নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি অব্যবস্থাপনায় লকডাউন বা নিষেধাজ্ঞা কোনটাই মাঠ পর্যায়ে কার্যকর হচ্ছে না বরং সরকারের পরস্পরবিরোধী পদক্ষেপে মানুষ করোনা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বুধবার (০৭ এপ্রিল) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, সর্বত্রই লেজেগোবরে অবস্থা। নানা দূর্ভোগে জনগণ। সরকারের যারা এধরণের সিদ্ধান্ত দিচ্ছে, তাদেরকে বেতন-ভাতা কিংবা সুযোগ সুবিধা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না, কিন্তু তাদের সিদ্ধান্তে জনগণকে পড়তে হয় বিপাকে। আয়-রোজগার, সংসার চালানো কিংবা ভবিষ্যতের চিন্তায় জনগণ আজ দিশেহারা। প্রস্তুতিহীন লকডাউন বা নিষেধাজ্ঞা কোনটাই যে কার্যকর হচ্ছে না, তার প্রমাণ-সড়ক মহাসড়কে দীর্ঘ যানযট। শহরের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের জন্য মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষা। মূলতঃ সবকিছুই চলছে আগের মতোই।
প্রিন্স বলেন, করোনার ২য় ঢেউ মোকাবেলায় গত বছরের মতোই সরকারের পদক্ষেপ সমন্বয়হীন, অপরিকল্পিত, অদূরদর্শী ও কান্ডজ্ঞানহীন। এবার সরকার অনেক সময় হাতে পেলেও পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় গতবারের মতোই হ-য-ব-র-ল অবস্থা। হাসপাতালগুলোতে অবস্থা বেগতিক। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল করোনা রোগী দ্বারা পরিপূর্ণ। কোন সিট খালি নেই। নেই পর্যাপ্ত আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেন। করোনা আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটতে ছুটতে পথিমধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। সরকার শুধু বাগাড়ম্বরেই ব্যস্ত। জনগণ গত বছর করোনা মোকাবেলায় সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও অব্যবস্থাপনার কথা ভুলে যায়নি।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার গত ৫ এপ্রিল ২০২১ থেকে ৭ দিনের জন্য দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষনা দিয়েছে। লকডাউনের দুই দিন অতিবাহিত হয়েছে। কোভিড-১৯ এর ২য় ঢেউ বাংলাদেশে আরও বেশী শক্তি নিয়ে আক্রমণ করেছে। মূলতঃ গত মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও সরকারের উদাসীনতা ও ব্যর্থতায় তা মোকাবেলায় কোন কার্যকর ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। মার্চের শুরু থেকে সংক্রমণ বাড়ার সময় হতেই বিশেষজ্ঞ মহল সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে কার্যকর ও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করলেও সরকার মূলতঃ উৎসব আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। বিএনপি করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণের প্রেক্ষিতে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন এবং দলের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করে সরকারকে উৎসব আয়োজন স্থগিত করে করোনা মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানালেও সরকার তাতে কান দেয়নি। বরং তাদের কর্মকান্ড স্বাভাবিক গতিতে চালিয়ে জনগণকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। বাংলাদেশে সংক্রমণের হার রকেট গতিতে বেড়েই যাচ্ছে। গত এক মাসে সংক্রমণের হার ২ শতাংশ থেকে ৯৬ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রিন্স আরও বলেন, করোনা মোকাবেলায় সরকার হঠাৎ করে গত ৫ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের জন্য বাংলাদেশে লকডাউন ঘোষনা দেয়। এমনিতে সরকারের ভ্রান্তনীতির ফলে জনগণের আয়-রোজগার সংকুচিত হয়ে গেছে। সরকারি দলের লোকজনদের সিন্ডিকেটের ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবমূল্য আকাশচুম্বী। এসব কারণে জনগণ দিশেহারা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের এই আকস্মিক ঘোষনায় নিম্ন আয়ের মানুষসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ বিপাকে পড়ে। সরকারের মন্ত্রীরা লকডাউন বললেও উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন-এটি লকডাউন নয়, কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। লকডাউন নিয়ে সরকারের মধ্যে দুই রকম বক্তব্যে চরম সমন্বয়হীনতারই প্রমাণ মেলে। সরকারের কোন বক্তব্যকে জনগণ বিশ্বাস করবে ? সরকারের এই দ্বিধাগ্রস্ত সিদ্ধান্ত ও সমন্বয়হীনতায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। অপরিকল্পিত ও প্রস্তুতিহীন এসকল পদক্ষেপে নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি, শ্রমিক-কর্মচারী সকলেই ক্ষুব্ধ এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় পরিস্থিতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। দেশব্যাপী বিক্ষোভ করছে ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হকার, দোকান কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষ। এ বিক্ষোভ প্রশমিত করতে সরকার আলাপ-আলোচনার পরিবর্তে দমন-নিপীড়ণের পথ বেছে নিয়েছে। ফরিদপুরের সালথায় গত ৫ এপ্রিল বিক্ষোভরত জনতার ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে একজন নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হন।
তিনি বলেন, একদিকে সরকার বলছে-লকডাউন/নিষেধাজ্ঞায় মিল-কলকারখানা, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী খোলা থাকবে এবং গণপরিবহন, মার্কেট, শপিং মল বন্ধ থাকবে। আবার বলছে-শুধু সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে গণপরিবহন চলবে, কিন্তু দুরপাল্লা ও উপজেলা থেকে জেলা শহরে গণপরিবহন চলবে না। তাহলে চালু থাকা মিল-কারখানায় শ্রমিক-কর্মচারীরা কিভাবে যাবেন ? তাছাড়া সেখানে কি সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থবিধি মেনে কাজ করা সম্ভব ?
প্রিন্স আরও বলেন, সরকার গণবিচ্ছিন্ন বলেই করোনা মোকাবেলায় কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের দুঃখ-দুর্দশা মোকাবেলায় তারা বরাবরই উদাসীন। সরকারে অপরিকল্পিত ও কান্ডজ্ঞানহীন পদক্ষেপে জনগণ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে নিপতিত। বিএনপি করোনা মোকাবেলায় এবং একইসাথে লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত ও কর্মহীন মানুষের সহায়তায় সরকারের বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ দাবি করছে। মিল-কলকারখানা-গার্মেন্টস-দোকান কর্মচারী, হকার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রিকশা-সিএনজি চালক, পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারী, বিভিন্ন রাইড শেয়ারের সাথে সংশ্লিষ্টদেরসহ নিম্ন আয় ও দিন আনে দিন খায় এমন মানুষদের মাসভিত্তিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান করতে সরকারের প্রতি বিএনপি জোরালো দাবি জানাচ্ছে। হাসপাতাল সমূহে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেন নিশ্চিত করার এবং সরকারি খরচে পর্যাপ্ত করোনা টেস্টের দাবি জানাচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, আলাপ-আলোচনার পরিবর্তে গুলি করে লাশ ফেলে জনবিক্ষোভকে সরকার দমন করতে চায়। সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তার কর্মচারী কর্তৃক এক দোকান কর্মচারীকে অমানবিক নির্যাতনের পেক্ষিতে ফরিদপুরের সালথায় গণবিক্ষোভ হলেও সেখানে গুলি করে মানুষ হত্যা ও চার হাজার মানুষকে আসামী করে মামলা দায়েরের ঘটনায় এটি পরিস্কার যে, সরকারের পায়ের নীচে শেষ মাটিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সালথার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে ঘটনার জন্য দোষী কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। পাশাপাশি গুলিতে নিহতের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।
সাননিউজ/টিএস/এসএম