নিজস্ব প্রতিবেদক: কারফিউ জারি কোনো সমাধান নয়। এই লকডাউনে যদি আপনি সঠিকভাবে সাধারণ মানুষের অর্থের ব্যবস্থা করতে না পারেন এবং যদি তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে না পারেন তাহলে এই অপরিকল্পিত লকডাউন দিয়ে তো সঠিক সমাধান আনতে পারবেন না।
রোববার (১১ জুলাই) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব মন্তব্য করেন।
করোনা-বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির কারফিউ জারি করার পরামর্শের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের পরপর যে লকডাউনগুলো হয়েছে- সরকারি ছুটি, লকডাউন, কঠোর লকডাউন- তাতে সামাজিক দূরত্ব, শারীরিক দূরত্ব সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। লকডাউনে কি দেখা যাচ্ছে? মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে, বলা যায় যে, অনেকে খাদ্যের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, লকডাউনের লক্ষ্যটা হচ্ছে- মানুষকে মানুষের কাছ থেকে দূরে রেখে, দূরত্ব সৃষ্টি করে সংক্রমণটা প্রতিরোধ করা। সেটার জন্য তো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোথায় সেই সচেতনতা? খালি ধমক দিয়ে আর গরিব মানুষকে জেলের মধ্যে পুরে দিলে তো হবে না।
আমি পত্রিকায় দেখলাম, সাড়ে চার হাজার মানুষকে জেল দেয়া হয়েছে। এরা কারা? তারা সব সাধারণ গরিব মানুষ। তারা দিনে আনে দিনে খায়, হয়তো রিকশা চালায়, ঠেলাগাড়ি চালায়, হয়তো কোনো একটা রেস্টুরেন্টে চাকরি করে। এরা যখনই বেরিয়েছে তাদের ধরে নিয়ে গেছে। এমন কথাও বেরিয়েছে, বাবার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার আনতে গেছে সেখানে তাকে গ্রেফতার করার ফলে সেই বাবা অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন। এ অপরিকল্পিত ব্যবস্থার ফলেই আজকে এই ঘটনা ঘটছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজকে ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষ তারা কোনো রকমের সহযোগিতা পাচ্ছে না। ইনফরমাল সেক্টর তো এমনিতেই তারা ছোট ছোট পুঁজি নিয়ে কাজ করে। দুবার লকডাউনের ফলে এই ক্ষুদ্র মানুষগুলো তাদের পুঁজি হারিয়েছে, তারা নিঃস্ব হয়ে গেছে, পথে বসে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, কোথাও কোনো রকমের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ নেই, অক্সিজেন নেই, সিলিন্ডার নেই, বেড নেই- এগুলো চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি। ফলে আজকে করোনা পরিস্থিতি আক্রমণাত্মক হয়ে দেখা দিচ্ছে, একে সামাল দেয়া যাচ্ছে না। আপনি জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্স নিচ্ছেন, জনগণের কাছ থেকে সব ধরনের ভ্যাট নিচ্ছেন অথচ আপনি জনগণের জন্য কোনো ব্যয় করছেন না। কিসে ব্যয় করছেন? মেগা প্রজেক্টে ব্যয় করছেন যেটাতে এই মুহূর্তে দেশের প্রান্তিক মানুষগুলোকে বাঁচানোর কোনো পথ নেই।
করোনা মোকাবিলায় বিএনপির আপদকালীন কমিটি গঠনসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, উনারা সুনির্দিষ্টভাবে বলুক কোনটা কোনটা বাস্তবায়ন করেছেন। চর্বিত চর্বণ তো প্রতিদিন উনারা করছেন। তাদের সমস্যাটা হচ্ছে, তারা কোনো সমালোচনা শুনতে চান না। আমরা শুধু সমালোচনা করি না, পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের প্রস্তাবও দেই।
এই যে তাদের একলা চলো নীতি, দুর্নীতি করো নীতি, লুটপাট করো নীতি এটাই তো এই দেশটাকে, এই জাতিকে চরম বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে গেছে।
করোনা মোকাবিলায় সরকারের ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আবার ওয়ার্ড কমিটিতে দুর্নীতি শুরু হবে। ওখানে টাকা-পয়সা ভাগ করে নেবে আরকি। আমরা মনে করি, এটা ফিজিবল নয়।
সান নিউজ/এফএআর