ফাইল ছবি
রাজনীতি

জাপা দূর্গে ভরাডুবি, হতাশ তৃণমূল নেতাকর্মীরা

হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর: রংপুর বিভাগকে বলা হতো জাতীয় পার্টির দূর্গ। দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বাড়ি রংপুরে হবার কারণে এ অঞ্চল দলটির দূর্গে পরিণত হয়। এরশাদের মৃত্যুর পর সেই দূর্গে ফাটল ধরে, যা গত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে লক্ষ্য করা গেছে।

আরও পড়ুন: নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীর উঠান বৈঠক

তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নিজেদের সেই দূর্গে চরম ভরাডুবি হয়েছে। পরাজয়ের নেপথ্যে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ জনগণের মতামতের মূল্যায়ন না করাকে দুষছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই সেই চিত্র প্রকট হয়ে উঠছিল।

রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৩৩টি আসনের মধ্যে তারা মাত্র ৩টিতে জয় পেয়েছে। কোথাও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়তে পারেননি জাতীয় পাটির প্রার্থীরা। এসব আসনে নৌকা প্রতীক ছিল না বলেই জয় এসেছে। না হয় এগুলোতেও পরাজয় হতে পারতো বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা।

সমঝোতার রাজনীতিতে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ধ্বংস, বলছেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া প্রচার-প্রচারণা ও তৃণমূলে সমন্বয়, শীর্ষ নেতৃত্বের সঠিক নির্দেশনা না থাকাকে দায়ি করেছেন অনেকে।

আরও পড়ুন: স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিছিলে বিস্ফোরণ, নিহত ১

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিহীন এ দলের এমন পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে দলের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত তারা।

এদিকে আসন সমঝোতার ২৬ আসনের মধ্যে রংপুর বিভাগে ছিল ৯টি। এর মধ্যে মাত্র ৩টি আসনে জিততে পেরেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।

তারা হলেন- রংপুর-৩ আসনে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং কুড়িগ্রাম-১ আসনে এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান। বাকি ৬ জনের কেউই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি।

আরও পড়ুন: ২ দিনের গণসংযোগ শুরু আজ

নীলফামারী-৩ আসনে রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪ আসনে আহসান আদেলুর রহমান, রংপুর-১ আসনে হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, কুড়িগ্রাম-২ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-১ আসনে ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারী এবং গাইবান্ধা-২ আসনে মো. আব্দুর রশিদ সরকার হেরে গেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর জেলায় গত নির্বাচনে ২ জন জয়ী হলেও রংপুর-৩ আসনে এবার জাতীয় পার্টি থেকে কেবল জিএম কাদের জিতেছেন।

তিস্তা নদীবেষ্টিত রংপুর-১ আসনে গঙ্গাচড়ায় নৌকার প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রের কাছে নাস্তানুবাদ হয়েছেন এরশাদের ভাতিজা এবং সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ ও বর্তমান সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ। এ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন আসাদুজ্জামান বাবলু।

আরও পড়ুন: বিএনপির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘ ৩৭ বছর পর নাড়ির টানে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পেরেছেন তারা। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়ের মধ্য দিয়ে এ আসনে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ দুমড়ে-মুচড়ে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।

লালমনিরহাটের ৩ টি সংসদীয় আসন একসময় জাতীয় পার্টির দূর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর সেই দূর্গ ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সুবাদে এ দূর্গে এখন শক্ত ঘাঁটি গেড়েছে আওয়ামী লীগ। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তার প্রতিফলন ঘটেছে।

৩ আসনেই জিতেছে নৌকা। জাতীয় পার্টির কর্মীরা এখন হতাশ হয়ে বিভিন্ন দলে ভিড়ছেন। তাদের মতে, নিজেদের দূর্গেই দুর্গতিতে পড়েছে জাতীয় পার্টি। একই চিত্র নীলফামারীতেও। এ জেলার ৪ টি আসনেই ভরাডুবি হয়েছে জাতীয় পার্টির।

আরও পড়ুন: সাতক্ষীরা-১ আসনে নৌকার স্বপন বিজয়ী

এরশাদ পরিবারের সদস্য ও বর্তমান এমপি আহসান আদেলুর রহমানকে আওয়ামী লীগ ছাড় দিলেও জয়ের মালা গলায় তুলতে পারেননি তিনি। নীলফামারীর ৪টি সংসদীয় আসনের ২টি আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক ও ২টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন।

নীলফামারী-৩ আসনে রানা মোহাম্মদ সোহেল এবং নীলফামারী-৪ আসনে আহসান আদেলুর রহমানকে ছাড় দিয়ে ওই ২টি আসনে নৌকা রাখেনি আওয়ামী লীগ। তারপরও জিততে পারেননি জাতীয় পার্টি।

এছাড়া গাইবান্ধাও একসময় জাতীয় পার্টির দূর্গ ছিল। দিনে দিনে সেই দূর্গে চরম দুর্দিন নেমে এসেছে। এবার এ জেলার ৫ টি আসনের ২ টিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হলেও কাঁধে লাঙ্গল নিয়ে সংসদে দাঁড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও আব্দুর রশিদ সরকারের।

আরও পড়ুন: ভোটে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ হয়নি

বাকি ৩টি আসনে নৌকার কাছে পাত্তাই পায়নি জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। এদিকে কুড়িগ্রামের ৪টি সংসদীয় আসনের একটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বাকি ৩টির দুটিতে আওয়ামী লীগের নৌকা ও একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।

এ জেলার দুটি আসনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ছাড় দিলেও জিতেছেন কেবল কুড়িগ্রাম-১ আসনে এ কে এম মুস্তাফিজুর রহমান। ছাড় পাওয়া আরেক প্রার্থী পনির উদ্দিনের ভরাডুবি হয়েছে।

ভোট বিশ্লেষণে দেখা যায়, সমঝোতার আসনগুলোর মধ্য থেকেই ১১টিতে জয়ের দেখা পেয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। বাকি কোথাও তারা জিততে পারেননি। এমনকি কোথাও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়তে পারেননি।

আরও পড়ুন: ছাত্রদল নেতাকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ

আওয়ামী লীগ ছাড় দেওয়া সত্ত্বেও ভোটে জিততে না পারাকে বড় ধরনের ব্যর্থতা বলে মনে করছে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বছরের পর বছর সমঝোতা করে দেওয়ার ফলেই এমন ভয়াবহ ভরাডুবির শিকার হতে হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা।

তৃণমূলের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, সমঝোতার রাজনীতিতে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ধ্বংস হয়েছে। এবারের নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা ও তৃণমূলে সমন্বয়, শীর্ষ নেতৃত্বের সঠিক নির্দেশনা না থাকাসহ নানা অভিযোগ করেছেন তারা।

একই সঙ্গে পরাজয়ের নেপথ্যে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ জনগণের মতামতের মূল্যায়ন না করাকে দুষছেন।

পীরগাছা উপজেলার শহিদুল ইসলাম ও জিল্লার রহমান এবং রংপুর সদরের আনিছ মিয়া ও ঝন্টু মিয়াসহ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, রংপুর অঞ্চল এক সময় জাতীয় পার্টি দূর্গ হলেও এখন আর নেই। কতিপয় নেতার হাতে জিম্মি দল।

আরও পড়ুন: তিন দিনের রিমান্ডে নবী

এ কারণে গত স্থানীয় নির্বাচনসহ রোববারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরূপ ফলাফল হয়েছে। দলের একেক সময় একেক নীতি, নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ ও সমঝোতার রাজনীতির কারণে এমন করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তারা ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে দলের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত রয়েছে।

এর আগে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রথম নির্বাচনী জোট হয় ২০০৮ সালে। ওই নির্বাচনে মহাজোট সঙ্গী জাতীয় পার্টিকে ৩২ আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।

উন্মুক্ত ১৭টি আসনে উভয় দলের প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০ আসনে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ১৩ আসনে বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয় ২৯টি আসন।

আরও পড়ুন: মাদারীপুর-৩ আসনে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

তারা শেষ পর্যন্ত ২২টি আসনে জয়লাভ করে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠে। এবার ১১টি আসন দিয়ে জাতীয় পার্টি কেমন বিরোধী দল হবে, সেই প্রশ্ন যেমন দেখা দিয়েছে, তেমনি দূর্গখ্যাত রংপুরের রাজনীতিতে দলটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, সেটিও এখন দেখার বিষয়।

প্রসঙ্গত, এবার জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ২৮৩টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। ১১ জন প্রার্থী নিজে থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাইয়ের পর শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেন ২৬৫ জন প্রার্থী।

তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, দল থেকে সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার কারণে নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত ১৯ জন সরে দাঁড়ান। শেষ পর্যন্ত ভোটে ছিলেন ২৪৬ জন।

সান নিউজ/এনজে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নলছিটিতে ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠির নলছিটিতে শুরু হয়েছে ভূট্টো স্মৃত...

স্বামীর মুঠোফোনে সাবেক প্রেমিকের ম্যাসেজ-ভিডিও, নববধূর আত্মহত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামীর মুঠোফোনে সা...

বাজার সহনশীল করার চেষ্টা করছি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমে এসেছে জ...

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহ...

বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ জনের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃ...

বারী সিদ্দিকী’র প্রয়াণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকের ঘটনা কাল...

রোববার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

সান নিউজ ডেস্ক: প্রতি সপ্তাহের এক...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ...

সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছ...

ফের বাড়ল সোনার দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বাজারে ফের সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা