নিজস্ব প্রতিবেদক: সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট ঘটনায় যুবলীগ দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল, মেজর হায়দার বীর উত্তম মিলনায়তনে 'সুনামগঞ্জের নোয়াগাঁও এ সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, নির্যাতন ও লুটপাটের প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি'তে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সুনামগঞ্জের নোয়াগাঁও পরিদর্শনের প্রত্যক্ষ বিবরণ তুলে ধরেন- ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্নায়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য নঈম জাহাঙ্গীর, রাষ্ট্রচিন্তার চেয়ারম্যান এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, প্রাণী গবেষক ম এনাম আল হক, ব্যারিস্টার সাদিয়া আমিন প্রমুখ।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন ‘ওই গ্রাম আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত, ওই গ্রামে শুধু সজল সরকার নামে একজন বিএনপির লোক আছেন আমাকে বলেছেন স্থানীয়রা এবং আওয়ামী লীগের লোকজন। ঝনুন দাস বিএনপি করে- এটা স্থানীয় আওয়ামী লীগ জানে না, তারা নাকি প্রথম এই কথা পত্রিকা মারফত শুনেছেন বলেও জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনও হামলার সব জানতো। প্রশাসন তাদের আশ্বস্ত করে বলেছিল হামলা হবে না। তাই গ্রামবাসী পালিয়ে যায়নি। তবু হামলা হয়েছে। এই ঘটনা আমি খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেছি। এই কাজে মসজিদের তিনটি মাইক ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের উপর কর্তৃত্ব কাদের থাকে? সরকারি দলের থাকে।
জাফরুল্লাহ বলেন, এই এলাকা খুবই প্রত্যন্ত অঞ্চল। আমরা সেখানে গিয়েছি। সেখানের মানুষের দারিদ্র্য দেখে বুঝেছি দরিদ্র্য কতো কঠিন। এক-দেড় রুমের খুপড়িতে তারা বাস করে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে যা অকল্পনীয়। আমরা ভেবেছিলাম রামু নাসিরনগরই শেষ ঘটনা। এত দিন থাকতে ১৭ মার্চ কেন তারা বেছে নিলো? বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে কেন বেছে নিয়েছে? কারা বেছে নিয়েছে? সরকার দলের কর্মীরা। বেছে বেছে এই দিনটাকেই তারা এই কাজটি করেছে।
ঐ দিনের হামলায় প্রশাসন নির্লিপ্ত থাকার অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, সেখানের ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার পেয়েছি। যাদের মধ্যে ১০ জন সংখ্যালঘু ও একজন মুসলিম মুক্তিযোদ্ধা। স্থানীয় এই ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা আমার কাছে অভিযোগ করেছেন, হামলার বহু আগে তারা ইউএনও কে জানিয়েছেন এবং সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু তাদের ইউএনও সাহায্য তো করেইনি; বরং ফোনে ঐ সময় দুর্ব্যবহার করেছেন।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০ পরিবারের বাড়ি নির্মাণ, একজন বিচারপতি, সাবেক আইজিপি নুর মোহাম্মদ ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা এম করিমের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন, শেখ রেহেনা কে প্রধান করে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন এবং মসজিদের মাইক ধর্মীয় কাজ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার না করারও দাবিও জানান ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
ফেসবুকে উস্কানিমূলক পোস্ট দেয়ার অভিযোগে গত বুধবার সকালে শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা চালিয়ে ৫টি মন্দির ও ৮৮টি বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও আসবাবপত্র তছনছ করে হামলাকারীরা।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে শাল্লা থানা পুলিশের এসআই আব্দুল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকশজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ছাড়া হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বাদী হয়ে ৮০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
সান নিউজ/টিএস/আরআই