নিজস্ব প্রতিবেদক: একটা সুষ্ঠু জীবন-জীবিকার জন্য আন্দোলন করা দরকার বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পুলিশের গুলিতে শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে চট্রগ্রামে বাঁশখালীতে শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন ৮ সদস্য টিমের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এতে বক্তব্য রাখেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য এ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও নাগরিকবৃন্দ বক্তব্য ও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী, ডাকসুর সাকে ভিপি নূরুল হক নূর, লেবার পাটির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণ দলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, গণ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, রাষ্ট্রচিন্তার দিদার ভূইয়া এবং অধ্যাপিকা দিলারা চৌধুরী, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, অধ্যাপিকা রেহনুমা আহমেদ, কবি হাসান ফকরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদ
প্রেসিডিয়াম সদস্য আকতার হোসেন, ফরিদ উদ্দিন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সাধারন সম্পাদক শামসুল আলম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সৈকত আরিফ ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ। জুমে বক্তব্য রাখেন, ড. রেজা কিবরিয়া, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাশঁখালীর ঘটনায় একজন সাহসী বিচারপতির নেতৃত্বে একটি সাহসী বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার সঠিক চিত্র বের করে আনতে হবে। তিনি বলেন, যারা এই দেশ গড়েছেন, যে কৃষক খাবার যোগান দিয়েছেন, যে শ্রমিক উন্নয়ন দিয়েছে তারা আজ নির্যাতিত। জনগণ যখন কথা বলতে পারে তখন বোঝা যায় কেমন স্বাধীনতা আছে। ৭৪ এ দুর্ভিক্ষে ৩ লক্ষ লোক মারা গিয়েছে। মানুষ তখন না খেয়ে ছিল৷ আজ মানুষ অনাহারে নেই তবে অর্ধাহারে আছে৷
তিনি বলেন, বাঁশখালীতে ১৮ বছরের একটি ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। বিধবা মা তাকে কষ্ট করে মানুষ করেছিল। পুলিশ মেরেছে নাকি, গুন্ডা বাহিনী গুলি করে মেরেছে কেউ বলেনি। এমন কি পুলিশও কথা বলতে ভয় পায়।
দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, আমাদের আর সময় নেই। রাস্তায় না নেমে, আন্দোলন না করে এই মাফিয়া রাষ্ট্রের স্থাপনাটাকে শক্ত করে দিচ্ছি। চলেন সবাই মিলে রাস্তায় নামি। সাহস করে রাস্তায় নামতে হবে। দাবি পূরণ না হলে ফিরবো না। পরিবর্তন চাই, পরিবর্তন হবেই। এভাবে দেশ চলবে না। কেউ বিচারের বাইরে থাকতে পারবে না। আন্দোলন করা দরকার একটা সুষ্ঠু জীবন জীবিকার জন্য।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বন্দুকের গুলি দিয়ে কোন রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না। আপনিও পারবেন না। ভালো হয়ে যান। সারা পৃথিবীকে জানানো দরকার আমরা মাফিয়া রাষ্ট্রে আছি।
সংবাদ সম্মেলনে বাঁশখালীর সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ১৭ই এপ্রিল বাশখালীর কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে ৭ জন নিহত ও শতাধিক আহত। যখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয় তখন বলা হয়েছিল টেক্সটাইল মিল হবে। পরবর্তীতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয় স্থানীয় জনগণের আন্দোলন উপেক্ষা করে। সেখানেও হামলা হয়। অর্থাৎ স্থানীয়ভাবে সেখানে আগে থেকেই নানান জটিলতা আছে৷ তিনি বলেন, ১৬ এপ্রিল শ্রমিকরা আন্দোলন করে। মার্চ মাসের বকেয়া বেতন, রোজার মধ্যে ৮ ঘন্টা কর্ম ঘন্টা, জুমার নামাজের সময়, স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেটের দাবিতে।
মালিকদের দাবি সেখানে কর্মরত চাইনিজদের বাড়ি আক্রমণ করতে যাওয়ার কারণে গুলি করেছে পুলিশ। শ্রমিকদের দাবি পুলিশ নিজেই নিজের গাড়িতে আগুণ দিয়েছে।
গণসংহতি আন্দোলনের এ নেতা বলেন, ওখানে শ্রমিক নিয়োগের সিন্ডিকেট আছে৷ স্থানীয় প্রভাবশালীদের টাকা দিয়ে কাজ পেতে হয়। সরাসরি কোম্পানি শ্রমিক নিয়োগ না দিয়ে সাব-কন্ট্রাক্ট দেয়া হচ্ছে। ফলে শ্রমিকরা অধিকার বঞ্চিত হয়। সাধারণ শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে তাদের ন্যায় সঙ্গত দাবি মেনে নেয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু পুলিশ ও গুন্ডা বাহিনী দিয়ে গুলি করে শ্রমিকদের হত্যা করা হয়েছে।
নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে ৭ দফা দাবী উপস্থাপন করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু । এর মধ্যে রয়েছে, বাঁশখালীর গন্ডিমারায় সংঘটিত পুলিশী হত্যাকান্ডের বিশ্বাসযোগ্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নিহত এবং আহত শ্রমিকদের প্রকৃত তালিকা তৈরী করতে হবে। সংবাদ মাধ্যমে এ ৭ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ আছে নিহতের সংখ্যা এর চেয়ে বেশি হবে। প্রত্যেক নিহত শ্রমিক পরিবারকে এক জীবনের আয়ের সমান / নূন্যতম ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরন দিতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসা এবং ক্ষতিপূরন দিতে হবে। হত্যা করলো পুলিশ এবং পুলিশের সাথে থাকা হেলমেন্ট বাহিনী। অথচ ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের নামেই মামলা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। শ্রমিক নিয়োগে কায়েমী স্বার্থের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে। শ্রমিকদের সরাসরি নিয়োগ পত্র, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারসহ অন্যান্য আইনী অধিকার দিতে হবে। নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া মানতে হবে। শ্রমিদের ছাঁটাই করা চলবে না। শিল্প-কারখানায় শ্রমিদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। হত্যা খুন-পুলিশ হয়রানী বন্ধ করতে হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিংবা শিল্প কারখানা স্থাপনে প্রকৃতি এবং পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফত বলেন, সেখানে আমরা একটি ভয়াবহ চিত্র দেখেছি। ৭১ এও এমন অবস্থা ছিল। সবাই কথা বলতে খুব ভয় পায়। পুলিশ বলেছে আমরা গুলি করিনি। অথচ শ্রমিকরা বলছে হেলমেট ধারী পুলিশের ড্রেস পরা কিছু লোক গুলি চালিয়েছে।
সাননিউজ/টিএস/আরআই