নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাধীনতা দিবসে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশীগুলিতে নৃশংশ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আগামী ২৯ মার্চ সোমবার ঢাকাসহ সকল মহানগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ/ মিছিল, ৩০ মার্চ মঙ্গলবার দেশের সকল জেলা সদরে বিক্ষোভ / মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বিএনপি।
পাশাপাশি এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সকল স্তরের নেতাকর্মী ও জনগণকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
শনিবার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূছি ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দিনে একদিকে যখন জনগণ মহান স্বাধীনতার দিবস পালন করছে তখন অন্য দিকে এই অবৈধ সরকার তার পুলিশ বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে।
ফখরুল বলেন, গত ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দিনে বায়তুল মোকাররম জুমা নামাজের পরে একটি সংগঠনের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিনা উসকানিতে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রায় ২ শতাধিক তরুণ মারাত্মকভাবে গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছে। এর প্রতিবাদে হাটহাজারীতে শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপরে পুলিশের নৃশংশ হামলা ও নির্বিচারে গুলি চালানোয় কমপক্ষে ৪ জন নিহত ও অসংখ্য আহত হয়েছে।
একই সঙ্গে ব্রাম্মণবাড়িয়া এক জন নিহত হয়েছে। মহান স্বাধীনতা দিবসে ৫০ বৎসর পূরনের এই দিনে এই নৃশংশ হত্যাকান্ড জাতির জীবনে এক জঘণ্য কলংকজনক অধ্যায়। আমরা এই হত্যা কান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ গতকালই জানিয়েছি।
তিনি বলেন, মিছিল, সমাবেশ সভা অনুষ্ঠান করা আমাদের সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অধিকার। এই জঘণ্য হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে সরকার তাদের ফ্যাসীবাদী চরিত্রের বহিপ্রকাশ ঘটালো। দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে ধরে রাখবার জন্য হত্যা, খুন, গুম নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধীদল এবং ভিন্নমতকে দমন করে চলেছে। সকল রাষ্ট্র যন্ত্র ব্যবহার করে কর্তৃত্ববাদী শাসন চিরস্থায়ী করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে প্রকান্তরে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপরে গুলি বর্ষণকরায় কমপক্ষে ৫ জন মানুষকে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই নৃশংশ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আজ সারাদেশে প্রতিবাদ মিছিল করেছে। এই সব মিছিলে পুলিশ আক্রমণ করেছে এবং বেশ কিছু সংখ্যাক নেতা কর্মীদের গ্রফতার করেছে।
ফখরুল জানান, হবিগঞ্জে বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছের ছেলে ব্যারিস্টর মঞ্জুরুল কিবরিয়া, জি কে গউছের ভাই- জি কে গফ্ফার এবং ভাতিজা আদনান ফরহাদকে বিনা কারণে আজ দুপুরে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও আজ হবিগঞ্জ জেলায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলায় হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি- জহিরুল হক শরীফসহ ৮ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাছাড়াও হবিগঞ্জ জেলায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে-বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
তিনি বলেন, গাজীপুরে শান্তিপূর্ণ মিছিল চলাকালীন সময়ে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। মিছিল থেকে গাজীপুর জেলা যুবদলের সদস্য- শামীম মিসির, মহানগর যুবদলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ মোল্লা ও জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক- বেলায়েত হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও মিছিলে পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপে গাজীপুর জেলা ও মহানগরের ৯ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।
মানিকগঞ্জে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের ছাত্রদল কর্মী- রাকিব হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ এবং ৮ জন নেতাকর্মী আহত। ফরিদপুর জেলা যুবদলের কোষাধ্যক্ষ- ইলিয়াস, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক-মুরাদ ও সদস্য হেমায়েত, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক- হাসানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ এবং ৩০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আহত হয়েছেন ৯ জন নেতাকর্মী।
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের আক্রমণের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আগামীকাল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।
সাননিউজ/টিএস/এম