নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার দেরিতে হলেও নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইন এনেছে, এ জন্য অভিনন্দন। তবে আইনটি অসম্পূর্ণ এবং এ কারণে বিতর্ক অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাংসদ রাশেদ খান মেনন।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে মেনন এই মন্তব্য করেন।
মেনন বলেন, ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন-বাণিজ্য, অর্থ, পেশিশক্তি, বিশেষ করে প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপ ও নির্বাচন কমিশনের নিশ্চেষ্ট ভূমিকা সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে আস্থা সম্পূর্ণ বিনষ্ট করেছে। নারায়ণগঞ্জের ব্যতিক্রমের নির্বাচন হয়েছে। দেশের মানুষ এ ধরনের ব্যতিক্রম জাতীয় নির্বাচন দেখতে চায়, সেটাই নিশ্চিত করতে হবে। এই সরকারকে বহাল রেখেই সেটা করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা ও নির্বাচনী আইন, আচরণবিধি মানা ও অর্থ, পেশিশক্তি ও প্রশাসনের ভূমিকা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন সংবিধান পর্যালোচনার দাবি জানান। মেনন বলেন, ‘সংবিধানের দ্বাদশ ও পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের মৌল চরিত্র কিছুটা ফিরিয়ে আনলেও এমন সব বিধি বর্তমান, যা সরকার পরিচালনায় প্রধান নির্বাহীর একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সংবিধানকে ধর্মীয় রূপ দিয়েছে। বিএনপি দ্বাদশ সংশোধনীর সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য বিধান এবং সংসদীয় ব্যবস্থা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার ‘নাম্বার ওয়ান এমাং দ্য ইকুয়াল’।
সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, মানবাধিকার, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের অধিকার সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করতে সংবিধানের পর্যালোচনা বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এজন্য এই অধিবেশনেই সংবিধানের পর্যালোচনার জন্য সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের সদস্যদের নিয়ে বিশেষ কমিটি গঠনের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যে সাম্য ও সমতার অর্থনৈতিক নীতির কথা বারবার বলতেন ও সব সীমাবদ্ধতার পরও অনুসরণ করতেন, স্বাধীনতার এই ৫০ বছরে আমরা তার যোজন যোজন দূরে পিছিয়ে গেছি। বাংলাদেশ এখন ধনীদের রাষ্ট্র, গরিবের নয়। খালি চোখেই দেখা যায় এই ধনিকদের এক ক্ষুদ্র অংশ উন্নয়নের সবকিছুতেই ভাগ বসাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তৃতায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে দৃঢ় হতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু টিআইবি প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, বাংলাদেশ কেবল দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের ওপরে অবস্থান করছে।
মেনন বলেন, বিএনপি যখন র্যাব সৃষ্টি করেছিল, তখন আমরাসহ আওয়ামী লীগ তার বিরোধিতা করেছিল। আবার সেই র্যাবই যখন বর্তমান সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমের ঘটনা ঘটিয়েছে, তখন জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন তার প্রতিবাদ করেছে, এখনো করছে। মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ডের পর সেটা আপাতত বন্ধ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তাই ওই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে কোনো যুক্তিতেই সমর্থন নয়, তাকে বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে।
সাননিউজ/জেএস