এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে আলোচিত নৌকার প্রার্থী বীর উত্তম ব্যারিস্টার এম শাহজাহান ওমরের সম্পদ কমেছে। তবে তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ।
আরও পড়ুন: ৩৩৮ ওসি বদলির তালিকা ইসিতে
গত ৫ বছরে শাহজাহান ওমরের নগদ অর্থ কমলেও তার স্ত্রীর নগদ অর্থ বেড়েছে ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৩ টাকা। তবে তার স্ত্রীর এ টাকা বৃদ্ধির উৎস হলফনামায় নেই।
২০১৮ সালের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ওমর ও তার স্ত্রীর সম্পদ এবং নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৯৬ টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শাহজাহান ওমর ও তার স্ত্রী অর্থ সম্পদে মোট ৫ কোটি ৬৩ লাখ ২৪ হাজার ৪১৭ টাকার মালিক বলে উল্লেখ করেছেন।
এ হিসেবে গতবারের তুলনায় এবার ওমর ও তার স্ত্রীর সম্পদ ও নগদ অর্থ কম দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৯ টাকা। তবে হলফনামায় তার ও তার পরিবারের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি এবং তার বিরুদ্ধে বিচারাধীন ও তদন্তনাধীন মামলার কোন বিবরণ উল্লেখ নেই।
আরও পড়ুন: নতুন সংসদে শ্রম আইন সংশোধন হবে
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙ্গচুর মামলায় ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর এজাহার নামীয় ১১ নং আসামি।
তিনি নিউমার্কেট এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে যান। এ মামলায় ২৯ নভেম্বর জামিন পেয়ে পরের দিন মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে অনলাইনে মনোনয়ন ফরম তুলে জমা দেন।
কিন্তু প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ মামলায় জামিন নেননি। তার নামে চলমান এ দুটি মামলা এবং দুর্নীতির মামলার কোনো বিবরণই হলফনামায় নেই।
আরও পড়ুন: প্রকৃত সাংবাদিকরাই কার্ড পাবেন
হলফনামা সূত্রে জানা যায়, কৃষি জমি, বাড়ি, দোকান ও অন্যান্য উৎস থেকে তার বার্ষিক আয় ৩০ লাখ ৫৯ হাজার ১৭০ টাকা। নিজের নামে নগদ অর্থ আছে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৭ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা করা টাকার পরিমাণ ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৮৫৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে আছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯১৩ টাকা।
বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র, স্থায়ী আমানত বিনিয়োগ ও এফডিআর এ নিজ নামে ১ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং একই খাতে স্ত্রীর নামে আছে ১ কোটি ১ লাখ টাকা।
তার গাড়ির মূল্য ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর গাড়ি মূল্য ১৭ লাখ ৪ হাজার টাকা। এছাড়া উভয়ের আসবাবপত্রসহ আরও ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার সম্পদ আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ৫৬৬
অপরদিকে ২০১৮ সালে নির্বাচনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, তার কৃষি ব্যাংক আমানত ও পেশাগত আয় উল্লেখ করা হয় ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩২ টাকা। ওমরের নগদ টাকার পরিমান ছিল ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৪৪ টাকা এবং স্ত্রীর নামে নগদ টাকা ছিল ৭০ হাজার ৮৭৭ টাকা।
তার নামে ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ছিল ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৩ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ছিল ৩ লাখ ৪৭ হাজার ২১২ টাকা। স্থায়ী আমানত ছিল ২ কোটি ১২ লাখ ৪২ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর ছিল ১ কোটি ৮২ লাখ ৯ হাজার ৮৮১ টাকা।
গাড়ীর মূল্য ছিল ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর গাড়ির মূল্য ১৭ লাখ ৪ হাজার টাকা। তাদের উভয়ের ব্যবহৃত স্বর্ণের মূল্য ছিল ৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এছাড়া উভয়ের ইলেকট্রিক ও আসবাবপত্রের মূল্য ছিল ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
উভয়ের কৃষি ও অকৃষি জমির মূল্য ছিল ৪৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭৬১ টাকা। বরিশাল ও রাজাপুরে মোট ৩ টি বাড়ি ও পাকা ভবনের মূল্য ছিল ১ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ৫০৮ টাকা। এছাড়া ঢাকায় একটি খামারের মূল্য দেখানো হায়েছে ৪৮ লাখ ২৪ হাজার ৫০৮ টাকা।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলা, নিহত ৩
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, শাহজাহান ওমরের চেয়ে তার স্ত্রীর নগদ টাকার পরিমাণ প্রায় ৫ গুণ বেশি দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি তিনি ও তার স্ত্রীর নামে স্থায়ী আমানত সমপরিমাণ বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন।
তবে শাহজাহান ওমরের নামে ১/১১ এর সময় দুদকের দায়ের করা অবৈধ অর্থ সম্পদ উপার্জনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়া এবং বর্তমান সরকারের গাড়ি পোড়ানোসহ ২টি তদন্তনাধীন মামালার বিষয়ে কোনো তথ্য হলফনামায় নেই।
যদিও ২০১৮ সালের হলফনামায় রাজাপুর ও ঢাকার ২০০৭ সালের দুটি মামলার কথা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে রাজপুর থানার দায়ের করা মামলায় আদালতে খালাস এবং ঢাকার গুলশান থানায় দায়ের হওয়া অপর মামলা খালাসের পর উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন।
কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শাহজাহান ওমরের সর্বশেষ মামলার কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: সয়াবিন কিনবে সরকার
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ওমরের নগদ অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করা হয় ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৪৪ টাকা এবং তার স্ত্রীর টাকার পরিমাণ ছিল ৭০ হাজার ৮৭৭ টাকা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শাহজাহান ওমরের নগদ অর্থের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৭ টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে নগদ অর্থে দেখানো হয়েছে ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা।
এ হিসেবে গত ৫ বছরে শাহজাহান ওমরের নগদ অর্থ কমলেও তার স্ত্রী নগদ অর্থ বেড়েছে ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৩ টাকা। তবে তার স্ত্রীর এ টাকা বৃদ্ধির উৎস হলফনামায় নেই।
এছাড়া বরিশালের ব্রাউন কম্পাউন্ড সড়কে বীর উত্তম ভবন এবং রুপাতলি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নির্মানাধীন বীর উত্তম হাসপাতালের কোনো তথ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি। অথচ ২০১৮ সালের হলফ নামায় বরিশাল ও নিজ গ্রাম রাজাপুরে তার মোট ৩ টি বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
সান নিউজ/এনজে