নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাত বাষির্কী উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দলটি। শনিবার (২২মে) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের নীতিনির্ধারণী কমিটি জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ৩০মে। ওইদিন সকাল ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশের মহানগর, জেলা, উপজেলার বিএনপি সকল কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১১টায় শেরেবাংলা নগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফাতেহা পাঠ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করবে দলটি।
২৯ মে বিকাল সাড়ে ৩টায় শহীদ জিয়ার জীবনের ওপর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ভার্চুয়াল আলোচনা করবে বিএনপি। এ আলোচনায় মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও সংযুক্ত হবেন।
৩০ মে মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌর কমিটিগুলো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে এবং দুস্থ মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য বিধি মেনে খাদ্য সামগ্রী ও বস্ত্র বিতরণ করা হবে।
দলের সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন তাদের সুবিধা অনুযায়ী জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বাষির্কী উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করে বিএনপি কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করবে। মহানগর জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি গুলোতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ব্যক্তিগতভাবে অথবা ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হবেন।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সদস্যগণকে অবহিত করেন মহাসচিব। সভায় বেগম খালেদা জিয়ার পরিপূর্ণ রোগমুক্তির জন্য দোয়া করা হয়।
এছাড়া সভায় বলা হয়, অনির্বাচিত আওয়ামী সরকারের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে বেআইনিভাবে ৫ ঘণ্টা আটক ও শারীরিক, মানসিক ভাবে নির্যাতন এবং তথ্য চুরির মামলা দিয়ে গ্রেফতার এবং জামিন না দেয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানো হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের অবিলম্বে বরখাস্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। আওয়ামী লীগ অতীত ঐতিহ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ গণমাধ্যম বিরোধী। ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে সকল পত্রিকা বন্ধ করে বাক স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা হরণ করে ছিলো। সেই সময়ে পত্রিকা বন্ধ হওয়ার কারণে অসংখ্য সংবাদকর্মী বেকার হয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস, আমার দেশ সহ অনেকগুলো পত্রিকা, চ্যানেল ওয়ান, ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টেলিভিশনসহ অনেক চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে। ত্রাশ ও ভীতির সন্ত্রাস তৈরি করে সত্য প্রকাশকে বাধাগ্রস্থ করছে। প্রকৃত পক্ষে, গণমাধ্যমকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে। মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, আবদুস সালাম, কনক সারওয়ার, মুনির হায়দার, ওলিউল্লাহ নোমানসহ অনেক বরেণ্য সাংবাদিক নির্যাতিত হয়ে কারাভোগ করেছেন। দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। সম্পাদক আসাদ, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমীন গাজীসহ অনেক সাংবাদিক মিথ্যা মামলায় এখনও কারাগারে। ১৯৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমকে শৃঙ্খলিত করেছিলো-একইভাবে মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, খুন, গুমের সাগর রুনিসহ প্রায় ৪২ জন সাংবাদিক হত্যা এই সরকারের মুক্ত সাংবাদিকতা বিরোধী ফ্যাসিষ্ট চরিত্র উন্মোচিত করেছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেই এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে বলে মনে করা হয়। সরকারের তথ্যমন্ত্রী গোয়েবলসীয় কায়দায় আবারও মিথ্যাচার করছে এবং চিরাচরিতভাবে কল্পিত ষড়যন্ত্রের কাহিনী প্রচার ও হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি স্মরণ করিয়ে দেয়, ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সকল পত্রিকা বন্ধ করে বাক স্বাধীনতা হরণ করেছিলো। অন্যদিকে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সকল পত্রিকা চালু করে কথা বলার স্বাধীনতা ও লেখার স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করেছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা আরও বিকশিত হয়েছিলো বিবিসি, সিএনএনসহ আন্তর্জাতিক চ্যানেল গুলো অনুমোদন পেয়েছিলো।
অফিশিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্ট ১৯২৩’র প্রয়োগ, ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টের মত নিবর্তন মূলক আইন প্রণয়ন মুক্ত সংবাদিকতাকে ধ্বংস করছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সংকুচিত করেছে। অবিলম্বে সকল প্রকার কালো আইন বাতিলের দাবী জানানো হয় এবং আসাদ, রুহুল আমিন গাজী ও রোজিনা ইসলামসহ সকল আটক সাংবাদিকদের মুক্তির দাবী ও মামলা প্রত্যাহার দাবী জানানো হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে সকল বিভক্তি ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য সাংবাদিকদের আহ্বান জানানো হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি অভিযোগ করে, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের টীকা সংগ্রহে সরকার শুরু হতেই দুর্নীতি, অযোগ্যতার কারণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে চুক্তিকৃত টীকা না পাওয়ায় এবং অন্যান্য উৎসগুলোর সঙ্গে চুক্তি না করায় টীকা প্রাপ্তি একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জনগণের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। রাশিয়ায় ও চীন থেকে টীকা প্রাপ্তিও স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের বিলম্ব ও অযোগ্যতার কারনে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খোদ পররাষ্ট্র মন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এর জন্য দায়ী করেছেন। আমরা করোনা আক্রমনের শুরু থেকেই বিকল্প উৎস সন্ধান এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছিলাম। ভারতের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহভাবে খারাপ হওয়া এবং ব্লাক ফাংগাস রোগের মহামারী আকার ধারণ করায় জনগণের মধ্যে প্রচন্ড হতাশা ও ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে এই বিষয় গুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং টীকা প্রাপ্তির রোডম্যাপ জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ব্যবস্থায় ব্যর্থতায় সরকারের এখনই পদত্যাগ করা উচিত। টীকা প্রাপ্তি সংক্রান্ত বিষয়টির সকল দায় সরকারকেই নিতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি জেরুজালেম ও গাজায় ইসরাইলী বিমান আক্রমনে শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু হত্যার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে তীব্র নিন্দা জানায়। বিএনপি ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্টের নিকট ফিলিস্তিনী জনগণের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবীর সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করে ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্টকে পত্র পাঠিয়েছে এবং আবারও দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নীতিকে সমর্থন জানিয়েছে বলে জানায় বিএনপি।
সাননিউজ/টিএস/