বিজ্ঞান ডেস্ক:
প্রকৃতির আশির্বাদ হলো বনাঞ্চল। কখনো কি ভেবে দেখেছেন? বনাঞ্চলে কত শত পশু-পাখি বসবাস করে। বন উজারের কারণে তারা অসহায় হয়ে পড়ে। বাসস্থানের আশায় বাধ্য হয়েই তারা তখন লোকালয়ে ভিড়ে। আর তখনই তাদের শরীরে থাকা বিভিন্ন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে।
ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব মাতো গ্রাসোর ইকোলোজিস্ট আনা লুসিয়ে তোউরিনহো একটুও অবাক হননি করোনাভাইরাস মহামারিতে। উহান থেকে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়ানোর খবরেও তিনি চমকে উঠেননি।
কারণ তিনি আগেই জানতেন কোনো একদিন প্রকৃতি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠবে। এ বিষয় নিয়েই তো তিনি বছরের পর বছর ধরে গবেষণা করে আসছেন।
বন উজার ও পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টের মাধ্যমে কীভাবে প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তা নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন লুসিয়ে।
এই গবেষক জানান, বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস যখন নিজের উৎসস্থলে অর্থাৎ গভীর জঙ্গলে আবদ্ধ থাকে তখন এটি মানবজাতির জন্য একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
তবে বন উজাড় করার মাধ্যমেই এর সূত্রপাত ঘটে। গভীর জঙ্গলের ভাইরাস তখন মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়ায়।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগেই বেশ কয়েকটি গবেষণায় বন উজাড়ের ফলে বাদুড়ের বাসা নষ্ট হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। পোল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারশর গবেষক আনিতা আফেল্ট তার এক গবেষণায় মারাত্মক সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব এশিয়া মহাদেশে ছড়ানোর আভাস দিয়েছিলেন।
বিগত গত ৪০ বছরে এশিয়া মহাদেশে মারাত্মকভাবে বন উজাড় হয়েছে। ২০১৮ সালে এক গবেষণাপত্রে আফেল্ট লিখেছিলেন, দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে (এসইএ) সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই।
তার উপর সেখানে নির্বিচারে বন উজাড় করা হচ্ছে। কোনো অঞ্চলে নতুন সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব বা পুরনো সংক্রামক ব্যাধি নতুন করে ছড়িয়ে পড়ার পুরোপুরি সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়।
ব্রাজিলের ইকোলোজিস্ট আনা লুসিয়ে তোউরিনহো তার গবেষণাপত্রে লিখেছিলেন, গভীর জঙ্গল আসলে ঢালের মতো। এই ঢাল মানবজাতির সঙ্গে বন্য প্রাণীর সংস্পর্শ আটকায়। বন্যপ্রাণী অনেক ধরনের অজানা জীবাণু বহন করে।
যখনই বনভূমি কেটে ধ্বংস করা হয় তখনই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক সব ভাইরাস। অতীতেও বন্যপ্রাণী থেকে ছড়ানো অনেক ভাইরাসের কারণে লাখো মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। তখনো সেসব ব্যাধি থেকে বাঁচার কোনো পথ মানবজাতি খুঁজে পায়নি। সূত্র: জিনিউজ।
সান নিউজ/সালি