নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার লকডাউনের সুযোগে বিএনপি ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপর ক্র্যাকডাউন চালাচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের জনগণ ভোটারবিহীন এই সরকারের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য বিরোধীদলের ওপর এই নীপিড়নকে কখনও মেনে নেবে না। বিএনপি মনে করে এই করোনা কালে মানুষের জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গত শনিবার (১৭ এপ্রিল) বিকালে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই সভার সিদ্ধান্তসমূহ জানাতেই ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি মহাসচিব।
দলের স্থায়ী কমিটির সভায় চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে নির্মীয়মান কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যয্য দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের নির্বিচারে গুলি বর্ষণের ফলে ৫ জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয় বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, এই গণ-বিরোধী সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনীকে যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণেই পুলিশ এখন যখন তখন গুলি করে মানুষ হত্যা করছে যা কোন মতেই একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য উপযোগী নয়। গণতন্ত্রহীনতা, জবাবদিহীনতা ও সুশাসনের অভাবেই এই সব গণবিরোধী ঘটনা ঘটছে। অবিলম্বে নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান ও আহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয় এবং এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়।
সভায় বর্তমান বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ আকারে সংক্রমন এবং মানুষের মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে এই ভাইরাসে সংক্রমিত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের জন্য শোক প্রকাশ এবং আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের রোগ মুক্তির কামনা করা হয়।
তিনি বলেন, সভায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সভা মনে করে এই অনির্বাচিত সরকারের সীমাহীন অবহেলা, অযোগ্যতা, ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দুর্নীতির কারনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সমায়াচিত পদক্ষেপ না নেয়ার কারনে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞবৃন্দ এবং সরকারের গঠন করা জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের পরামর্শকে উপেক্ষা করে লকডাউন ঘোষণা বিলম্ব করা, লকডাউন ঘোষাণা করার পরেও কার্যকর করতে না পারা, অন্যদিকে হাসপাতলগুলোতে পর্যাপ্ত বেড, আইসিইউ, অক্সিজেন সরবরাহ ও ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা না করার কারনে সংক্রমিত রোগীরা চিকিৎসা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে এবং মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে সরকারের কোনও পর্যায়ে কোন জবাবদিহিতার ব্যবস্থা না থাকা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের অবাধ দুর্নীতির কারনে পরিস্থিতি এখন মারাত্মক ভাবে মানুষের জীবনের প্রতি হুমকি এবং জাতীয় নিরাপত্তা প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, করোনার টিকা সংগ্রহ ও আমদানিতে বেসরকারি ব্যবসায়ীকে সম্পৃক্ত করার কারনে এবং সুপরিকল্পিত কোনও কৌশল না থাকার কারনে আজ টীকা প্রাপ্তিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ৩ কোটি টাকার জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটকে বেসরকারি আমদানি কারকের মাধ্যমে আগাম মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, ভারত টিকা রপ্তানী বন্ধ করাতে বাংলাদেশের মূল্য পরিশোধিত টিকার প্রাপ্তি এখন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। প্রথম ডোজ টিকা যারা নিয়েছেন দ্বিতীয় ডোজ টিকা তারা পাবেন কিনা সে ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছেনা। উপরন্ত ১৮ কোটি মানুষকে টিকা প্রদানের কোনও পরিকল্পনাও জনগণের কাছে কখনই স্পষ্ট করে বলা হয়নি। শুধুমাত্র চিহ্নিত ব্যবসায়ীকে আমদানি দায়িত্ব দিয়ে একটি মাত্র উৎস থেকে টিকা আমদানির সিদ্ধান্ত দুর্নীতির কারণে করা হয়েছে বলে বিএনপি মনে করে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, লকডাউন ঘোষনার ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ, দিন আনে দিন খায় মানুষ, শ্রমিক, প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চরম সংকটে পড়ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ২০২০ সালে এই সব মানুষদের অর্থনৈতিক সহযোগীতা এবং সামগ্রিক অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য ৮৭ হাজার কোটি টাকা প্রনোদনা প্রস্তাব দেয়া হয়ে ছিলো। সরকার সেই প্রস্তাব গ্রহণতো করেইনি উপরন্ত বিদ্রুপ করেছে। একই সঙ্গে সরকার ঘোষিত তথাকথিত প্রণোদনায় মালিক শ্রেনীর স্বার্থ রক্ষা করেছে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চরম দুর্ভোগে পড়েছে। সব ধরনের শ্রমিকেরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। অর্থনীতি চরম সংকটে পড়েছে। আমরা প্রস্তাব করে ছিলাম মেগা প্রজেক্টগুলোর অর্থ ব্যয় আপাতত বন্ধ করে প্রান্তিক মানুষের জীবন রক্ষায় তাদের কাছে নগদ অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এবারেও লকডাউন ঘোষণার আগেই সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী ছিলো।
তিনি বলেন, অবিলম্বে টিকা আমদানি, বিতরণ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমান বেড, অক্সিজেন সরবরাহ, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর এর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং করোনা কালে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিকট নগদ অর্থিক সহায়তা প্রদান ও অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। দুর্নীতিতে জড়িত চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়।
ফখরুল বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ থেকে এই অনির্বাচিত দখলদারী সরকার ভিন্ন মত ও বিরোধীদল গুলোকে নিশ্চিহ্ন করবার লক্ষ্যে যে ব্যাপক হারে গণ গ্রেফতার, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হয়রানী শুরু করেছে তার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এই অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা এবং এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠার চক্রান্তের অংশ বিশেষ হিসেবেই এই মিথ্যা মামলা ও গণ গ্রেফতার করা হচ্ছে। অবিলম্বে মিথ্যা মামলা, গণ গ্রেফতার বন্ধ এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানানো হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলের চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সদস্যবৃন্দকে অবহিত করেন। সভায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগ মুক্তি কামনা করা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য যথাক্রমে- ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সাননিউজ/টিএস/বিএস