চট্টগ্রাম ব্যূরো :
জীবন-জীবিকা রক্ষায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। আর এই বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন চসিক মেয়র, চট্টগ্রাম চেম্বারের ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী :
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে এ বাজেট নবমাত্রা যোগ করবে।
শুক্রবার (৪ জুন) সকালে বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারীর এই কঠিন সময়ে অর্থনীতির সক্ষমতা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রস্তাবিত বাজেট অত্যন্ত সহায়ক ও সময়োপযোগী। বাজেটে নানামুখী প্রস্তাবনাসমূহের সঠিক বাস্তবায়ন হলে দেশ অর্থনীতিতে অনন্য উচ্চতায় পৌছে যাবে। এ সময় চট্টগ্রামের মেগা প্রকল্পগুলোগুলো বাস্তবায়নে বরাদ্ধ রাখায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম :
বাজেটে করপোরেট কর হ্রাস ও দেশিয় শিল্পকে সুবিধা দেওয়ায় অর্থনীতিকে বেগবান করবে এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম চেম্বারের সব পরিচালকদের পক্ষে তিনি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, বাজেটে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং একই সাথে বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করার জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সময়োপযোগী। কৃষি খাতে ৪৮ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা এবং যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৫৯ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান অবশ্যই ইতিবাচক। তবে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সততা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি।
অন্যদিকে ব্যক্তিগত করদাতাদের ব্যবসায়িক টার্নওভার ০.৫ শতাংশের পরিবর্তে ০.২৫ শতাংশ। পাবলিকলি ট্রেডেড কো¤পানির করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২.৫০ শতাংশ, নন-পাবলিকলি কো¤পানির ৩২.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ এবং এক ব্যক্তি কো¤পানির ক্ষেত্রে ৩২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আয় না থাকলে স¤পদের উপর সারচার্জ পরিশোধের বিধান বাতিল করা হয়েছে এবং ন্যূনতম সারচার্জ বিলুপ্ত করা হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। তবে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করা হয়নি, আমরা এ সীমা বৃদ্ধি করার দাবি জানাচ্ছি।
চেম্বার সভাপতি বলেন, আমদানি পর্যায়ে সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামালের অগ্রিম কর ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ এবং সিমেন্ট এবং লৌহ জাতীয় পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর ৩ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ নির্ধারণ করায় নির্মাণ শিল্প এবং রপ্তানি উপকৃত হবে। মেইড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিংয়ের লক্ষে মেগা শিল্প উৎপাদনে এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে ২০ ও ১০ বছরের কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সাধারণ ভবনের অবচয় ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ, কারখানা ভবনের অবচয় ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে যা ইতিবাচক।
অন্যদিকে আইটি হার্ডওয়্যার উৎপাদনে ১০ বছরের কর অব্যাহতি, বাংলাদেশে অটোমোবাইল, থ্রি হুইলার, ফোর হুইলার উৎপাদনে এবং হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের পণ্য উৎপাদনকারী কো¤পানিকে কর অব্যাহতি প্রদান দেশিয় শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। দক্ষ মানবস¤পদ উন্নয়নে বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রদানে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানকে কর অব্যাহতি প্রদান শিল্পায়নে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের কাঁচামাল-উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে যা শিল্পায়নকে উৎসাহিত করবে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর উন্নয়ন ও টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে এই বিমান বন্দরের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। তবে বে-টার্মিনাল নির্মাণে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করা এবং চলমান মেগা প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৮ লেনে উন্নীতকরণসহ দ্রুতগতির ট্রেন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ঢাকার ন্যায় চট্টগ্রামেও স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি। ভ্যাট ফাঁকি, ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ দ্বিগুণের পরিবর্তে সমপরিমাণ এবং বকেয়া ভ্যাটের সুদহার বার্ষিক ২৪ শতাংশের পরিবর্তে ১২ শতাংশ করা ভ্যাট দাতাদের উৎসাহিত করবে।
চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বার সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী :
চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির প্রেসিডেন্ট মনোয়ারা হাকিম আলী ঘোষিত এ বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, নারী উদ্যোক্তাদের বার্ষিক আয়সীমা ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০ লাখ টাকা করা প্রস্তাবিত বাজেটের ইতিবাচক দিক। নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বাজেটে নানামুখী প্রস্তাবনাসমূহের সঠিক বাস্তবায়ন হলে দেশের নারীর অগ্রযাত্রায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এছাড়া মহামারী করোনায় সবচাইতে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত নারী উদ্যোক্তারা পুনরুজ্জ্বীবিত হবেন। অন্যদিকে দরিদ্র নারীদের ক্ষুদ্র বীমার আওতায় আনার প্রস্তাব তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের ক্ষমতায়নে সহায়ক হবে। এছাড়াও নারী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন, জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণ ও শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং নারীর মানবিক সক্ষমতা, অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুবিধা বৃদ্ধি, নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারীদের জন্য অবকাঠামো ও যোগাযোগ পরিষেবা বৃদ্ধি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার করার প্রস্তাব নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব নারীদের জন্য প্রস্তাবিত বিষয় সমূহ বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। স্বল্প শিক্ষিত দরিদ্র ও অসহায় নারীদের আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ ও আইটি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ অবশ্যই প্রসংশনীয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি খলিলুর রহমান :
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও জনগণের জীবন ও জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার সুচিন্তিত, জনকল্যাণমুখী ও সাহসী বাজেটের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান। বৈশ্বিক মহামারীর এই কঠিন সময়ে প্রস্তাবিত বাজেট অত্যন্ত সাহসী এবং সময়োপযোগী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ :
চট্টগ্রম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ স¤পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন যৌথ বিবৃতিতে বলেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রণোদনামূলক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়ায় চলমান সংকট মোচনে এই বাজেট একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসকল প্রকল্প উপহার দিয়েছেন সেগুলোর সফল বাস্তবায়ন সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন।
বাজেটে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন, কৃষিখাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে দুই নেতা বলেন, এই বাজেট গণমুখী এবং সমাজ ও জনকল্যাণের আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধির সোপান।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন :
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি'র আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত ৬ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট শুনতে ভালো লাগছে। কিন্তু সোয়া ২ লক্ষ কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। এটা চ্যালেঞ্জিং। এত বড় ঘাটতি বাজেট দিয়ে স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব নয়। এটি একেবারেই অবাস্তবায়নযোগ্য একটি কল্পনাপ্রসূত বাজেট। এটা কথার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষ করে এই মহাদুর্যোগকালে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ালেও দুর্নীতি আরো বেড়ে যাবে। বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কার্যকর সুশাসন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বস্তরে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই বাজেটে। এই বাজেট মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।
সান নিউজ/ আইকে