নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঝালকাঠি: কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমাদুল হক মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলার ঘটনায় ঝালকাঠি জেলাজুড়ে তোলপাড় চলছে। জেলা ও উপজেলা তথা দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অস্বস্তি ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন।
মামলার পরদিন থেকেই তার অনুসারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করছেন মনির। তার অভিযোগ, উপজেলা নির্বাচনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে হয়রানি ও হেয় করতে এক ডাকাতের মেয়েকে দিয়ে ‘মিথ্যা মামলাটি’ করিয়েছেন।
২০১৭ সালে ধর্ষিত হন, এমন অভিযোগে মনিরের বিরুদ্ধে বরিশালে মামলাটি করেছেন তার কথিত প্রেমিকা। ‘বিয়ের দাবিতে প্রত্যাখ্যাত’ ২২ বছরের ওই তরুণী মামলায় অভিযোগ করেছেন, বিয়ে ও চাকরির আশ্বাসে দীর্ঘদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মতো বরিশালে বন্ধুর বাসা ও ঢাকায় অবস্থান করলেও এমাদুল হক মনির বিয়ে করেছেন অন্য মেয়েকে। খবর পেয়ে তাকে বিয়ে করতে চাপ দিলে মামলা দিয়ে হয়রানির হুমকি পেয়েছেন।
এই মামলাকে কেন্দ্র করে কাঠলিয়ায় চেয়ারম্যান মনিরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া গ্রুপের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন কাঠালিয়াবাসী। তবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সর্তক অবস্থায় রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) কাঠালিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ কাঠালিয়া বাইপাস সড়কে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করে। শনিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার আমুয়া বাজার এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনের আয়োজন করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদযাপন পরিষদসহ স্থানীয় ছয়টি সংগঠন। আমুয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম ফোরকানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরুণ কর্মকার, পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শিশির দাস।
পরে নিজ সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমাদুল হক মনির। লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, এইচএসসি পাস না করেও ওই তরুণী পাস ও চাকরি নেওয়ার যে নাটক সাজিয়েছেন এবং সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ছবিটি একটি সালিশ বৈঠকের সময় তোলা। তিনি এ মামলার নিন্দা ও বিচার দাবি করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরুণ কর্মকার বলেন, ‘তার একটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান মনিরের বিরুদ্ধে এ মামলা সাজিয়েছেন। দলীয়ভাবে তদন্ত করে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে মামলাটি করা হয়েছে, সেটির সঠিক তদন্ত করা হোক। মনির দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন বলেন, ‘ঘটনার প্রমাণ পেলে দেখা যাবে। আর এমন সম্মানি লোকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করলে তার বিচার হওয়া উচিত। করোনা পরিস্থিতির কারণে দলের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।’
এমাদুল হক মনির ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি মরহুম অ্যাডভোকেট ফজলুল হকের ছেলে এবং জেলার সবচেয়ে কনিষ্ঠ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
গত মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) উপজেলার আমুয়া গ্রামের ৩নম্বর ওয়ার্ডের এক নারী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু শামীম আজাদ শুনানি শেষে আগামী ৪ অক্টোবর ধার্য তারিখের আগে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি)।
সান নিউজ/ এআর