নিজস্ব প্রতিনিধি:
২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট প্রত্যাখ্যান করে তার কপি ছিঁড়ে ফেলেছেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। একইসঙ্গে করোনা মোকাবিলায় সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং রোডম্যাপ তৈরি করে জাতির উদ্দেশে প্রকাশ করারও দাবি জানান তারা।
বুধবার (১ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে বাজেট প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় সংসদের বাইরে বিক্ষোভ শেষে বাজেটের কপি ছিঁড়ে ফেলেন বিএনপির পাঁচ সংসদ সদস্য। দলটির বাকি দুই সংসদ সদস্য অসুস্থ থাকায় এই কর্মসূচিতে উপস্থিত হতে পারেননি বলেও জানানো হয়।
এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘বিএনপির সংসদ সদস্যদের মধ্যে একমাত্র আমাকে বাজেট আলোচনার শেষ দিকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু একপর্যায়ে স্পিকার আমার মাইকও বন্ধ করে দেন। মাত্র একজনই বিরোধী দলের সদস্য। বাকি সবাই মহাজোটের শরিক। আমাদের দাবি ছিল ভার্চুয়াল বাজেট আলোচনার। সেটা হলে সব সদস্য তার বাজেট প্রতিক্রিয়া দিতে পারতেন। সেই সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে।’
প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সংসদ গঠিত হয়েছে দাবি করে হারুন বলেন, ‘এখানে যারা মহাজোটের শরিক, তারাই আবার বিরোধী দলে আছেন। যে কারণে সত্যিকার অর্থে জনগণের যে সংকট সেটি সংসদে প্রতিফলিত হচ্ছে না। আমরা যে কয়েকজন সদস্য তা বলার চেষ্টা করি, তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হয় না।’
গোটা জাতি সংকটে আছে উল্লেখ করে হারুন বলেন, ‘কিন্তু সরকার সেটা উপলব্ধি করছে না। দেশের বিশেষজ্ঞরা এবং যারা এই সংকটে কাজ করতে চান, তাদের সরকার তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। খেয়াল করবেন, স্বাস্থ্যখাতের বেহাল অবস্থার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছিলাম এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে সংস্কারের কথা বলেছিলাম। কিন্তু এই নিয়ে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী কোনও কথা বলেন নাই। ফলে সব মিলিয়ে গতকাল যে অপ্রত্যাশিত ও অকল্পনীয় বাজেট পাস হয়েছে, যাতে গত অর্থবছরের চেয়েও ২৪ শতাংশ বেশি অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এটা অবাস্তব ও অকল্পনীয়। আমরা এই বাজেট প্রত্যাখ্যান করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই সংসদে চিহ্নিত মাদক ও মানবাচারকারী, ব্যাংক লুটপাটকারী রয়েছে। তারাই ক্ষমতায় এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে। সুতরাং কখনও সৎ এবং অসৎ পাশাপাশি অবস্থান করতে পারে না।’
আবারও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অপসারণ দাবি করে হারুন বলেন, ‘অবিলম্বে মন্ত্রীকে অপসারণ করে যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে হবে। অতি দ্রুত করোনা নিয়ন্ত্রণ, উত্তরণের জন্য এবং বিনা চিকিৎসায় যেন মানুষ না মারা যায়, তার সুনির্দিষ্ট করে পরিকল্পনা এবং রোডম্যাপ জাতির উদ্দেশে দিতে হবে সরকারকে।’
এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
করোনা মোকাবিলায় বিএনপির দেওয়া ৮৭ হাজার কোটি আর্থিক সহায়তা প্যকেজের কথা উল্লেখ করে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমরা তিন বছর মেয়াদি বাজেট ভাবনা দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার বরাবরের মতো তার চরম কর্তৃত্ববাদী চরিত্র বজায় রেখে বিএনপি'র পরামর্শগুলো আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত সরকার যে বাজেট প্রস্তাবনা সামনে এনেছে, সেটা একমাত্র ক্ষমতাসীন দল ছাড়া কেউ কোনোভাবেই একটা সংকটকালীন বাজেট হয়েছে বলে রায় দেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকটি ক্ষেত্র থেকে বলা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেট করোনায় সৃষ্ট জীবন এবং জীবিকার সংকট মোকাবিলায় সক্ষম নয়। ফলে আগামী দিনগুলোতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। পুরো বাজেটটি নানা রকম স্ববিরোধিতা, অসামঞ্জস্যতায় পরিপূর্ণ।’
লিখিত বক্তব্যে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘সরকারের আর সব বাজেটের মতো এই বাজেটে লুটেরাদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ যে রকম ঢালাওভাবে করা হয়েছে সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে আর কখনও হয়নি। এবার মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে।’
বাজেটে বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনও কর্মসূচি নেই বলে উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘করোনা সংকটের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতের একটা পর্যটন খাত নিয়ে দেওয়া হয়নি একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও। এই দেশে সবচেয়ে দরিদ্র মানুষও যে মোবাইল ফোনে কথা বলে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেটা ব্যবহারের খরচ বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু শুল্ক কমানো হয়েছে ধনীদের ব্যবহার্য সোনার।’
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন, আমিনুল ইসলাম, জিএম সিরাজ এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।