নিজস্ব প্রতিনিধি, খুলনা : ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে ১৮শ’ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার ১ লাখ ৫০ হাজার ১৫১ জন শিশুর কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ৭ মার্চের ভাষণ উপস্থাপন করা হয়। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কথা বিবেচনায় রেখে জুম ওয়েবিনারের মাধ্যমে শিশু বঙ্গবন্ধুরা সমস্বরে উচ্চারণ করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
রোববার (৭ মার্চ) বিকেলে খুলনা মহানগরীর সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ চত্বরে শিশু বঙ্গবন্ধু সমাবেশ ও ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ইতিহাস যেন ক্ষণিকের জন্য ফিরে গেল ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের সেই মাহেদ্রক্ষণ।
১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাচিত একশ’ ৫১ ক্ষুদে শিক্ষার্থীর কণ্ঠে এবং একই সঙ্গে সমগ্র জেলা থেকে জুম ওয়েবিনারে যুক্ত ১ লাখ ৫০ হাজার শিশু বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় বঙ্গবন্ধুর সেই কালজয়ী ভাষণ। মূল অনুষ্ঠানস্থলে ১৫১ শিশু বঙ্গবন্ধুর অংশগ্রহণের বিষয়ে জানানো হয় বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০০ জন, সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ৫০ জন এবং বাঙালীর একমাত্র অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশক হিসেবে ১জনকে নেওয়া হয়েছে।
খুলনায় শিশুদের কন্ঠে একযোগে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ উপস্থাপনা শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, “স্বাধীনতার জন্য এই বাংলায় খণ্ডখণ্ড অনেক বিপ্লব হয়েছে। ক্ষুদিরাম, ফকির মজনুশাহ, তিতুমীর, সূর্যসেন, শরীয়তউল্লাহসহ অনেকেই রক্ত দিয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতা আসেনি। হাজার বছর ধরে স্বাধীনতার জন্য বাঙালীর যে আকুতি সেই স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।”
তিনি বলেন, “যে ভাষণ শুনে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালী এক সারিতে এসে দাঁড়িয়েছিল তা এই ৭ মার্চের ভাষণ। ৭ মার্চের ভাষণ নতুন স্বপ্নে উজ্জীবিত করেছিল। অথচ এক সময় এ ভাষণ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু ইতিহাসকে কখনও চাপা দিয়ে রাখা যায় না। তাই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মতো আর কোনও ভাষণ এত বেশিবার প্রচারিত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, শেখ হাসিনা এনে দিয়েছেন অর্থনৈতিক মুক্তি। ইতিহাস বিকৃতির দিন শেষ। খুলনার এই আয়োজন ৭ মার্চ কেন্দ্রিক সবচেয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন যা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের মাঝে যেমন ছড়িয়ে দেবে তেমনি তারা সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। তাদের হাত ধরেই গড়ে উঠবে সোনার বাংলা “
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন, পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভূঞা, পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলমগীর কবীর।
৭ মার্চ উপলক্ষে খুলনায় সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সকল সরকারি, বে-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকালে বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্র প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন খুলনা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ও মহানগর কমান্ড, কেসিসি’র মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন, পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, সরকারি-বেসরকারি দফতর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মহানগর ও সহযোগী সংগঠনসমূহ, স্কুল-কলেজ, পেশাজীবী সংগঠনসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচী পালন করা হয়।
জাতির পিতাসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ৭ মার্চে প্রদত্ত ভাষণ প্রচার করা হয়। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করে নিজস্ব কর্মসূচী পালন করেন। শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনলাইনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বিষয়ে আলোচনা সভায় আয়োজন করা হয়। সরকারি, বে-সরকারি স্বায়ত্তশাসিত ভবন ও স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা করা হয়।
খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিস, পিআইডি জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন ভিত্তিক ডকুমেন্টারি ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। খুলনা জেলার সকল উপজেলায় অনুরূপ কর্মসূচী পালিত হয়।
সান নিউজ/এসএ