নিজস্ব প্রতিবেদক: হেলেনা জাহাঙ্গীর নিজেকে সরকারি লোক দাবি করে বলেছেন, আমি সরকারি লোক, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২৫টি দেশ সফর করেছি। আমি কেন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে যাবো?
শুক্রবার (৩০ জুলাই) ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম রাজেশ চৌধুরীর আদালতে তিনি কথা বলেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গুলশান থানায় করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করলে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামিপক্ষে আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, যার সম্মান নষ্ট করা হয়েছে, শুধু তিনিই মামলা করতে পারবেন। অন্য কেউ এই মামলা করতে পারবেন না।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এজাহার দেখলে ২৫, ২৯ ৩২ ধারায় যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেখানে কোথাও কোনো উল্লেখ নেই, কখন কোথায় কীভাবে কার বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দেয়া হয়েছে। তার কোনো উল্লেখ নেই।
আসামি একজন সিআইপি, এই মামলায় রিমান্ড কী দরকার? রিমান্ডের কোনো যুক্তি নেই।
এ সময় বিচারক বলেন, মামলার ফরোয়ার্ডিংয়ে বলা হয়েছে, এই আসামি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মন্ত্রী, এমপি ও দেশের সম্মানিত নাগরিকদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করে সরকারের ভাবমূর্তি ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।
ফরোয়ার্ডিংয়ে আরও বলা হয়েছে, হেলেনা জাহাঙ্গীর সরকারবিরোধী কার্যকলাপ ও পরিকল্পনায় যুক্ত। এর সঙ্গে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা মহল জড়িত আছে, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। এই গোষ্ঠী কারা তা জানতে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ।
এ সময় হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, আমি সরকারি লোক, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২৫টি দেশ সফর করেছি। আমি কেন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে যাব?
এ সময় প্রমাণ হিসেবে একটি অডিও (মোবাইলের কলরেকর্ড) আদালতে উপস্থাপন করেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু। সেখানে শোনা যায় হেলেনা জাহাঙ্গীর বলছেন, কোনো মন্ত্রীকে গোনার সময় নাই।
শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন বিচারক।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানের ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসা থেকে দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান শেষে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র্যাব। এ সময় তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার দেখায়। পরে তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে র্যাব।
আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। এর আগে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, র্যাব সদস্যরা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শেখ শাহানুর রহমান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে কোর্টে পাঠানো হয়েছে। মাদকসহ অন্য যেসব মাল জব্দ করা হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে আরও একটা মামলা হবে। তবে সেটা প্রক্রিয়াধীন।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাত ৮টার পর হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশান-২ এর ৩৬ নম্বর রোডের বাসভবনে অভিযান শুরু করে র্যাব। দীর্ঘ চার ঘণ্টা অভিযান শেষে রাত ১২টার দিকে তাকে আটক করা হয় এবং পরে র্যাব সদরদফতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
শুক্রবার (৩০ জুলাই) দুপুরে এক ক্ষুদে বার্তায় তাকে গ্রেফতারের তথ্য জানায় র্যাব। ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। তার বাসায় বিপুল পরিমাণের মাদকসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র জব্দ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠনের পোস্টার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পোস্টারে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হেলেনা জাহাঙ্গীর আর সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মনিরের নাম উল্লেখ করা হয়। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক হিসেবে সাইফুল ইসলাম ইমনের ফোন নম্বর দিয়ে পদ প্রত্যাশীদের যোগাযোগ করতে বলা হয়। ওই পোস্টারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনার জেরে রোববার (২৫ জুলাই) আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
সান নিউজ/এফএআর