সান নিউজ ডেস্ক:
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রায়ই জ্ঞান এবং বিদ্যার স্বর্ণভল্লুক-সম কম্বিনেশন নিয়ে এমন এমন সুকীর্তি মার্কেটে ছাড়েন, যা দেখে ও শুনে আপামর পাবলিক কড়মড় করে ওঠে!
তেমনই একটি বিষয় সামনে এলো সম্প্রতি, দুই নক্ষত্রের সঙ্গে 'সেলেস্টিয়াল ম্যারেজ'-এ আবদ্ধ পৃথিবীর নিকটতম ব্ল্যাকহোলটি।
'সেলেস্টিয়াল ম্যারেজ' বা স্বর্গীয় বিবাহ বা আমরা অমরসঙ্গী বা ঐশ্বর্য রাই ও গাছ! অর্থাৎ, জন্ম-জন্মান্তরের রিস্তা। যা নিয়ে প্রচুর হাপুসহুপুস সেকাল-মার্কা সাহিত্য ও সিনিমা চালাতে গিয়ে যুগে যুগে কাগজ এবং রিল নষ্ট হয়েছে দিস্তা-দিস্তা।
পৃথিবী থেকে কমবেশি এক হাজার আলোকবর্ষ দূরে থাকা এবং সূর্যের ভরের থেকে ৪.২ গুণ বেশি ভরের এই ব্ল্যাকহোলটি মহাকর্ষ বলের মাধ্যমে দুটি নক্ষত্র দ্বারা আবদ্ধ। অ্যাস্ট্রোনমি এবং অ্যাস্ট্রোফিজিক্স জার্নাল প্রকাশিত গবেষণাটির মূল লেখক টমাস রিভিনিয়াসের কথায়, খুব তাড়াতাড়িই ব্যাপারটা ঘটতে চলেছে।
এক বছরে আলো যতটা পথ আকুলিবিকুলি ট্র্যাভেল করে তার পরিমাণ শ'দেড়েক দেশের জিডিপির থেকেও বেশি। ৫.৯ ট্রিলিয়ন মাইল। ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর বস্তুটি আসলে কী, তার সম্বন্ধেও এই প্রসঙ্গে কিছুটা বলে নেওয়া যাক। এটি হল আদতে এমন একটি অবস্থা, যেখানে নক্ষত্রের সমস্ত ভর একটি বিন্দুতে পরিণত হয়। এর ফলে এই বিশেষ অবস্থাটির মহাকর্ষ বল এতটাই বেশি হয়ে যায় যে, আলোও একে আর অতিক্রম করে উঠতে পারে না। নক্ষত্রের সমস্ত ভর একটি বিন্দুতে পরিণত হওয়ায় তার সামগ্রিক ভর এত প্রবল হয়ে পড়ে যে, তা বাঁক তৈরি করতে করতে নতুন গহ্বর সৃষ্টি করে। ওটাই কৃষ্ণগহ্বর।
কিছু কিছু ব্ল্যাকহোল আবার সাইজে প্রায় অলৌকিকের মামা! আক্ষরিক মাথা ঘিজিঘিজি ধকধক! ছায়াপথের ঠিক কেন্দ্রে এরকম কিছু মক্কেল রয়েছে। পৃথিবী থেকে ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে! সূর্যের টোটাল ভরের থেকে বেশি না, এই চল্লিশ লক্ষ গুণ ভারি!
নতুন আবিষ্কৃত ব্ল্যাকহোলটির স্টেলার-মাস হল একটি তারার ভরের সমান। মনে করা হচ্ছে, এই নক্ষত্রটি জন্মের সময় সূর্যের থেকে ২০ গুণ বেশি ভরের ছিল। তারপর তা একসময় ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়। এই দুটি তারা এবং ব্ল্যাকহোল যে 'ট্রিপল সিস্টেম'-এর মাধ্যমে আবদ্ধ, তার নামটি খাজা বাংলা কল্পবিজ্ঞান গল্পের চরিত্রের মতো- এইচআর ৬৮১৯। দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে ঠিকঠিক ঠিকঠিক পয়েন্ট বুঝে দাঁড়ালে খালি চোখেই দেখতে পাওয়া যাবে একে।
চেক প্রজাতন্ত্রের অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের জ্যোতির্বিজ্ঞানী পেট্রো হারদাভা জানাচ্ছেন, আগে মনে করা হতো, ছায়াপথের মধ্যে স্টেলার-মাস ব্ল্যাকহোল রয়েছে ওই সামান্য কয়েক ডজন। ইদানিং, ভাবনা পাল্টেছে। এখন মনে করা হয়, কিছু না হলেও কয়েকশো কোটি স্টেলার-মাস ব্ল্যাকহোল সেঁধিয়ে আছে ছায়াপথের পাকস্থলীতে। জানা গিয়েছে, আমাদের এই আলোচ্য রোমিও ব্ল্যাকহোলটি সূর্যের থেকে পাঁচ-ছয় গুণ ভারি দুটি তারাকে এখনও ছাড়েনি! এমনভাবে ট্রিপল সিস্টেমের মধ্যে আটকে থাকা সাধারণভাবে ব্ল্যাকহোলের চরিত্র নয়! জানাচ্ছেন টমাস রিভিনিয়াস।
একটি নিখাদ ত্রিকোণ প্রেম! কে আগে আসবে, এই হল প্রশ্ন! আরও কাছাকাছি, আরও কাছে এসো বলে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে ব্ল্যাকহোল! এর মধ্যে কোনও একটি ব্ল্যাকহোলের মধ্যে চিরকালের মতো হারিয়ে যাবে! তবে, এই প্রক্রিয়াটি ঠিক দু-এক বছরের নয়, কয়েক লক্ষ বছরের কেস! বলছেন রিভিনিয়াস। সেই 'দেব আনন্দ'-টি কে, এখন সেটাই দেখার!
নক্ষত্রের চেয়ে বেশি নিঃশব্দ আর কী! নক্ষত্র আসে, হাসে, তারপর চলে একা পায়ে। শেষ ট্রাম মুছে গেছে। শেষ শব্দও। নেই জীবনানন্দ দাশ। তবু, অন্তিম নিশীথে এক নক্ষত্রের উজ্জ্বল আলোড়ন স্পর্শ করার চেষ্টা করছে অপর একটি নক্ষত্রকে- এমন কথা ভাবতে পারায়ও তো এই অসময়ে সুখ!
সান নিউজ/ আরএইচ