নিজস্ব প্রতিবেদক:
বরগুনা: সাংগঠনিক নির্দেশ অমান্য করায় বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসেনকে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
গত রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ শোকজ করা হয়। কেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, চিঠি পাঠানোর তিন কর্মদিবসের মধ্যে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে তার উপযুক্ত কারণ উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক বলেন, বেতাগী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল এনামুল ইসলাম সাব্বির দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। তিনি বিয়ে করেছেন এবং তার সন্তানও হয়েছে। তাই তাকে জেলা ছাত্রলীগ সিদ্ধান্ত নিয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এ কারণে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে শোকজ নোটিশের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
তবে বেতাগী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল এনামুল ইসলাম সাব্বির বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির একান্ত অনুগত না হওয়ায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক নিজেই বাল্যবিবাহ করেছেন বলে বরগুনা শহরজুড়ে ব্যাপক গুঞ্জন চলছে। বিয়ের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে অনিক বলেন, বিয়ে তিনি করেননি। তবে তার বাবা মেয়ে পছন্দ করে আংটি পরিয়ে রেখেছেন। অনিক অস্বীকার করলেও তার বিয়ের ছবি ইতোমধ্যেই বিভিন্নজনের হাতে চলে গেছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে ২৩এর (ক) ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, বিয়ে করলে ছাত্রলীগের কমিটিতে ঢুকতে পারবেন না। তবে কমিটিতে থাকাকালে কেউ বিয়ে করলে সদস্যপদ বাতিল না হলেও ছাত্রলীগের পরবর্তী কাউন্সিলে আর কোনো কমিটিতে থাকতে পারবেন না।
ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক কেন তার বিয়ের বিষয়টি গোপন রেখেছেন, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে অনেকেই ধারণা করছেন যে, বাল্যবিবাহের কারণেই তিনি বিয়ের বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন রেখেছেন। পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার টিকিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন জোমাদ্দার ওরফে রাঙ্গা রিপনের একমাত্র মেয়ে রামিশা আদনান সারার সঙ্গে জুবায়ের আদনান অনিকের বিয়ে হয়। গত ৩০ আগস্ট বরিশালের কোনো এক জায়গায় অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। অনিকের স্ত্রী রামিশা আদনান সারা মঠবাড়িয়া কে এম লতিফ ইনস্টিটিউট থেকে এ বছর এসএসসি পাস করেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে জেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিল না হওয়ায় এবং দলীয় নানা বিশৃঙ্খলার কারণে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। ২০১৫ সালে সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংগঠনিকভাবে জেলার ছয়টি উপজেলারও বেহাল অবস্থা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতাকর্মী ক্ষোভের কথা জানান। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতা কুক্ষিগত রেখে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যা খুশি তাই করছেন।
ছাত্রলীগের সামগ্রিক কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে মারধর করেন ওই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুব হোসেন। এটি নিয়ে ছাত্রলীগের ঊর্ধ্বতন নেতারা আজ পর্যন্ত কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ছাত্রলীগের এক কর্মী বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে বরগুনায় ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। গত ২০ বছর ধরে বরগুনা সরকারি কলেজে কমিটি নেই। কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতি থাকলে রিফাত হত্যাকাণ্ডের মতো লোমহর্ষক ঘটনা ঘটতো না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ছাত্রলীগের অন্য এক কর্মী বলেন, উপজেলা কমিটি গঠন নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত এবং তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। সবকিছু মিলে জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ বলে তারা মন্তব্য করেন।