ঘটনাতেই আমাদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত হয়। প্রত্যেকটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হয়। এ বিষয়টিও তদন্ত করে ভবিষ্যতের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও বিজিবি সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট স্টাফ অফিসার ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফ সদর দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন।
সম্মেলন শেষে আজই (১৯ সেপ্টেম্বর) বিএসএফ প্রতিনিধিদলের ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে। এই সম্মেলনে যোগ দিতে তারা গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন।
সান নিউজ/ বিএম/ এআর | Sun News