প্রধান প্রতিবেদক : সরকারের সিদ্ধান্তের পরেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার প্রক্রিয়া নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়াটা পুরোপুরিভাবে নির্ভর করবে সরকারের সিদ্ধান্তের পরে। কারণ সরকারের সিদ্ধান্তের আগে কোনেটাতেই কোনো প্রোসিড করা সম্ভব নয়। এসময় তিনি জানান, আক্রান্ত হওয়ার ২৭দিন পর গতকাল শনিবার করোনা নেগেটিভ হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য কখন কোথায় খালেদা জিয়াকে নেয়া হবে প্রক্রিয়াটা জানতে চাইলে রোববার (০৯ মে) দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ২৭ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। গত ৩ মে হঠাৎ তিনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে তাকে করোনারী কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। প্রতিদিন তাকে কয়েক লিটার অক্সিজেন নিতে হয়। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে।
মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৬ মে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জমা দেন।
করোনারী কেয়ার ইউনিটে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে আপনারা (গণমাধ্যম) ম্যাডামের সংবাদ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন এবং আমরাও যতটুকু সম্ভব আপনাদেরকে সে বিষয়ে অবহিত করার চেষ্টা করছি। লেস্টেস্ট যে খবর কিছুক্ষণ আগে আমি হাসপাতাল থেকে নিয়েছি- আল্লাহর অশেষ রহমতে উনার কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। তার যে সমস্ত মূলত দেখা দিয়েছিলো সেই সমস্যাগুলো ক্রমান্বয়ের উন্নতির দিকে আসছে।
তিনি বলেন, কিন্তু এখনও তার যে সমস্তগুলো, মূল সমস্যাগুলো আছে-আপনারা জানেন যে তিনি অনেকগুলো অসুখে ভূগছেন দীর্ঘকাল থেকে, দীর্ঘকাল কারাভোগ করা এবং কোনো চিকিৎসা না হওয়ার কারণে সেগুলো এগ্রোভেট করেছে, বেড়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই বয়সে তার সেগুলো বেশ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফখরুল বলেন, আমাদের মেডিকেল বোর্ড যারা কাজ করছেন তারা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সার্বক্ষনিক তাকে লক্ষ্য রাখছেন, তার চিকিৎসা করছে এবং তারা খুব উদ্বেগের সঙ্গে এই চিকিৎসাটা করছেন। তবে আশা কথা হচ্ছে যে, সি ইজ শোয়িং সাইন অব প্রোগ্রেস। যদিও এখনও তাকে বিভিন্নরকম চিকিৎসাগত পদ্ধতিগুলো সেগুলো কিন্তু একেবারে সিসিইউ (করোনারী কেয়ার ইউনিট) ছাড়া কোথাও সম্ভব না এবং সেখানে সিসিইউর যা যা দরকার সব কিছুই তারা করছেন।
আমরা পরম করুনাময় আল্লাহতালার কাছে দোয়া করছি আল্লাহতালা যেন তাকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করে তোলেন। পাশাপাশি দেশবাসীর কাছে দলের চেয়ারপারসনের রোগমুক্তির জন্য দোয়া চান বিএনপি মহাসচিব।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মূলত গত ৮ মে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আলোচনার বিষয় এবং সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
বৈঠকে ভ্যাকসিন বা টিকা সংগ্রহে অনিশ্চিয়তা এবং এক্ষেত্রে একটি উৎস্য থেকে টিকা নেয়া নিয়ে দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতার কঠোর সমালোচনা করা হয় বলে জানান ফখরুল। একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, লকডাউনের নামে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার, সরকারের আপদকালীন খাদ্যমজুদ কমে যাওয়ার ঘটনায় সরকারের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পশ্চিমবাংলায় বিধান সভার নির্বাচনে ‘সাম্প্রদায়িকতাকে পরাজিত করে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক শক্তিকে বিজয়ী করায় পশ্চিমবাংলার জনগণ এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা মুখ্যমন্ত্রী বন্দোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানানো হয়।
লকডাউনে নিম্ন-আয়ের মানুষের দুর্ভোগ লাগবে ‘ওএমএস’ চালু ও বিনা মূল্যে ‘খাদ্য বিতরণে’র দাবি জানানো হয়েছে বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার লকডাউন ঘোষণা করলো, তা বাস্তবায়নে কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা দেখলাম যে, গণপরিবহনে, ফেরিতে হাজার হাজার উঠার চেষ্টা করছে, যাচ্ছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় শপিংমলগুলো মানুষে মানুষে বোঝাই। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করবার জন্যে যে প্রচেষ্টা দরকার, যে উদ্যোগটা দরকার সেই উদ্যোগটা নিতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে অথবা নিতে চায় না–এটাই আমাদের কাছে মনে হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন একটা অবস্থাটা বিপদজনক অবস্থায় এসছে। এটাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে তাদের সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আশংকা করে বলছেন, ঈদের পরে একটা ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।
প্রবাসী শ্রমিকদের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে যারা দেশে এসেছেন তাদের মধ্যে ৭৭ ভাগ তারা একেবারেই কর্মহীন, তারা দুরাবস্থার মধ্যে রয়েছেন। আমরা কিন্তু ২০২০ সালে যখন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যে প্রণোদনার প্রস্তাব তুলে ধরেছিলাম সেখানে আমরা প্রবাসী শ্রমিকদের জন্যে অর্থ বরাদ্ধের কথা বলেছিলাম। প্রবাসী শ্রমিকরা আমাদের রেমিটেন্স আয়ের একটা বড় খাত। এক্ষেত্রে চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসির সরকার দলীয় দেড়‘শ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ প্রদানের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসলে কি কোথাও কোনো জবাবদিহিতা আছে, আসলে কোথাও আইন আছে, আসলে কি এই সরকার তারা কি কোনো সুশাসন দিতে পারছে, কোনো সেক্টারে কোনো জায়গায় কোনো জবাবদিহিতা নেই। যার ফলে গোটা জাতি আজকে বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েছে এবং এদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার নিয়ে সরকারের কিছু মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ‘আপত্তিকর ও বিদ্রোপাত্মক’ বক্তব্যের নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
সাননিউজ/টিএস/