প্রবাস

শতাধিক বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে জার্মানি

সান নিউজ ডেস্ক: জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা অন্তত ১১৯ জন। আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়ায় স্বেচ্ছায় ফেরার সুযোগ নিয়েছেন আরও অনেকে। ইনফোমাইগ্রেন্টস’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

সাত বছর কাটানোর পর গত সেপ্টেম্বরে সবুজ (ছদ্মনাম) জানতে পারেন তার আর জার্মানি থাকা সম্ভব হচ্ছে না। দেশটিতে থাকতে যা যা করণীয় তার সবই করেছেন তিনি। বৈধভাবে বসবাসের অনুমতির জন্য আইনি লড়াই চালিয়েছেন, চাকরি করে সরকারকে কর দিয়েছেন, ভাষা শিখেছেন, পেশাগত দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। তখনই পেলেন দুঃসংবাদটি৷

আরও পড়ুন: ভূমধ্যসাগরে হাইপোথার্মিয়ায় সাত বাংলাদেশির মৃত্যু

তিনি বলেন, ‘আমাকে জানানো হয়েছিল যে আমি ত্রিশ মাসের ভিসা পাব যদি জার্মান ভাষা দক্ষতার এ-টু সনদ দিতে পারি। করোনার পর ভাষা শিক্ষার ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। পরে ক্লাস শুরু হলে আমি পরীক্ষায় পাস করি এবং এ-টু জমা দেই৷ সে সময় আমাকে ওরা বলেনি, কিন্তু পরে জানিয়েছে, ‘তুমি দেরিতে জমা দিয়েছ, এ কারণে তোমার আবেদন গৃহীত হয়নি, তোমাকে এখন দেশে ফিরতে হবে’৷

মৌলভিবাজারের কমলগঞ্জের এই বাসিন্দা ২০১৫ সালে কাতার থেকে জার্মানি আসেন। এক বছর পরই তার আশ্রয় আবেদন বাতিল করে দেশটি। ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে প্রত্যাখ্যাত হয় আপিল আবেদনও।

তিনি বলেন, জার্মানিতে সাত বছর থাকাকালে অনুমতি নিয়ে সাড়ে চার বছর একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করেছি। প্রতি মাসে বেতন থেকে জার্মান সরকারকে ৫০০ ইউরো ট্যাক্সও দিয়েছি। কিন্তু শুধু সার্টিফিকেট দেরিতে দেওয়ার কারণেই আমার আবেদন বাতিল করা হলো। অক্টোবরের ১৫ বা ১৬ তারিখ ডেকে বলল, ২২ তারিখ আমাকে চলে যেতে হবে।

গত এক বছরে তার মতো আরও অনেক বাংলাদেশিই জার্মানি থেকে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়ায় নির্দেশনা মেনে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন করেছেন। আর যারা এই নির্দেশনা মানেননি তাদের অনেককে চার্টার্ড ফ্লাইট ভাড়া করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রহরায় জোরপূর্বক ফেরত পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নিয়ম অনুযায়ী কারও বসবাসের অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বা আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে তিনি জার্মানি ছাড়তে বাধ্য। এক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ দেশটি থেকে না গেলে পরবর্তীতে কোনো সময় না দিয়ে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে জোরপূর্বক তাকে ফেরত পাঠানো হয়। এই ২৬ জনের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে।

আরও পড়ুন: টাওয়ার হ্যামলেটসে ৫ বাঙালির নামে ভবন

গত এক বছরে আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া আরও অনেকে জার্মান কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে ফিরে এসেছেন। তাদেরই একজন মনসুর (ছদ্মনাম)৷ ২০১৩ সালে ইরাকে যান ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার এই বাসিন্দা। কিন্তু সেখানে পরিস্থিতি ভালো না থাকায় ইউরোপ পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কুর্দিস্তান, তুরস্ক, গ্রিস, মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া, অস্ট্রিয়া হয়ে ২০১৫ সালে পৌঁছান জার্মানিতে। ২০২১ সালে তার আশ্রয় আবেদন সম্পূর্ণ বাতিল করে দেশটি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরতে বাধ্য হন তিনি।

‘আমাকে বলা হয়েছে নিজের থেকে না ফিরলে জোর করে ফেরত পাঠানো হবে। আমি এজন্য আইওএম এর সহায়তায় ফেরার সিদ্ধান্ত নেই,’ বলেন তিনি।

আশ্রয়প্রার্থীদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনে উৎসাহ দিতে আরইএজি/জিএরআপি নামে জার্মানির সরকারের একটি প্রকল্প রয়েছে। এর অধীনেই আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম প্রত্যাবর্তনকারীদের নানাভাবে সহযোগিতা করে৷ ফ্লাইট টিকিট, যাত্রাকালীন খরচ হিসেবে ২০০ ইউরো, এমনকি এককালীন নগদ এক হাজার ইউরো অর্থ সহায়তাও বুঝে পান তারা।

মনসুরসহ স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়া আরো কয়েকজনও এই সহায়তাগুলো পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ইনফোমাইগ্রেন্টসকে৷ এককালীন টাকা তারা বুঝে পেয়েছেন ফ্লাইটে ওঠার আগে। তবে যাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয় এই সুবিধাগুলো পান না তারা।

জোরপূর্বক বা স্বেচ্ছায় যেভাবেই আসেন না কেন প্রত্যাবাসনকারীরা বাংলাদেশে নামার পর দুইটি প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা পেয়ে থাকেন, যা থেকে ফেরত আসার মোট সংখ্যাটিও জানা যায়। এর মধ্যে ১৬টি ইইউ দেশের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্প ইউরোপীয় রিটার্ন অ্যান্ড রিইন্টিগ্রেশন নেটওয়ার্ক বা ইরিন। অন্যটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে আইওএম পরিচালিত ‘প্রত্যাশা’।

দুইটি প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গেই যুক্ত বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। ইরিন প্রকল্পের অধীনে গত বছর জার্মানি থেকে ফিরে আসা ২৯ জনকে সহায়তা দিয়েছে তারা। অন্যদিকে, প্রত্যাশার অধীনে সহায়তা পেয়েছেন ১৬৮ জন। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে জার্মানি থেকে ফিরে আসা প্রায় ২০০ জন গত বছর এই দুই প্রকল্পের সহায়তা নিয়েছেন। গত চার বছরে এই সংখ্যাটি প্রায় ৪৫০। এরা সবাই ২০১৫ সালের পর ফেরত এসেছেন।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগামের প্রধান শরিফুল হাসান ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি) চুক্তি স্বাক্ষর করেছে আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য। এর মানে বাংলাদেশ চায় না অনিয়মিত পন্থায় লোক বিদেশ যাক।’

সান নিউজ/এনকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আমাকে নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে: টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ও সাবেক ‘সিট...

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মিশরের, হামাসের প্রত্যাখ্যান

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তাব দিয়েছে ম...

টিভিতে আজকের খেলা

প্রতিদিনের মতো আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বেশ কিছু খেলা প্রচারিত হবে টেলিভিশনের...

টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় চায় শিক্ষার্থীরা, ক্রাফট পদোন্নতি বাতিল দাবি

ক্রাফট ইন্সট্রাকটর ও জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে পদোন...

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলায় আওয়ামী লীগের ১০ নেতা-কর্মী কারাগারে

রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষা...

এস.এস.সি পরীক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্রদলের বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ

লক্ষ্মীপুরে তীব্র তাপপ্রবাহে এস.এস.সি পরীক্ষার্থীদ...

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলায় আওয়ামী লীগের ১০ নেতা-কর্মী কারাগারে

রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষা...

ফেনীতে পিএফজির আন্ত:ধর্মীয় সংলাপ; ধর্মীয় সম্প্রীতি অটুট রাখার আহ্বান

‘বাংলাদেশ একটি অসম্প্রদায়িক দেশ। কিন্তু এখানে ব্যক্তিগত সমস্যাকে অসাধু...

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ হাজার কৃষকের মাঝে ধান বীজ ও সার বিতরণ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি প্...

টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় চায় শিক্ষার্থীরা, ক্রাফট পদোন্নতি বাতিল দাবি

ক্রাফট ইন্সট্রাকটর ও জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে পদোন...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা