নিজস্ব প্রতিবেদক: ফিলিস্তিনের নিরীহ নাগরিকগদের উপর ইসরাইলী হামলা বিশ্ব মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অসলো শান্তিচুক্তি মোতাবেক দুই রাষ্ট্রের র্সাবভৌমত্ব ও জনগণের শান্তি নিশ্চিতকরণে জাতিসংঘের নেতৃত্বে কার্যকরী পদক্ষেপে গ্রহণ করতে হবে।
মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও মানবতার পক্ষের শক্তি হিসেবে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের স্বাধীন ও র্সাবভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিজয়ী হবার আগ র্পযন্ত বিএনপি সার্বিকভাবে তাদের পাশে থাকার দৃঢ় অংগীকার ব্যক্ত করে তিনি জানান, ইতিমধ্যেই আমাদের দল বিএনপি ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে যুদ্ধাহতদের জন্য ঔষধ সামগ্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোমবার (২৪ মে) বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারেসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব এসব কথা বলেন। কার্যত: চলমান ফিলিস্তিন-ইজরাইলের যুদ্ধাবস্থায় বিএনপির অবস্থান তুলে ধরতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ১০ মে থেকে গাজা উপত্যকায় টানা ১১ দিন ইসরায়েলের জঙ্গিবিমান থেকে ফেলা বোমায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে অবশেষে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উদ্যোগে এবং এই গ্রহের শান্তিপ্রিয় বিবেকবান মানুষের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও প্রত্যাশার প্রতি সম্মান জানিয়ে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষ নিরসনে প্রাথমিক পদক্ষপে হিসেবে “যুদ্ধবিরতি” র্কাযকর হওয়ায় সমগ্র বিশ্ববাসীর ন্যায় শান্তি ও গণতন্ত্রপ্রিয় বাংলাদেশের মানুষ গভীরভাবে স্বস্তি প্রকাশ করছে।
তিনি বলেন, মূলত গত ১৩ এপ্রিল পবিত্র রমজান মাসের প্রথম রাতে জেরুজালেমে ইসরাইলি পুলিশের দামেস্ক গেট বন্ধ করে দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সংকট ফিলিস্তিনের রাজধানী জেরেুজালেমের আল আকসায় পবিত্র জুমাতুল বিদাকে কন্দ্রে করে সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে যা চুড়ান্ত যুদ্ধের রূপ নেয়। এইবার ইসরাইলি জঙ্গি বিমান থেকে এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেসামরিক এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে ।
বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ মোতাবেক এতে ২৩২ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ৬৫ জন শিশু। হামলায় আহত ১ হাজার ৯০০ জন। জাতিসংঘ প্রকাশিত তথ্য মতে অন্তত ৭২ হাজার ফিলিস্তিনি গৃহহীন হয়েছে। বিশ্ব মানবতাকে লাগাতারভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ইসরাইলি জঙ্গি বিমানের নির্বিচার হামলায় নিজ ভূমির অধিকার ফিরে পেতে সর্বস্ব ত্যাগ স্বীকারে নিরন্তর লড়াইয়ে লিপ্ত স্বাধীনতাপ্রিয় ফিলিস্তিনি অধিকৃত উপত্যকার লাখ লাখ মানুষ ব্যাপকভাবে পানি, পয়োনিষ্কাশন সমস্যায় পড়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল ছাদখোলা কারাগার হিসেবে পরিচিত গাজায় বসবাসকারী ২০ লাখের বেশি মানুষের জন্য বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন সময়ে এ পরিস্থিতি সকল অমানবিকতার সীমাকে অতিক্রম করেছে।
একদিকে ইসরাইলী বিমান হামলা থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত ফিলিস্তিনি নাগরিকরা চোখের সামনে ধুলায় মিশে যেতে দেখে নিজ বসতবাড়ি, র্কমস্থল। পরিকল্পতিভাবে হাসপাতাল–সংলগ্ন সড়ক ও এলাকাগুলোয় বোমা ফেলা হয় যাতে আহতদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি পরিষেবার গাড়িগুলো চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।
বাস্তবিক অর্থে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের উপর হামলার একটা বিশেষ উদ্দশ্যে হচ্ছে ভয় ধরিয়ে দেয়া। যাতে তারা নিজেরাই তাদের জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে চলে যায় এবং নির্বিগ্নে ইসরাইলি দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়। এবারকার হামলাও ছিলো মূলত ফিলিস্তিনিদের পরিকল্পতিভাবে ভূমিচ্যুত করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ।
ফখরুল বলেন, ইসরাইল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার কাল থেকেই বিবদমান পক্ষ সমূহের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি লঙ্ঘন ও ভয় দেখিয়ে ভূমি দখলের অপসংস্কৃতি অনুসরণ করে চলেছে। ১৯৪৭ এর ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ১৮১(২) নং প্রস্তাবে (“কর্পাস সেপোরেটাম”) জেরুজালেম শহরকে বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছিল। যা প্রত্যাখ্যান করে ইজারাইল তার দখলদারী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখার জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত নীতিমালা লঙ্ঘন করে চলেছে। ১৯৬৭ সনে যার চরম বহিপ্রকাশ ঘটে।
র্সবশেষ, গাজায় অবস্থতি কাতারভিত্তিক আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা, র্বাতা সংস্থা এপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ধবংস করে দেয়া তারই উদাহরণ । স্বাধীন ফিলিস্তনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের প্রাণঘাতী বিমান বোমা হামলার সংবাদ প্রকাশকারী সাংবাদিকদের ‘চুপ করিয়ে’দিতেই ভয়ানক এই আঘাত বলে সাংবাদিকতার স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর এই হামলা।
সংকট মোচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বক্তব্যকে তাৎর্পযময় আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গাজার পুর্নগঠনে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণে বাইডেন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, ইসরাইলের পাশাপাশি ফিলিস্তনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই সংঘাতের ‘একমাত্র জবাব’। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দুই রাষ্ট্রই একমাত্র সমাধান। সংঘাতের মূল কেন্দ্র জেরুজালেম নগরে ‘আন্তসাম্প্রদায়িক লড়াই’বন্ধ করার প্রতি জো বাইডেনের উদাত্ত আহ্বান সংকট সমাধানে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মার্কিন গণতন্ত্রপ্রিয় নাগরিকদের দৃঢ় সর্মথনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।
বিএনপি ফিলিস্তনি-ইসরাইল সংকট নিরসনে এধরনের সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট মি. জো বাইডেন ও মার্কিন জনগনের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ,অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের প্রস্তাব এবং অসলো চুক্তির আলোকে ফিলিস্তনি-ইসরাইল সংকট সমাধানে “ইসরাইলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা” ঘোষণা বাস্তবায়নের পথ সুগম করাই হচ্ছে প্রধান চ্যালেঞ্জ। চলমান হত্যাকান্ডকে আর্ন্তজাতিক বিচার প্রক্রিয়ায় আনার উদ্যোগসহ দুই রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে অতিসত্ত্বর র্কাযকরী পদক্ষপে গ্রহণের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষ সমূহের প্রতি আহ্বান জানাই।
গভীর হতাশা, লজ্জা ও ক্ষোভের সাথে র্বতমান অবৈধ, ভোটারবিহীন নতজানু বাংলাদেশ সরকার ফিলিস্তনি নাগরিকদের উপর ইসরাইলী হামলার বিরুদ্ধে কেবলমাত্র একটি দায়সারাগোছের বিবৃতি প্রদানের মধ্যইে নিজেদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রেখেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ইসরাইলি বিমানের মুর্হুমুহু হামলা ও ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপে যখন ফিলিস্তিনের গাজা নগরী মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের পাসর্পোট থেকে ইসরাইল ভ্রমণের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যা হতাশ করছে গোটা বিশ্ববিবেককে। জনগনের ম্যান্ডেট বিহীন এই সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে দেশের জনগনের বদলে এখন সীমান্তের বাইরের ক্ষমতাবানদের তুষ্ট করতে ব্যস্ত বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।
তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, বাংলাদেশের জনগনের পক্ষ থেকে ফিলিস্তনি নাগরিকদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর স্বতস্ফর্ত সহযোগিতা প্রয়াসে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় র্সবাত্মকভাবে সহযোগিতা করতে কেবলমাত্র বাংলাদেশের পক্ষ থেকেই অংগীকারাবদ্ধ ছিলেন না, তিনি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ওআইসি, ন্যামসহ অন্যান্য মুসলিম দশেসমূহকেও ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে বিশেষ অবদান রেখেছেন। আলকুদস কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে তিনি নৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে শহীদ জিয়ার ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং পরর্বতীকালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দল ও সরকার থেকে শুরু করে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি সেই একই নীতি ও অবস্থান অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান মির্জা ফখরুল।
সাননিউজ/টিএস/