এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): দীর্ঘ ১৯ বছর পর ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে ঘিরে প্রতিদিন বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা উপজেলা কার্যালয়ে ভিড় করছেন। এ সম্মেলনকে ঘিরে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। সম্মেলনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। পদ প্রত্যাশী নেতারা কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ ২০০৩ সালের ১১ জুলাই ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ১৯ বছর। ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটির ১৪ জন ইতোমধ্যে প্রয়াত হয়েছেন। কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হেকিম এক বছর আগে মারা গিয়েছেন। কমিটির সভাপতি সাবেক এমপি মোঃ আব্দুছ ছাত্তার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদকের পদ পাওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ ছাড়তে হয়। দীর্ঘ ১৯ বছর কমিটি না থাকায় দলে নানা বিভক্তির দেখা দেয়। কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে চলে দলীয় কার্যক্রম।
আগামী ২৯ জুন উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। সম্মেলন উপলক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান সম্মেলন সফল করতে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাদের ডেকে কর্মী সম্মেলন করছেন, যা একটি বিরল ঘটনা। এছাড়াও সম্মেলনকে ঘিরে উপজেলা চেয়ারম্যানের দুইশত তোরণ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক নেতাকর্মী জানান, আগামী ২৯ জুন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন। এর কারন হিসেবে দলীয় নেতারা বলেন, নেতা এবং নেতৃত্ব দেওয়ার সকল যোগ্যতা মাহমুদ হাসান সুমনের মধ্যে রয়েছে। তিনি উপজেলা পরিষদের দুই দুবারে সফল চেয়ারম্যান। পৌর এলাকা ও পুরো উপজেলা জুড়ে তার অসংখ্য কর্মী-সমর্থক রয়েছে।
অপরদিকে দলের নেতারা বলছেন, হাইব্রিডদের বাদ দিয়ে দলের প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে উপজেলা কমিটি গঠনের দাবি তুলেছেন তারা।
এছাড়া সম্মেলনকে ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন সড়কের দু’পাশ টানানো হচ্ছে ছবি সংবলিত বিভিন্ন ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও নির্মাণ করা হচ্ছে তোরণ। মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে পছন্দের প্রার্থীদের বড় বড় ছবি, ব্যানার, তোরণ। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ও দলীয় নেতা-কর্মীদের আপ্যায়ন, মঞ্চ প্রস্তুত, সঞ্চালনা ও সাউন্ড সিষ্টেমের দায়িত্ব বন্টন করে দেওয়া হয়েছে নেতাদের।
এবারের সম্মেলনে সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন ময়মনসিংহ- ৮ ঈশ্বরগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি আব্দুছ ছাত্তার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বুলবুল,জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তারেকুল ইসলাম তারেক।
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত জোসেন ভুঁইয়া, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ আহ্বায়ক আবু বকর ছিদ্দিক দুলাল ভূঞা, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এ,কে,এম হারুন-অর-রশীদ হারুন, আওয়ামী যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক এডভোকেট হাবিবুল্লাহ মিলন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল জলিল মন্ডল। এছাড়াও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আরও একাধিক প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও সাবেক যুবলীগ সভাপতি সাফায়েত হোসেন ভূঞা বলেন, দেড় যুগ পর সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। আমি আশাবাদী একটি শক্তিশালী ও সুশৃঙ্খল কমিটি হবে।আমি চাই দলের ত্যাগী নেতারা কমিটিতে আসুক। বিতর্কিত, বহিস্কৃত এবং উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা নৌকার বিরোধী হয়ে কাজ করেছে তাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী পরিবারের ক্লিন ইমেজের নেতারা নেতৃত্বে আসুক।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বুলবুল জানান, আমি দীর্ঘদিন যাবৎ সততারে সাথে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্ব পালন করে এসেছি। এখন নেতা কর্মীরা আমাকে সভাপতি হিসেবে চাইছে, তাই আমি সভাপতি প্রার্থী হয়েছি। দায়িত্বশীল কোন পদ পেলে আমি তা নিষ্ঠার সাথে পালন করবো।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী মাহমুদ হাসান সুমন জানান, ‘আমি পরপর দুই-দুইবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রতীক নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ বাসীর প্রত্যক্ষ মূল্যবান ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আমি জনগণের খাদেম হয়ে ইতিমধ্যে ব্যাপক কাজ করেছি ও ঈশ্বরগঞ্জকে আধুনিক মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এবার ১৯ বছর পর সম্মেলনকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। কেন্দ্র থেকে আমাকে দায়িত্বশীল পদে মনোনীত করলে সকল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে সকল বিরোধ মিটমাট করে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করে তুলবো।’
সান নিউজ/এনকে