সান নিউজ ডেস্ক: ডা. মুরাদ হাসান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলে যুক্ত ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন সাবেক ছাত্রনেতারা। পরে মুরাদ ছাত্রদল থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগে যুক্ত এর আগে সোমবার (৭ ডিসেম্বর) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সভায় এই তথ্য ফাঁস করেন৷ একদিন পর সেই সময়ের ছাত্রনেতারাও জানান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ছাত্রদল নেতাই ছিলেন ডা. মুরাদ৷
জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে বর্ণ ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্যের পর এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে অশালীন ফোনালাপের অডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় মুরাদকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সোমবার এই তথ্য জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের৷
তৎকালীন ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের জুন মাসে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পরপরই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের ৭১ সদস্যের কমিটির সভাপতি ছিলেন মাহবুব-উল কাদির ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইসাহাক৷ গণমাধ্যমকে ডা. ইসাহাক জানান, মুরাদ ছিলেন তাদের কমিটির প্রচার সম্পাদক৷
তিনি বলেন, ১৯৯৩ সালে এম-৩০ ব্যাচে মুরাদ হাসান এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং পরে মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রদলের কমিটির নেতারা সবাই ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যান৷ কিন্তু মুরাদ হাসান ক্যাম্পাসে থেকে যান এবং ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ছাত্রলীগে যোগদান করেন৷
নিশ্চিত করেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও তৎকালীন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মোতাহার হোসেন তালুকদার। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, মুরাদ হাসান ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে ছাত্রদল থেকে পদত্যাগ করার সময় মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন৷
তথ্যটি সে সময়ে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম রিপনও নিশ্চিত করেছেন৷ তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ডা. মুরাদ হাসান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ছাত্রদলের কমিটিতে প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পরে ছাত্রলীগে যোগদান করেন৷ ২০০০ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন৷
ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে আসার এই তথ্য প্রকাশের আগে রোববার থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েও মুরাদ হাসানকে পাওয়া যায়নি৷
এদিকে, তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মুরাদ হাসান ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ২০০১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন৷ ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে এম ফিল ডিগ্রি নেন৷
তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া জীবনী অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে জন্ম নেওয়া মুরাদ ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার ‘কার্যকরী সদস্য' ১৯৯৭ সালে ‘সাংগঠনিক সম্পাদক’ এবং ২০০০ সালে ‘সভাপতি’ নির্বাচিত হন৷
২০০৩ সালে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ‘কার্যকরী সদস্য’ নির্বাচিত হন মুরাদ৷ এ ছাড়াও মুরাদ জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ও সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের ‘কার্যকরী সদস্য’ এবং জামালপুর জেলা কমিটির ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন৷
জামালপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান তালুকদারের ছেলে মুরাদ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হন তিনি৷ পরে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মুরাদ৷ ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে তাকে দেওয়া হয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব৷
সান নিউজ/এমকেএইচ