নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈশ্বিক মহামারী করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর সার্বিক ভাবে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর অর্থনীতি লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে।বিশ্বের উন্নত সব দেশও গ্রহণ করে ব্যয়-সংকোচন নীতি। দেশে দেশে বড়-ছোট প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই চলে কর্মী ও শ্রমিক ছাঁটাই। ইতোমধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে।
অনেকদিন পর মহামারীর সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার সীমিত আকারে হলেও খুলতে শুরু করে। কিন্তু করোনার নতুন ঢেউয়ে ফের আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খুবই আতঙ্কে আছে বিশ্ববাসী। অনেক দেশই লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক আকাশপথ। সঙ্গত কারণেই আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারেও এর ভয়ানক প্রভাব পড়বে। এ নিয়ে শঙ্কা দিন দিন বাড়ছে, বাড়ছে উদ্বেগও।
করোনায় সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, কুয়েত, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য প্রবাসীকর্মী ইতিপূর্বে দেশে ফিরেছেন। প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে গত ৮ মাসে বিশ্বের ২৮টিরও বেশি দেশ থেকে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ জন রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রায় শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় কবে নাগাদ তারা বিদেশের কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারবেন, আদৌ যেতে পারবেন কিনা, এসব বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রবাসীকর্মীরা। তা ছাড়া মার্চ পর্যন্ত ভিসা পাওয়া প্রায় ১ লাখ শ্রমিকের অধিকাংশই যেতে পারেননি করোনার কারণে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত মার্চ মাসে ভিসা পাওয়া প্রবাসী কর্মীদের জন্য এখন নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই ভিসায় সংশ্লিষ্ট দেশে কাজের উদ্দেশে যাওয়া।
গত ৮ অক্টোবর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিকে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) থেকে জানানো হয়, মহামারীর মধ্যে শুধু সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা এক-তৃতীয়াংশের বেশি বাংলাদেশি কর্মীকে নানা জটিলতার কারণে ফের সেখানে পাঠানো সম্ভব হবে না। সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বায়রার পক্ষে লিখিত বক্তব্যে বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও নতুন ধরন শুরু হওয়ায় ২১ ডিসেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সৌদি আরব। ৭ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার শেষ দিনে আরও ৭ দিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছে দেশটি। এতে আটকে গেছেন লাখো প্রবাসীকর্মী। সৌদির নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘায়িত হলে প্রায় ৪০ হাজার নতুন ভিসা বাতিল হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে করোনা মহামারীর আগে সৌদিতে প্রথমবারের মতো কাজে যাওয়ার জন্য প্রায় ২৫ হাজার কর্মী ভিসা নিয়েছিলেন। কিন্তু তারা যেতে পারেননি। তাদের নতুন করে ভিসা নিতে বলা হচ্ছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে চাকরি নিয়ে বিভিন্ন দেশে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা ছিল ৭ লাখ। চলতি ২০২০ সালে সেই লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ৭ লাখ। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে বিদেশে যাওয়া মোট কর্মীর ৮৮ শতাংশ গেছে মধ্যপ্রাচ্যের ১০ দেশে। তাদের মধ্যে ৭৪ শতাংশই গেছে সৌদি আরবে।
বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, করোনা মহামারীর ওপর আমাদের কারও কোনও হাত নেই। করোনা মহামারী শ্রমবাজারের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এখন যারা ভিসা পেয়েছিলেন তারা যেন যেতে পারে, সে জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। এ ছাড়া নতুন করে যাতে শ্রমবাজার চালু করা যায় সে জন্য কাজ করতে হবে।
সান নিউজ/এসএ