সান নিউজ ডেস্ক: ১৯৭৫ সালের জেল হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ও মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতার করেছে দেশটির অভিবাসন পুলিশ।
বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে তা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক কমিশনার (ইউএনএইচসিআর)। শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মালয়েশিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।
ইউএনএইচসিআর বলেছেন, খায়রুজ্জামান মালয়েশিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নিয়ে অবস্থান করায় তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ এটি হবে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি।
আরও পড়ুন: লিবিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে বাংলাদেশ
জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, মালয়েশিয়ার সরকার খায়রুজ্জামানকে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে পারে না। কারণ এতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হবে। শরণার্থী পুনর্বাসন আইন অনুযায়ী, সরকার কোনো শরণার্থীকে এমন কোনো স্থানে পাঠাতে পারে না, যেখান তার জীবন হুমকির মুখে পড়বে। ১৯৫১ সালের চুক্তিতে সই করা না করা সব দেশের জন্যই শরণার্থী বিষয়ক আইনটি বাধ্যতামূলক।
এর আগে, বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের আমপাংয়ে নিজ বাসা থেকে খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছিলেন।
খায়রুজ্জামান অবসরপ্রাপ্ত সেনা মেজর, ১৯৭৫ সালের জেলহত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। পরে খালাস পেয়ে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার নিযুক্ত হন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু খায়রুজ্জামান কুয়ালালামপুরে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নিয়ে সেখানেই থেকে যান।
আরও পড়ুন: সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি যুবক নিহত
মালয়েশিয়ার বার কাউন্সিলের অভিবাসী এবং শরণার্থী কমিটির সহ-সভাপতি বলেন, কোনো ব্যক্তি তার জাতি, ধর্ম বা রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে জীবন বা স্বাধীনতার জন্য হুমকির সম্মুখীন হলে সরকারের তাকে ফেরত পাঠানো উচিত নয়।
এর আগে, খায়রুজ্জামানের স্ত্রী রিতা রহমান বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার স্বামীর গ্রিন কার্ডের আবেদন মঞ্জুর করেছে। কিন্তু মালয়েশীয় পুলিশের নিরাপত্তা যাচাইয়ের জন্য তা আটকে রয়েছে। অনেকবার আবেদন করেও এটি শেষ করা যায়নি।
আটকের পর খায়রুজ্জামানের আইনজীবী এ এস ডালিওয়াল অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন। আইনজীবী বলেছেন, কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই খায়রুজ্জামানকে আটক করা হয়েছে।
নোটিশে আইনজীবী এ এস ডালিওয়াল উল্লেখ করেন, মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান (UNHCR নং 354-10C02267) নামে এক বাংলাদেশি নাগরিককে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই আটক করেছে।
আরও পড়ুন: জাপানে বাংলাদেশিদের ৭ দিন কোয়ারেন্টাইন
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ইউএনএইচসিআর কার্ডধারী হিসেবে খায়রুজ্জামানের মালয়েশিয়ায় থাকার অধিকার রয়েছে। এ সময় তিনি জানান, খায়রুজ্জামানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি না দেয়া হলে রিট করবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, হেবিয়াস কর্পাস একজন বন্দি বা বন্দিকে আদালতের সামনে আনার জন্য ব্যবহৃত হয় যে ব্যক্তির কারাদণ্ড বা আটক আইনানুগ কিনা নিশ্চিত হতে। ১৯৭৫ সালের জেল হত্যা মামলায় অভিযুক্ত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান খালাস পেয়ে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার নিযুক্ত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে ঢাকায় ফিরে আসার জন্য বলা হয়। দেশে ফিরে আসা ঝুঁকি মনে করে তিনি কুয়ালালামপুর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নেন এবং সেখানেই থেকে যান।
সান নিউজ/এনকে