নিজস্ব প্রতিবেদক: পশুপালন, মাংস উৎপাদন ও তা প্রক্রিয়াকরণ স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেসব পশু পালন হয়, এগুলো স্বাস্থ্যসম্মতভাবে লালন-পালন করতে হবে। উৎপাদন প্রক্রিয়াকরণে আরও যত্নবান হতে হবে।
আরও পড়ুন: চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি নজর রাখার নির্দেশ
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে ‘প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী ২০২৪’ উদযাপন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের হালাল মাংস পৃথিবীর অনেক দেশ নিতে আগ্রহী। এই সুযোগটা আমাদের নিতে হবে। সেজন্য লালন-পালন, জবাই ও প্রক্রিয়াকরণ নিয়ম অনুযায়ী করছি কিনা তা দেখতে হবে। যারা নিতে চায় তাদের কতগুলো নিয়ম আছে, সেগুলো মানলে তারা নেবে। অনেক দেশ থেকেই অনুরোধ পাই।
তিনি বলেন, অনেক জায়গায় আমাদের পশু জবাই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হয় না। জবাইয়ের ছুরি যাতে মরিচা ধরা না হয়। জবাই ও মাংস কাটায় যদি আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি, তাহলে ভালো হয়।
বিশেষ করে কোরবানির সময় রাস্তাঘাটে যত্রতত্র কোরবানি করে পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। এর একটা সমন্বয় করা দরকার। পশুর মাংসের বাইরে চামড়া, রক্ত ও বর্জ্যসহ অনেক কিছুই কাজে লাগে। এগুলো সংরক্ষণ করে কাজে লাগাতে হবে।
আরও পড়ুন: ২৪ এপ্রিল থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
সরকারপ্রধান বলেন, ভেটেনারিকে আরও গুরুত্ব দেয়া দরকার। জেলায় জেলায় পশু হাসপাতাল ছিল। এখন অঞ্চল ভিত্তিক যদি ফার্ম, হাসপাতাল ও সংরক্ষণাগার তৈরি করতে পারি, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
পশুপাখির খাদ্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কিনা, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি পশুপাখির ওষুধ ও ভ্যাকসিন আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।
চাকরির পেছনে যুবসমাজকে না দৌড়ে এ খাতে উদ্যোগী হতে হবে। আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। আমরা চাই, প্রত্যেকে ডেইরি ও পোল্টি ফার্ম করে এগিয়ে আসবেন। প্রাণিসম্পদেও অনলাইনে সেবা দেয়ার কার্যক্রম চালু হয়েছে। ফলে মানুষ সহজে সেবা নিতে পারবে।
শুধু দানাদার খাদ্য নয়, পশু-মাছসহ সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনে আমাদের গবেষকরা অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। মাংস থেকে মাছ ও সবজি অধিক পুষ্টিকর। মিঠাপানির মাছ কিন্তু আমাদের গবেষকরা এখন উদ্ভাবন করে উৎপাদন করছেন।
আরও পড়ুন: তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ ২৯ মে
সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমানে অনেক হারিয়ে যাওয়া মাছও আমরা এখন পাচ্ছি। আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। আমরা সেদিকেই দৃষ্টি দিয়েছি। এখন মাছ-ভাতের অভাব নেই। কিন্তু এখন মানুষের চাহিদা মাংসে। তাই নানা কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে।
আমাদের আমিষ আমরাই তৈরি করবো এবং দেশের মানুষকে দেবো। আমাদের প্রধান লক্ষ্য, খাদ্য নিরাপত্তা দেয়া। নানা পদক্ষেপের ফলে আমরা এখন অল্প সময়ে বেশি খাদ্য উৎপাদন করতে পারি।
গবাদিপশু এখন ৭ কোটি। বিএনপির আমল থেকে ২ গুণ বেশি বৃদ্ধি করতে পেরেছি। ৮ গুণ বেশি মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি।
পেঁয়াজ নিয়ে এতো ঝামেলা! আমি বললাম, পেঁয়াজ আমরা উৎপাদন করতে পারবো না কেন? এখন ৪০ ভাগ পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। আরও গবেষণা চলছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা আরও বলেন, আমাদের দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। তাই মানুষের জানমাল রক্ষায় বঙ্গবন্ধু পদক্ষেপ নিয়েছেন। একদিকে সাইক্লোন সেন্টার, অন্যদিকে মুজিবকেল্লা করেছেন। কারণ মানুষ তাদের গৃহপালিত প্রাণী রেখে আসতে চায় না। এতে মানুষের পশুপাখিও বেঁচে যায়।
আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস
শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫’র পর যারা সরকারে এসেছে, তারা ক্ষমতাকে ব্যবহার করেছে। সেনা অফিসারদের হত্যা করেছে। প্রায় ৭৮ বার ক্যু-ই হয়েছে। জনগণের কথা তারা বিবেচনা করেনি।
অনেক ঘাত-প্রতিঘাত করে ’৯৬ এ আমরা সরকারে আসি। সে থেকে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিভিন্ন সেক্টর ধরে কাজ শুরু করি। আমাদের লক্ষ্য ছিল, কারও কাছে হাত পেতে চলবো না।
জাতির পিতা বলতেন, ‘ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না।’ ২০০১’র সরকারের সময় চালের দাম ১০-৩০ টাকার ওপরে উঠে গেছে। সে অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়েছি।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য শেষে প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।
সান নিউজ/এনজে