নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাচ্ছেন, এমন একটি গুঞ্জন এখন বিএনপির পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও ছড়িয়েছে।
খালেদা জিয়া ও তার গৃহকর্মী ফাতেমার যুক্তরাজ্যে যাওয়ার ভিসা কিছুদিন আগেই করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
কারামুক্তির শর্ত অনুযায়ী আপাতত খালেদা জিয়াকে বাসায় বসে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। প্যারালাইজড থাকায় বর্তমানে দুটি হাতই তাঁর প্রায় অকার্যকর।
আর এ কারণেই রাজনীতির তুলনায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত বিষয়েই দুই বছর ধরে গুরুত্ব দিয়ে আসছে তার পরিবার। গত ৪ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে আবেদন করা হয়, সেখানেও উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার আগ্রহের কথাই বলা হয়েছে। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে করা আবেদন এবং জামিনের জন্য আদালতে যুক্তিতর্কের সময়েও আইনজীবীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। উচ্চ আদালতে প্রতিবারই জামিনের আবেদন করা হয়েছে তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য।
কারামুক্ত হয়ে গত ২৫ মার্চ থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় থাকলেও খালেদা জিয়া সরকারের নজরদারির মধ্যেই রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। লন্ডনে থাকলেও তাঁর বিষয়ে নজরদারি থাকবে। তবে ওই সময় খালেদা জিয়া ইচ্ছা করলে দেশি-বিদেশি যেকোনো ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করতে পারবেন। কিন্তু বর্তমানে ফিরোজায় বিশেষ কোনো বৈঠক বা সাক্ষাৎ করতে হলে তা পুলিশ বা প্রশাসনকে জানিয়েই করতে হবে।
গত ১১ মে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ডেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা বলেন খালেদা জিয়া। ওই দিন আলাপের মধ্যে তারেক রহমানকেও যুক্ত করা হয়েছে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকে সন্দেহ করেন। ফলে সরকারি মহলে এ নিয়ে কিছুটা খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়। আর এমন তৎপরতার মধ্যেই খালেদা জিয়া নেতাদের সঙ্গে সব ধরনের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেন।
খালেদা জিয়ার লন্ডনে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তার ভাই শামীম এস্কান্দার জানান, ‘আমি ঠিক জানি না। এ ধরনের ব্যাপার থাকলে তো আমার জানার কথা।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে কিছু শুনিনি। তবে এটা তো ঠিক যে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা ভালো নয় এবং তার উন্নত চিকিৎসা দরকার।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, ‘ম্যাডামের বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে কিছুদিন আগে গুঞ্জন শুনেছি। এখন অবশ্য শুনি না।’
প্রবীণ আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের মতে, ‘ম্যাডাম ও তার পরিবার তো উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চাইবে। কারণ মুক্তির উদ্দেশ্যই ছিল উন্নততর চিকিৎসা, সেটা তো সফল হয়নি। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের মনোভাব তথা হিসাব-নিকাশের ওপর। সরকার চাইলে সব কিছু পারে।’
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানান, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে হলে শর্ত শিথিলের জন্য আমাদের কাছে আবেদন করতে হবে। সরকারের সম্মতি বা অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এ ধরনের কথা এখন আসছে কেন? তিনি তো আবেদন করেননি।’
সান নিউজ/ আরএইচ