নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ অন্য দলের লোকদের জামায়াত সম্পর্কে পড়া ও জানার অনুরোধ করে দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, মেহেরবানী করে আপনারা জামায়াত সম্পর্কে জানুন। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তৃতীয় দল।
আরও পড়ুন: বিএনপির মাথায় ভূত চেপেছে
শনিবার (১০ শনিবার) এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। তিন দফা দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা।
ডা. সৈয়দ তাহের বলেন, অনেকে দেশকে সোনার দেশ গড়তে চেয়েছিল। কিন্তু সেই লোকের অভাব ছিল। এ জন্য আমরা দেশের মধ্যে একটি ছাত্র সংগঠন গড়েছি। আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন? আমাদের ছেলেরা কি কোনো মেয়ের ওড়না ধরে টান দিয়েছিল কখনো? বলতে পারবেন কি? তাদের হাতে কোনো গাজা, মদ দেখেছেন? তারা দেশের স্মার্ট তরুণ।
এটি আকাশ থেকে বা জন্ম থেকে হয়েছে? না, এটি স্মার্ট তরুণ তৈরির কারখানা, সেই কারখানা বা দলের নাম বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী।
ডিএমপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে ইঙ্গিত করে ডা. তাহের বলেন, আমাদের সহযোগিতা করুন। এদেরকে বিদায় করে দেশের এ অবস্থা পরিবর্তন হোক।
তিনি বলেন, নির্বাচন হচ্ছে সবার জন্য লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। এভাবে নির্বাচন হয়। গণতন্ত্র মানে নির্বাচন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না, হয় না।
আরও পড়ুন: বিএনপি রেলকে পরিত্যক্ত করেছিল
কেয়ারটেকার সরকার আমরা কেন চাই প্রশ্ন রেখে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বেশি বলতে চাই না। এটাই বলবো, আগামী নির্বাচনে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হবে ইনশাল্লাহ। অবিলম্বে আমাদের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিন।
দলটির এ কেন্দ্রীয় নেতা এই মাসের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনার আহ্বান করেন।
সাবেক এমপি ও জামায়াত ইসলামীর সেক্রটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জুলুম করে এদেশের মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করতে পারবেন না। সভা সমাবেশ করতে যদি অনুমতি লাগে এ আইন আমরা মানি না। সংবিধান আইনের উর্ধ্বে নয়।
তিনি বলেন, ১৩ সালে সমাবেশ করেছিলাম, আবার ১০ বছর পর অনুমতি দিয়েছেন, কিন্তু প্রাচীর মধ্যে আটকে রেখেছেন। আমরা চেয়ে ছিলাম রাজপথে সমাবেশ করবো। তা আপনারা করতে দেননি।
আরও পড়ুন: দেশে কোনো রাজনৈতিক সংকট হয়নি
তিনি বলেন, কথায় বলেন গণতন্ত্র, আর ক্ষমতায় গেলে করেন জুলুম তন্ত্র। এটা আর এদেশের মানুষ মেনে নিবে না। এবার নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অবিলম্বে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নইলে গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করে এ দেশের মানুষ আপনাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, জামায়াতকে সব সময় সন্ত্রাসী দল হিসেবে প্রচার করে সরকার। আজ কি দেখলেন, একটি সুশৃঙ্খল দল।
তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে একটি সভায় বলেছিলেন, আজীবনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই, স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কি সে কথা রেখেছেন। তিনি কোনো কথা রাখেননি।
আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল কায়েম করবো। তারপর রাজপথ ছাড়বো উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তি চাই।
আরও পড়ুন: বিশৃঙ্খলা করলে প্রতিহত করা হবে
দলটির প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। কোনো অজু হাতে অনিবন্ধিত দল বলা হয়? আদালতের রায় শেষ না হওয়ায় পর্যন্ত নিবন্ধন আছে।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট সংশোধন করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে জামায়াতের নাম রাখতে হবে। আর কোনো নাটক করবেন না।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মজিবুর রহমান ও জামায়াতের ইসলামীর আমির মওদুদ এক টেবিলে বসেছিলেন।
১৯৯১ সালে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে ২০২৪ সালে সেইভাবে নির্বাচন হবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে না এলে কবর রচনা হবে
মতিউর রহমান আকন্দ বক্তব্যকালে ফাঁসি হওয়া নেতাদের স্মরণ করে বলেন, দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রাঙ্গণে তাদের প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সকল রাজবন্দী নেতাসহ আলেম ওলামাদের মুক্তি দিতে হবে।
আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে দিতে হবে। আমাদের প্রতীক, মানুষের ইনসাফের প্রতীক দাড়িপাল্লা ফিরে দিতে হবে।
সমাবেশ শেষে দলটির ছাত্র সংগঠন শিবিরের পক্ষ থেকে দায়িত্বরত পুলিশ ও সাংবাদিকদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: ভিসানীতি নিয়ে সরকার ভীত নয়
আয়োজিত আজকের সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেনন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুর রহমান মূসা, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, সহ: সেক্রেটারি মাওলানা মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ড. ফখরুদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলওয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি আতিকুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলামসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, আজকের এ কর্মসূচি পালনের জন্য পুলিশের কাছে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটের লিখিত আবেদন করে দলটি। তারই প্রেক্ষাপটে গতকাল রাতে মৌখিক অনুমতি দেয় ডিএমপি।
৫ জুন জামায়াতকে অনুমতি না দিয়ে কর্মদিবস থাকার কারণে তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি বলে জানায় পুলিশ। তাই এবার ছুটির দিন শনিবার দেখে তারা অনুমতির আবেদন করে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশের পর থেকে দলটিকে কোনো বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। অবশেষে দীর্ঘ ১০ বছর পর সমাবেশের পুলিশি অনুমতি পেল।
সান নিউজ/এইচএন