নিজস্ব প্রতিবেদক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, আমি চ্যালেঞ্জ করি, সেখানে জিয়ার কোনো বডি নাই। ডিএনএ টেস্ট করে যদি জিয়ার মাজারে তাঁর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তাহলে আমি নাকে খত দিয়ে ক্ষমা চাইব।
সোমবার (৩০ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কেন্দ্রীয় সংসদের আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হত্যা রোধে করণীয় শীর্ষক এক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কথা বলেন।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ৩০ বছর অন্যান্যরা ক্ষমতা দখল করে ছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস আন্তর্জাতিক সম্মান, পরিচয়কে তুলে ধরতে পারি নাই।
সম্প্রতি রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার মাজারে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ থাকা-না থাকা নিয়ে বিতর্কের প্রসঙ্গ উঠে আসে এই আলোচনায়ও। আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা শুধু (বঙ্গবন্ধুর) আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার করতে পেরেছি। কিন্তু নেপথ্যে যারা ছিলেন, তাঁদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। তিনি বলেন,বিএনপি জিয়ার লাশের খোঁজ পেয়েছেন। তাহলে ছবি কোথায়? জিয়া হত্যার নিন্দা জানাই। জিয়া রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ব্যক্তি জিয়ার সঙ্গে আমার কোনো অভিযোগ নাই। কিন্তু প্রকৃত ইতিহাসের স্বার্থে এই সত্য সকলের জানা দরকার।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেওয়া সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, জিয়াকে ২২টা গুলি করা হয়েছে। পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। তিনি দেখেছেন। তাহলে অন্তত মুখের ছবি দেখান। জিয়ার লাশ পাওয়া যায় নাই। মানুষ ছিল, না কী ছিল—কেউ জানে না। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডিএনএ টেস্ট করে যদি জিয়ার মাজারে তাঁর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তাহলে আমি নাকে খত দিয়ে ক্ষমা চাইব। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, সেখানে জিয়ার কোনো বডি নাই। ১০ বছর আগে থেকে সংসদে বলেছি ওখানে জিয়ার কবর নাই। যদি পাওয়া যায়, আমি নাকে খত দিয়ে ক্ষমা চাইব।
জিয়ার মাজারে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ আছে কি নেই, তা নিয়ে বেশ বিতর্ক চলছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন। গত শনিবার জিয়ার মরদেহ নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে যখন জিয়াউর রহমানের দেহ তোলা হয়, তারপর তাঁর পোস্ট ময়নাতদন্ত করা হয়। ডা. তোফায়েল আহমেদ তাঁর মরদেহের পোস্টমর্টেম করেছিলেন। ২২টি বুলেট তাঁর শরীর থেকে বের করে নিয়ে এসেছেন তিনি। এর পর ঢাকায় তাঁর মরদেহ নিয়ে আসেন ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ। এটা আমরা সবাই স্বচক্ষে দেখেছি। আমরা দেখেছি, একটা কাচের কাসকেড ছিল। সেখান থেকে তাঁর দেহ দেখেছি। আজ এই ধরনের কথা বলার একটাই মাত্র উদ্দেশ্য। ইতিহাসকে বিকৃত করা, জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরিয়ে দেওয়া।
আজ সোমবার সেই বক্তব্যের জের টেনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, একটি অনুষ্ঠানে জিয়ার মুক্তিযোদ্ধা খেতাব বাতিল করার প্রস্তাব অনেকেই করেছেন। আমি সেখানে অতিথি ছিলাম। বলেছিলাম, বিএনপিকে বিনয়ের সঙ্গে বলছি—ব্যক্তিগত আক্রোশ নয়, ইতিহাসকে তার গতিতে চলতে দিন। ইতিহাসে রাজনৈতিক সব অপরাধীর বিচার করা হবে। সংসদ থেকে নকশা বহির্ভুত যা আছে, সেগুলো অপসারণ করা হবে। দারিদ্র্য, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে পারলে বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ হবে।
আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। অতিথি হিসেবে ছিলেন বীর বিক্রম মাহবুব উদ্দিন আহমেদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ পাটওয়ারী, আবু সাঈদ মিয়া, আবদুস সামাদ পিন্টু, অধ্যাপক সুজিত সরকার, মীর মোহাম্মদ আসালত প্রমুখ।
সাননিউজ/জেআই