প্রশান্ত কথা
উন্নয়নের ধারাকে বেগবান করতে ও অর্থনীতি ধারাকে সচল রাখতে বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দ্বিতল পদ্মা সেতুর নিচতলায় ট্রেন চলার অনুমোদন হয়। সেতুর উপরে চার লেনের রাস্তায় চলবে গাড়ি। এমন নকশাতেই পদ্মা বহুমুখী সেতু ও রেল সংযোগ নির্মাণ করা হচ্ছে পৃথক দুটি প্রকল্পে। সেতুর নির্মাণকাজ ঠিক থাকলেও ত্রুটি দেখা দিয়েছে রেললাইন নির্মাণে। গাড়ি প্রবেশের রাস্তার উপর দিয়ে রেলপথটি প্রয়োজনীয় উচ্চতায় বানানো হচ্ছে না। উচ্চতা কম হওয়ায় গাড়ি চললে সেটি উপরে থাকা রেলপথের ভায়াডাক্টের সঙ্গে আটকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলে খোদ সেতু কর্তৃপক্ষ। আপত্তির মুখে সংশোধন করা হচ্ছে রেললাইনের নকশা।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
সেতু কর্তৃপক্ষের দাবি, পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা—দুই প্রান্তেই রয়েছে এমন সমস্যা। অন্যদিকে রেলওয়ে বলছে, দুই প্রান্ত নয়, শুধু জাজিরা প্রান্তে প্রবেশের ক্ষেত্রেই রেললাইনের ভায়াডাক্টের উচ্চতা প্রয়োজনের চেয়ে কম রয়েছে।
কয়েক জন প্রকৌশলীদের সঙ্গে সান নিউজ কথা বলে জানতে পারে সাধারণত একটি রাস্তার উপর দিয়ে আরেকটি রাস্তা বানানো হলে উচ্চতায় দুই রাস্তার মধ্যবর্তী দূরত্ব ৬ মিটার রাখতে হয়। পাশাপাশি যদি দুটি পিলার থাকে, তাহলে দুই পিলারের মধ্যখানে অন্তত সাড়ে ১৫ মিটার জায়গা ফাঁকা রাখতে হয়। কিন্তু পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের নকশা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যে স্থানে রেললাইনটি সড়কের ওপর দিয়ে গেছে, সে স্থানে উচ্চতায় সড়ক আর রেলপথের মধ্যবর্তী দূরত্ব ৫ দশমিক ৫১ মিটার। আর দুই পিলারের মধ্যবর্তী দূরত্ব ৯ দশমিক ৬৫ মিটার। এমন অবস্থায় সেখানে বড় গাড়ি আটকে যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।
নকশা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধও করে দেয়া হয় সে সময়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। গতকাল রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনও করেছেন তিনি।
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তেই রেললাইনের নকশায় ত্রুটি আছে। অন্যদিকে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকৌশলীরা বলছেন, সমস্যা শুধু সেতুর জাজিরা প্রান্তে। তবে বিষয়টি বর্তমানে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞদের ওপরই ছেড়ে দেয়ার কথা জানিয়েছেন সেতু বিভাগের সচিব।
রেললাইনের নকশা সংশোধনের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্যানেল অব এক্সপার্টের প্রধান অধ্যাপক শামীমুজ্জামান বসুনিয়াকে। তার নেতৃত্বে একটা দল নকশা সংশোধনের কাজটি এরই মধ্যে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। একটা খসড়াও দাঁড় করানো হয়েছে।
পদ্মা সেতুর সার্বিক কাজ ৮৫ শতাংশেরে উপরে এসেছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি ২৫ শতাংশের ওপরে।
সান নিউজ/পিডিকে | Sun News