নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত ও মুক্তির মেয়াদ আবারও ছয়মাস বাড়ানো হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমাদের মতামত আমরা দিয়েছি। তার (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ছয়মাস বাড়ানোর সুপারিশ দিয়েছি। তবে তিনি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে পারবেন না। বিদেশে যেতে হলে আদালতের অনুমতি লাগবে। শর্ত হচ্ছে, তিনি আগে যে শর্তে ছিলেন, অর্থাৎ বাসায় থাকবেন এবং দেশে চিকিৎসা নেবেন।’
আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার কোনো মতামত দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনে তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে স্থায়ী মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় স্থায়ী মুক্তির আবেদন বিবেচনা করেনি।
তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। বিএনপির নেতারা আশা করছেন, আগামীতে সেই সুযোগটাও পাওয়া যাবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সুপারিশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার আগের শর্তে আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত দেওয়া হয়েছে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদনটি পাঠানো হবে। তিনি যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেভাবে তা কার্যকর করা হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির আবেদনটি পরিবারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ নিয়েও তিনি এখনও কিছু জানেন না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে পরে জানাবেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে পরিবারের করা আবেদনে সাড়া দিয়েছেন। আশা করি, তার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারেও সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আমি যতোদূর শুনেছি, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। তার মানে, আগের শর্ত বহাল থাকছে।’
দুর্নীতির ২ মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। তার দণ্ডের কার্যকারিতা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হলে তিনি কারামুক্ত হন। ওই মুক্তির মেয়াদ আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ হবে।
তার আগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার ভাই শামীম এস্কেন্দার গত ২৫ আগষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। তাতে তার অসুস্থ বোনের কারামুক্তির পদক্ষেপ নিতে সরকারকে অনুরোধ জানান তিনি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু করেন খালেদা জিয়া। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট্র দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজার রায় হয়। তার বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে। গত বছর ১ এপ্রিল থেকে কারা বিভাগের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।
গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার পর খালেদা জিয়া ঢাকার গুলশানের বাসায় ওঠেন। খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় ২ বছরের বেশি সময় জেল খাটার পর সেই দিনই মুক্তি পেয়েছিলেন। ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বর্তমানে গুলশানে তার ভাড়া বাসা 'ফিরোজায়' রয়েছেন। তিনি আর্থারাইটিসের ব্যথা, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন।
সান নিউজ/ আরএইচ/ এআর