নিজস্ব প্রতিবেদক : ত্যাগী নেতা যারা দলের দুঃসময়ে সামনে ছিল, যারা দুর্দিনের কর্মী, কমিটি করার সময় তাদের সামনে রেখে মূল্যায়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, টাকাওয়ালা লোক এনে আওয়ামী লীগের পাল্লা ভারী করার দরকার নেই। পুরোনো ত্যাগী পরীক্ষিতরা গরিব হোক তারাই আমার কর্মী। তারাই দুর্দিনে থাকবে।
আরও পড়ুন : অন্ধকার যুগ ফেরাতে চায় বিএনপি
দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পুরোনো নেতাদের বাদ দিয়ে কোনো কমিটি করা যাবে না। আমার স্বাক্ষরিত কমিটিতে যারা নেতা ছিলেন, তারা যেন বাদ না পড়ে। কমিটি করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সাবেক নেতা বা আওয়ামী পরিবারের কি না তা যাচাইয়ের নির্দেশ দেন তিনি।
শনিবার (১২ আগস্ট) রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এসময় দলের সংসদ-সদস্য বা নেতার বিরুদ্ধে বিষোদগার করা থেকে বিরত থাকতে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সভা শুরু হয়। প্রথমে সূচনা বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে শুরু হয় রুদ্ধদ্বার বৈঠক। সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এরপর শোকের মাসে ১৫ আগস্টের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন স্বরূপ দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, সৈয়দ জেবুন্নেছা হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সদস্য ড. মুশফিক হোসেন চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন : অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা হবে
সভায় আট সাংগঠনিক সম্পাদক বিভাগীয় রিপোর্ট পেশ করেন। তারা হলেন, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, শফিউল আলম নাদেল ও সুজিত রায় নন্দী। সাংগঠনিক প্রতিবেদন জমা নেওয়ার সময় দলের প্রধান শেখ হাসিনা কিছু নির্দেশনা দেন।
সুনামগঞ্জের কমিটির বিষয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জেবুন্নেছা হক বলেন, কমিটিতে দলের দুঃসময়ের লোকদের বাদ দেওয়া হয়েছে। হাইব্রিডদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। নব্য টাকাওয়ালাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। এই টাকাওয়ালারাই আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করছে।
এ সময় সিলেট বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন আওয়ামী লীগ সভাপতিকে বলেন, পুরোনো ৩৩ জনকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। বাকি লোক নতুন নিয়ে আসা হয়েছে। যাদেরকে টাকাওয়ালা বলা হচ্ছে, তারা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা।
আরও পড়ুন : বিদেশি শক্তির পরামর্শে চলি না
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, যারা টাকা দিয়ে দলে আসবে, টাকা দিয়ে পদ নেবে, তারা টাকা কামিয়ে দলের দুর্দিন দেখলে কেটে পড়বে। সব সময় সুসময় থাকে না। দুর্দিন দেখলেই তারা চলে যাবে। তিনি বলেন, আমি যখন দলের দায়িত্ব নিই, তখন দলের দেনা ছিল ৭০ হাজার টাকা। সেই অবস্থা থেকে দলকে সংগঠিত করেছি। টাকাওয়ালা লোক এনে আওয়ামী লীগের পাল্লা ভারী করার দরকার নেই। পুরোনো ত্যাগী পরীক্ষিতরা গরিব হোক, তারাই আমার কর্মী। তারাই দুর্দিনে থাকবে।
এ সময় আহমদ হোসেনকে সৈয়দ জেবুন্নেছা হকের সঙ্গে সমন্বয় করে সুনামগঞ্জের কমিটি করার নির্দেশ দেন।
আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণের অধীনে বিভিন্ন শাখার কমিটি বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও পূর্ণাঙ্গ করতে না পারায় বিষয়টি তত্ত্বাবধানে দলের দুজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে লে. কর্নেল ফারুক খান ঢাকা মহানগর উত্তর ও ড. আব্দুর রাজ্জাক দক্ষিণের বিষয়ে তত্ত্বাবধান করবেন। ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশের সময়, আওয়ামী লীগ সভাপতি ঢাকা মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা কমিটি দিতে না পারলে কমিটি ভেঙে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন।
এ সময় গত ৬ আগস্ট গণভবনে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় ঢাকা মহানগর থেকে কাউকে বক্তব্য রাখতে দেওয়া হয়নি বলেও স্মরণ করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। কমিটি করতে না পারার ব্যর্থতার কারণে তাদেরকে বর্ধিত সভায় বক্তব্যদান থেকে বঞ্চিত করা হয়।
আরও পড়ুন : বিএনপির কোনো দাবি মানা হবে না
এদিকে আগামী ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন হচ্ছে। ওইদিন রাজধানীর সাবেক বাণিজ্য মেলার স্থলে জনসভা হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও সেপ্টেম্বরে সিলেট ও বরিশালে নির্বাচনি জনসভা করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এছাড়া দলের কার্যনির্বাহী সভার বৈঠকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, যথাসময়েই নির্বাচন হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিএনপি নির্বাচন বানচাল করার নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তারা সফল হবে না।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় সরকারের গত সাড়ে ১৪ বছরের ব্যাপক উন্নয়ন-সাফল্যেগুলো ভোটারদের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের অপকর্ম দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার নিদের্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
সান নিউজ/জেএইচ