প্রধান প্রতিবেদক : করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাতের বেহাল অবস্থা তুলে ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি।
রোববার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান।
সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই জনগন টিকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে এতো বড় একটা বৈর্শ্বিক মহামারী, এতো বড় একটা বিপর্যয়, সেই বিপর্যয়ের মধ্যে সরকার শুধু ভুল সিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্তগুলোর পেছনে তাদের আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলো নেয়ার ফলে জনগন আজকে টিকা পাচ্ছে না বা আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এটা একটা অপরাধমূলক কাজ। এই অপরাধমূলক কাজের জন্য তাদেরকে (সরকার) বিচারের সম্মুখীন হতে হবে ভবিষ্যতে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা বহুবার কথা বলেছি। সরকার তখন কোনো কর্ণপাতই করেনি। আমরা তখনই বলেছিলাম যে, শুধুমাত্র ভারত থেকে ভ্যাকসিন না নিয়ে এসে একই সঙ্গে আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা এবং তাদের কাছ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের ব্যবস্থা নেয়া। তিনি বলেন, আজকে কী অবস্থা দাঁড়িয়েছে? শুধুমাত্র ভারতের কাছ থেকে একজন ব্যক্তিকে সুবিধা দেয়ার জন্য সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে ভ্যাকসিনের যে ব্যবস্থা করেছিলো সেই ব্যবস্থা একদম ভেঙে পড়েছে। এখন নতুন করে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করেছে। এটা সংগ্রহ করতেও তো লেগে যাবে ৪/৫/৬ মাস। আজকে থেকে প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬০ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছেন-এটা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে। প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ করার মানেই হলো টিকা আর নেই।
ফখরুল বলেন, যেখানে সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করে হার্ড ইউমিনিটি আনা প্রয়োজন। সেখানে আজকে সরকারের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা, দুর্নীতি এবং তাদের প্রোফিট তৈরি করার যে মানসিকতা, সেই সঙ্গে নিজেদের লোকগুলোকে আর্থিকভাবে সুবিধা পাইয়ে দেয়ার জন্য দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে গোটা জাতিকে আজকে বিপদগ্রস্থ করে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, যেটা আমরা মনে করি যে, ক্রিমিনাল অফেন্স এবং এই একটা কারণেই আজকে এই সরকারের পদত্যাগ করা উচিত এবং তার চলে যাওয়া উচিত।
চলমান লকডাউনে ‘দিন আনে দিন খায়’ দরিদ্র নিম্ন আয়ের মানুষজনকে সরকার কোনো সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের দায়িত্বটা কী? প্রয়োজনে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যদি এসব মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে না পারে তাহলে তারা কোন কাজটা করছে। একটা কাজ করছে- ভিন্নমতকে দমন করছে এবং একই সঙ্গে দুর্নীতি করছে, দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অবিলম্বে দুঃস্থ মানুষ যারা দিন আনে দিন খায় তাদেরকে আর্থিক প্রণোদনার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। আজকে আবারো সেই আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব জানান, গত ২৪ এপ্রিল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের চালের মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়া এবং ভারত থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত বলে সভা মনে করে। ভ্যাকসিনের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে অবিলম্বে মূল্য পরিশোধিত ভ্যাকসিন সরবারহের জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে। বর্থ হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, পাশ্বর্বতী দেশের মতো আমরাও এদেশে আশঙ্কা বরাবরই করছি। এই সরকারের চরম ব্যর্থতা। কোভিড মোকাবিলা করতে গিয়ে আমরা জানি, সমস্যা আছে,এখানে জনসংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু ন্যুনতম যে আন্তরিকতা। আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন আন্তরিকতাটা কোথায়? এই ভ্যাকসিন আনার ক্ষেত্রে চরম দুর্নীতি করেছেন, ভ্যাকসিন আনার ক্ষেত্রেও একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকে যিনি তাদের সঙ্গে সংযুক্ত তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে। যার ফলে চরম বিপর্য্য় ঘটলো।
ফখরুল বলেন, অন্যদিকে হাসপাতালগুলোতে যে কান্ড-কারখানা হয়েছে, সেই কান্ড-কারখানাগুলোতে আপনারা জানেন কিভাবে এগ্রিমেন্ট হয়েছে, কিভাবে ফলস রিপোর্ট দেয়া হয়েছে, কয়েকদিন আগে পত্রিকায় এসেছে ৯৪০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে কয়েকটি হাসপাতালে। এটা তো তাদের চরম ব্যর্থতা। কয়েকদিন আগে বলেছি, এয়ারপোর্টে দশমাস ধরে পড়ে থাকলো করোনার চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, সেগুলো ছাড় করতে পারেনি, হাসপাতাল উধাও হয়ে গেলো, সেখানে আবারও পয়সা মারতে নতুন করে হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে। এই সরকার তো জনগনের সরকার নয়, জনগনের প্রতি তাদের কোনো দায়বন্ধতা নেই। মহাসচিব বলেন, লকডাউন পরিস্থিতিকে সরকার লেজে-গোবরে করে ফেলেছে। তারা নিজেরাও জানে না কি করবে, কী করবে না। গতবার যেমন পুলিশ বাহিনী, একসময় সামরিক বাহিনীও রাস্তায় নেমেছিলো, কন্ট্রোল করছিলো। দেখুন এবার কিন্তু লকডাউন বাস্তবায়ন করার জন্য পুলিশ বাহিনী ছাড়া আর কেউ নেই। পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে থেকে বলছে যে, আমরা অসহায়। কি করব বলুন? কিছু নিয়ন্ত্রণ করার তো উপায় নেই। দ্বিতীয় দিন থেকে অসংখ্যক গাড়ি নেমেছে। ঢাকা শহরে কেউ বলবে না লকডাউন আছে? তিনি আরও বলেন, সরকারের চরম ব্যর্থতা। বাংলাদেশ করোনা খাতে তাদের জিডিপির এক দশমিক তিন ব্যয় করছে। আফগানিস্তানও জিডিপির ২% এর উপরে ব্যয় করছে। এটাকে কি বলে? এটা বলে যে সরকারের জনগনের প্রতি কোনো দায়বন্ধতা নেই। তারা তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করছে, তারা বিভিন্ন দেশে বাইরে বাড়ি-ঘর তৈরি করছে এবং করোনাকালে স্বাস্থ্যখাতে তারা ২/৩ শ কোটি টাকা মালিক হয়েছে।
সান নিউজ/টিএস/বিএস