নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের আড়াই কোটি দরিদ্র পরিবারের মধ্যে সরকারি হতবিল থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের খাদ্য সরবাহ করতে সরকারকে আহ্বান করেছেন গণস্বাস্থ্যে প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, দেশের সোয়া দুই কোটি পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। এর মানে হচ্ছে প্রতি পরিবারে সোয়া ৪ টাকা করে পাবে। সোয়া ৪ টাকা দিয়ে রমজান মাসে কী খেতে পারেন? এই জাতীয় মশকরা করছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। আজ উনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার যে এই মশকরার দিন ফুরিয়ে আসছে।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত ‘লকডাউনে মানুষের হাহাকার বন্ধে-ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছা ‘ নাগরিক প্রতীকি অবস্থান কর্মসূচীতে তিনি এ আহ্বান করেন। লকডাউনে মানুষের হাহাকার বন্ধে- ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছানোর দাবিতে এ অবস্থান কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, অবস্থা প্রতিদিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে একটা সুখবর আছে তা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী সুস্থ আছেন। উনার ইবাদতের ফল দিয়েছেন, উনি ভালো আছেন বলেই আজ কৌতুক করছেন, মশকরা করছেন। সব ধরনের গবেষণা বলেছে যে বাংলাদেশ দরিদ্র পরিবার সোয়া ২ কোটি অতিক্রম করেছে। এই সোয়া দুই কোটি পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। এর মানে হচ্ছে প্রতি পরিবারে সোয়া ৪ টাকা করে পাবে। সোয়া ৪ টাকা দিয়ে রমজান মাসে কী খেতে পারেন? এই জাতীয় মশকরা করছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। আজ উনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার যে এই মশকরার দিন ফুরিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, আপনি সাড়ে ১০ কোটি টাকা দান করে ভিক্ষা দিচ্ছেন কাকে? যার টাকা তাকেই। আপনার ঘোষণা অনুযায়ী আপনার (সরকার) তহবিলে আছে ৪৩ বিলিয়ন ডলার। কোনো চিন্তাভাবনা না করে আড়াই কোটি দরিদ্র পরিবারের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার খাদ্য সহায়তা দেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আরেকটা কথা আমি বলতে চাই; আমাদের যত রাজনীতিবিদ আছেন, সে বিএনপি হোক, কমিউনিস্ট পার্র্টি হোক, বাসদ হোক; সবাই মিলে চেষ্টা করলে বাংলাদেশ এক লক্ষ ধনী পরিবার, ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সাত দিন চেষ্টা করলে ১০ কোটি টাকা উঠাতে পারি না? যারা মুক্তিযুদ্ধের সুবিধা নিয়ে, বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে কোটি কোটি টাকা মালিক হয়েছেন তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই প্রধানমন্ত্রীর মশকরা বিপরীতে আপনারা যদি সাহায্যে না নামেন তাহলে জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।
তিনি বলেন, সরকারের খামখেয়ালীপনার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। ডাকাতের সরকার কখনো জনগণের কথা ভাবে না। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জনগণ জিতবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। কর্মসূচিতে বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ড. রেজা কিবরিয়া, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, ইশতিয়াক আজিজ উলফত ও সাদেক খান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. দিলারা চৌধুরী, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা রেহনুমা আহমেদ, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু ও ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, নারীর জন্য সুশাসনের নির্বাহী পরিচালক রুবি আমাতুল্লাহসহ, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভূইয়া প্রমুখ।
রিক্সাচালক ও বাঁশখালীর শ্রমিকদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা করে মাহামুদুর রাহমান মান্না বলেন, এই সরকারের কোন মূল্যবোধ নেই। দরিদ্র পরিবারের জন্য মাত্র ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশের আহ্বান জানান। পাশাপাশি ৪৫ লক্ষ পরিবারের নিকট খাদ্য সহায়তা পৌছানোর স্পষ্ট রূপরেখা জনগণের সামনে উন্মোচনের দাবি করেন। দাবি না মানলে ঈদের পর সরকারের সাথে পাঞ্জা লড়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন তিনি।
করোনা মোকাবিলায় দরিদ্র পরিবারের খাদ্য নিশ্চয়তা প্রদানের লক্ষ্যে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার আহ্বান জানান অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া। ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দকে বাস্তবসম্মত দাবি করে তিনি করোনা মোকাবিলায় প্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থার অনুদানকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, লকডাউন ঘোষনার সাথে সাথে যে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে তা মেনে নেয়া যায় না। আমরা সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নিবো না। জনগণের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতি রেখেই সরকারকে সকল সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
গণ সংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক জোনায়েদ সাকি লকডাউনকে গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে তার বক্তব্যে বলেন, সম্মান করেই বলছি বাংলাদেশে লকডাউন দিতে হলে মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করে দিতে হবে। সেটা না করে লকডাউন দেয়া প্রতারণা। করোনা সংক্রমণ কমানোর কোন বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ সরকারের নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তথাকথিত লকডাউন জনগনের দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাজ করতে হচ্ছে কিন্তু তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে না।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এদেশের এই পরিস্থিতিতে কবি, সাহিত্যিক, লেখক সহ শিল্পমনস্ক ব্যক্তিদের নীরবতা ভেঙে সরব হবার আহ্বান জানান। দেশের অর্থনৈতিক খাতে বিপুল দুর্নীতির মধ্যে দরিদ্র পরিবারের জন্য মাত্র ১০ কোটি টাকার বরাদ্দকে তিনি হাস্যকর দাবি করেন।
সাননিউজ/টিএস/