নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের সমালোচনাকারী দুস্থ সাংবাদিকদের জন্যও কল্যাণ ট্রাস্টের সহায়তা উন্মুক্ত বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার (৪মে) রাজধানীর কাকরাইলে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট হতে ২০২০-২১ অর্থবছরের সহায়তা চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, সচিব খাজা মিয়া বক্তব্য রাখেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল মজিদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বিকাশ নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম যে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে, উন্নয়নশীল দেশের জন্য তা নজিরবিহীন। দেশের স্বার্থে, বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়া ও রাষ্ট্রের বিকাশের স্বার্থে এটি প্রয়োজন, সে বিশ্বাস নিয়েই আমরা কাজ করছি।
যে সমস্ত সাংবাদিক আমাদের বিরোধিতা ও সমালোচনা করেন, তাদের জন্যও এই ট্রাস্টের সহায়তা উন্মুক্ত, বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র সবার জন্য। যিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করেন, তিনি যদি দু:স্থ হন, আমাদের নীতিমালার মধ্যে পড়েন, এই সহায়তা তার জন্যও উন্মুক্ত এবং এটি আমরা বাস্তবায়ন করেছি।
তথ্যমন্ত্রী এসময় তার উদ্যোগে রমজানের পূর্বে দেয়া করোনাকালীন বিশেষ বরাদ্দ ২ কোটি টাকা ঈদের আগে সাংবাদিকদের মাঝে বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান।
গণমাধ্যম নিয়ে বিএনপি'র অবস্থান প্রসঙ্গে ড. হাছান বলেন, বিএনপর পক্ষ থেকে নানা সমালোচনা করা হয়, কেউ কেউ বিবৃতি দেয় আবার কেউ কেউ জাতিসংঘের কাছে চিঠি লেখে। সেই চিঠি লেখা আর বিএনপির বিবৃতি আসলে একসূত্রে গাঁথা ও এগুলো বৃহত্তর রাজনীতির একটা অংশ ছাড়া কিছু নয়।
বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়ার করোনা চিকিৎসা প্রসঙ্গে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, একজন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, আমি তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। করোনাকে পরাভুত করে তিনি আবার সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে যান, এটিই মহান স্রষ্টার কাছে আমার প্রার্থনা।
একইসাথে বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ড. হাছান বলেন, করোনার চিকিৎসা সব দেশে একইরকম এবং আমাদের দেশের চিকিৎসা অনেক ভালো। তাই করোনার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়।
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান তার বক্তৃতায় সাংবাদিকদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের একাগ্রতার কথা তুলে ধরেন। সচিব খাজা মিয়া এ আয়োজনের জন্য সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টকে ধন্যবাদ জানান।
এদিন সহায়তা প্রাপ্তদের মধ্যে ৩০ জনের হাতে চেক হস্তান্তর করেন অতিথিবৃন্দ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০০ জন সাংবাদিক ও সাংবাদিক পরিবারের সদস্যকে ২ কোটি ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদানের কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছে ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ।
২০১৪ সালের ৮ জুলাই গেজেটে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৪ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৯৬ জন সাংবাদিক ও সাংবাদিক পরিবারের সদস্যকে ১কোটি ৪০ লক্ষ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা ২৩১ জনকে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা ৩০৩ জনকে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা ৩৩৯ জনকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ কোটি ৬৯ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা ১৯৯ জনকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনাকালীন বিশেষ অনুদান হিসেবে ৩ হাজার ৩৩৫ জনকে ১০ হাজার করে ৩ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা দেয়া হয়। সবমিলে গত অর্থবছর পর্যন্ত ট্রাস্ট ৪ হাজার ৬৪০ জন সাংবাদিক ও সাংবাদিক পরিবারকে ১৪ কোটি ৭ লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের তহবিলে সীডমানি হিসেবে জমা হয়েছে ৪৩ কোটি ৮ লক্ষ ২৭ হাজার ৮১ টাকা। এছাড়াও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সাংবাদিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রাস্টকে ১০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছেন।
সাননিরউজ/এমআর/আরআই