সান নিউজ ডেস্ক:
গত এক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এখন সবচেয়ে কম। কারণ, করোনাভাইরাস। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন বৈশ্বিক তেল বাজার। জানুয়ারির শুরু থেকে ধস নামতে শুরু করেছে তেলের বাজারে। তবে এর প্রভাব এখনও পড়েনি বাংলাদেশের বাজারে।
গত মাসের শুরুতে বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি (১ ব্যারেল = প্রায় ১৫৯ লিটার) ৬৫.৫০ মার্কিন ডলার। শুক্রবার ওই দাম নেমে এসেছে ৫৪.৩৬ ডলারে।
পেট্রল-ডিজেলের দামের এই নিম্নমুখী প্রবনতা আরও বেশ কিছুদিন অব্যহত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে, অন্তত যতদিন না করোনাভাইরাসের প্রকোপ না কমে।
গত মঙ্গল বার আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১৩-মাসের সর্বনিম্ন ৪৯.৬১ ডলার ছুঁয়েছে। অর্থাৎ, গত এক মাসের মধ্যে অপরিশোধিত তেলের দাম কমে গেছে ২০ শতাংশ।
ফলে বিভিন্ন দেশে পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম কমতে শুরু করলেও এর কোন প্রভাব পড়েনি বাংলাদেশে। যে দাম ছিল, এখনও তাই রয়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে লিটার প্রতি পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম কমেছে প্রায় ৪ টাকা। বাংলাদেশে প্রেট্রোলের খুচরা মূল্য লিটার প্রতি সেই আগের দামই রয়েছে, ৯৫ টাকা।
তেলের আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, আগামী সপ্তাহগুলোতে উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বাজারের এমন অবস্থা নিয়ে ১৪টি তেল উৎপাদনকারী দেশের জোট অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিস (ওপেক) গেল সপ্তাহে ভিয়েনায় বৈঠকও করেছে। এতে তেলের দাম বাড়াতে উৎপাদন কমিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। ওপেক সদস্য ইরান সোমবার প্রকাশ্যেই তেলের দাম বাড়াতে পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
চীনে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশটির বাণিজ্য খাতে। করোনার বিস্তার রোধে সরকারি নির্দেশে চীনের নববর্ষের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। তাই মহামারির পর থেকে বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চীনের তেলের প্রয়োজন কমেছে অনেকখানি।
চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অপরিশোধিত তেল আমদানিকারক দেশ। দিনে গড়ে ১ কোটি ৪০ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করে থাকে দেশটি।
চীনের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে বিদেশী অসংখ্য এয়ারলাইন্স। সেই অর্থে বিশ্বজুড়ে প্রয়োজন কমেছে বিমানের জ্বালানিরও। চীনের ভেতরেও ভ্রমণের বিষয়ে বিধিনিষেধ থাকায়, সেখানেও হ্রাস পেয়েছে বিমানের জ্বালানির।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, স্বাভাবিকের তুলনায় চীনে অপরিশোধিত তেলের ব্যবহার কমেছে ২০ শতাংশ, যা ইতালি ও বৃটেনে ব্যবহৃত তেলের সমান। চীন সরকারের মালিকানাধীন তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান সিনোপেক গড়ে প্রতিদিন ৬ লাখ ব্যারেল বা ১২ শতাংশ তেল পরিশোধন করা কমিয়ে দিয়েছে এরইমধ্যে। শিকাগোভিত্তিক তেলের বাজার বিশ্লেষক ফিল ফ্লিনের মতে, তেলের এত বেশি দরপতনে কেঁপে উঠেছে পুরো জ্বালানি শিল্প। এর আগে এত দ্রুত এ পরিমাণের চাহিদা নষ্টকারী ঘটনা দেখা যায়নি কখনো।