সান নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ঠিক করা হয়েছে—‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দৃশ্যমান, লক্ষ্য এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যেই মূল দল আওয়ামী লীগের জন্মের এক বছর আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল গৌরব ও ঐতিহ্যের এ ছাত্র সংগঠনটি।
আরও পড়ুন: টিভিতে আজকের খেলা
গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘ এ পথচলায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তথা প্লাটিনাম জয়ন্তী আজ।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তথা প্লাটিনাম জয়ন্তীতে বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি তুলেন ধরেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোটগ্রহণ শুরু
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাদ্দাম হোসেন বলেন, সময়ের প্রয়োজনে আজ থেকে ৭৫ বছর আগে বাঙালির হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ও মুক্তির মহান নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, বর্তমানেও সেই ছাত্রলীগ সময়ের প্রতিটি প্রয়োজনে নিজের সর্বোচ্চটুকু বিলিয়ে দেওয়ার ব্রতকে ধারণ করে পথ চলছে। এ দেশের প্রতিটি প্রজন্মে, প্রতিটি তারুণ্যে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অনুভূতিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শ্রেষ্ঠতম স্থানে অবস্থান করেছে, করছে এবং আগামীতেও অবধারিতভাবে করবে। তাই ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করে শেখ হাসিনার পরিকল্পিত 'স্মার্ট বাংলাদেশ' এর নেতৃত্ব দেবে ছাত্রলীগ, ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে এটিই আমাদের সংকল্প।
তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বুধবার হলেও এ উপলক্ষ্যে ছাত্রলীগের শোভাযাত্রা হবে শুক্রবার ছুটির দিনে। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আরও পড়ুন: চাল আমদানি করছে সরকার
সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অভিভাবক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অতীত সোনালী ইতিহাসে ফিরে যাবে। আমরা যতদিন দায়িত্বে আছি ততদিন প্রতি সপ্তাহে, মাসে সারা দেশে সম্মেলনের উৎসব চলবে। আমরা ছাত্রলীগকে গতিশীল করার জন্য প্রয়োজনে সমগ্র বাংলাদেশের অলি-গলি চষে বেড়াব। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের সারথি হবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন সকাল ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এরপর সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়া সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন এবং বিকাল ৩টায় শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণসহ বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়েছে ছাত্রলীগ। এর বাইরে বছরব্যাপী ‘সুবিধাজনক সময়ে’ আরো কিছু কর্মসূচি পালন করবে তারা।
আরও পড়ুন: অনিয়মকে একেবারে প্রশ্রয় দেবো না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত অনাবাদী জমিতে শাক-সবজি-ফল চাষ, মাছ ও গৃহপালিত পশুপালনের উদ্যোগ গ্রহণ, প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজ’ শীর্ষক মতবিনিময়, কনসার্ট ফর স্মার্ট বাংলাদেশ আয়োজন ইত্যাদি।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার নেতৃত্বেই ঐ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়। তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষকতায় একঝাঁক মেধাবী তরুণের উদ্যোগে সেদিন যাত্রা শুরু করে ছাত্রলীগ।
আরও পড়ুন: বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ
১৯৪৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল হিসেবে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে, যা পরে আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে এ দেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। এ প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বাঙালি জাতির ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেয় ছাত্রলীগ। ৫২-র ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, ৫৪-র সাধারণ নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ পরিশ্রমে যুক্তফ্রন্টের বিজয় নিশ্চিত, ৫৮-র আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২-র শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, ৬৬-র ৬ দফা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া, ৬ দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, ৬৯-র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাক শাসকের পদত্যাগে বাধ্য করা এবং বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা, ৭০-র নির্বাচনে ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ, স্বাধীনতা-পরবর্তী সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের অসামান্য অবদান দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনের নেতাকর্মীরা পরে জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষনেতার রাজনীতিতে হাতেখড়িও হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে।
সান নিউজ/এমএ