স্বার্থ দ্বন্ধে-বিভাজনে ভুগছে আওয়ামী লীগ
রাজনীতি

স্বার্থ দ্বন্দ্বে-বিভাজনে ভুগছে আওয়ামী লীগ

মোহাম্মদ রুবেল : কোনো দল সরকার গঠন করলেই ভোল পাল্টে সেই দলে ভিড় জমে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাসহ হাইব্রিড আর অনুপ্রবেশকারীদের। এসব আগাছা-পরগাছারাই স্থানীয় সরকার নির্বাচন আসলে ব্যক্তি রাজনৈতিক স্বার্থে ক্ষমতার প্রতিযোগিতার দ্বন্দ্বে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। এতে সৃষ্ট অন্তঃকোন্দল থেকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে তৃণমূল আওয়ামী লীগে। কখনও কখনও জড়ে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ হাই কমাণ্ডের বহিষ্কারের হুমকিতেও থামছে না অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ-সংঘাত। ফলে দ্বন্ধ কোন্দল জিইয়ে থাকায় বিভাজনে ভূগছে আওয়ামী লীগ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত কার্যত মাঠে না থাকায় এবং দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রতিদ্বন্দ্বী দেয়া, নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে দেয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও বাকযুদ্ধের ঘটনায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বই এখন দৃশ্যমান। তাতে মাসুল হিসেবে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে আওয়ামী লীগ। ।

আইন ও শালিশ কেন্দ্রের তথ্যনুসারে ২০২১ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ১০৩ টি। তাতে নিহত ১৪ ও আহত হয়েছে ১২৭৫ জন। এরমধ্যে ১৩টি অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় নিহত ৯ জন, অন্যান্য ৫ জন ও আহত হয়েছেন ২৮২ জন। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ১৩৩টি। নিহত ২৯ ও আহত হয়েছে ১৫২৮। এরমধ্যে ৫৯ টি অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ২০ জন অন্যান্য ৯ জন, আহত ৭৩১ অন্যান ৭৯৭ জন।

২০১৪ থেকে ১৯ পর্যন্ত ৬ হাজার ৭১০টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তাতে নিহত হয়েছেন ৬৩৫ জন, আহত ৪১ হাজার ৩৪৫ জন। এরমধ্যে ২০১৯ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৩৯ জন নিহত হয়েছেন, আহত হন ২ হাজার ৬৮৯ জন। ২০১৬ সালে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে নিহত হন ৮৩ জন। ২০১৫ ও ২০১৪ সালে ৩৩ ও ৩৪ জন নিহত হন।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সাল ছিল দলটির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী। ঐ সময়ে নির্বাচনকালীন সহিংসতায় নিহত হন ১১৬ জন। এরমধ্যে অর্ন্তকোন্দলে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে প্রাণ হারান ৭১ জন।

কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা ১২ বছর ক্ষমতায় থাকায় এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখতে নিজেদের নিয়েই খেলায় উন্মাদ স্থানীয় নেতারা। দলটি এখন গ্রুপ-সাব গ্রুপে বিভক্ত জেলা-মহানগর থেকে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যন্ত। ফলে তৃণমূলে চেইন অব কমাণ্ড ভেঙ্গে পড়েছে। এই সুযোগেই বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা মূলত আত্মরক্ষাতেই আওয়ামী লীগ ঢুকে পড়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার বিশেজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার সাননিউজকে বলেন, এক চেটিয়া দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার মোহে হানাহানি ঘটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া মাঠে বিরোধীদলের অনুপস্থিতির কারণে নিজেরা নিজেরাই একে অপরকে লক্ষ্যবস্তু করছে। দল থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন নজিরও খুব একটা নেই।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বৃহস্পতিবার সাননিউজকে বলেন, সাংগঠনিক ব্যবস্থা একটা চলমান প্রক্রিয়া। দলের বিভিন্ন পর্যায় এসব ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলের মধ্যে শৃঙ্খলা আনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চলছে।

দলীয় সূত্র বলছে, বিদ্রোহী প্রার্থীসহ নেতাদের লাগামহীন গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব ও সংঘাত রুখতে তলব, শোকজ ও বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্তও নিয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমান্ড। কিন্তু তাতেও ফল মিলছে না। যার বাস্তবচিত্র হয়ে যাওয়া কয়েক ধাপের পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বাইরে যেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করা। ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দেশের ৬০ পৌরসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে একক প্রার্থী দিতে পারেনি আওয়ামী লীগ, যে কারণে আট পৌরসভায় মেয়র পদে নৌকাকে হারিয়ে বিজয় নিশ্চিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী। একইভাবে ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ৬৩টি পৌরসভা নির্বাচনে ১৪টিতে নৌকাকে ডুবিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছে। উপজেলা নির্বাচনগুলোতেও ছিল একই চিত্র। যা আসন্ন ১১ এপ্রিলে প্রথম ধাপের ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব পড়ার সম্ভানা রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের চিত্র :-

সম্প্রতি তৃণমূলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের (বাদল) অনুসারীদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত হন। সকাল ৬ টা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এর আগেও গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে একজন সাংবাদিক নিহত হন। ১৩ মার্চ সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের পদ পেতে একাধিক গ্রুপ একে-অপরের মুখোমুখি সংঘর্ষে গত সোমবার ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

গত রোববার রাত সাড়ে ৯ টায় চট্টগ্রাম নগরীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের স্থানীয় সোহেল গ্রুপ ও রিপন গ্রুপের মারামারির মধ্যে ছুরিকাঘাতে এক যুবকের মৃত্যু।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অনুপ্রবেশ কারীরা দলে ঢুকতে শুরু করে। যা এখন বেড়েছ হাজার গুণ। এ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত এবং ফ্রিডম পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে শতাধিক যোগদানের ঘটনা ঘটেছে। এরা তৃণমূল শাখাগুলোতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদপদবি বাগিয়ে নিয়েছে। যার পরিমাণ ৪ শতাংশ। কেউ কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রও হয়েছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। তারাই এখন স্খানীয় পর্যায়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। দলের ত্যাগী নেতাদের পক্ষে এখন আওয়ামী লীগ করাই দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সাননিউজ অনলাইন পোর্টালকে বলেন, দলের মধ্যে যারাই যে স্তরেই ঢুকে পড়ছে, তারা কারও না কারও হাত ধরেই ঢুকছে। এরা সবাই এখন আওয়ামী লীগ হতে চায়। এতে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রেই উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি বলেন. অনুপ্রবেশ কারীদের যারা দলে ঢুকাচ্ছে, তারা আসলে কারা? তারা পার্টির জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সাননিউজকে বলেন, বিভিন্ন সময় বিশেষ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন কালীন সময় অন্য দল থেকে এসে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বা বিদ্রোহী প্রার্থীর সাথে ভিড়েছেন। এতে সমস্যা তৈরী হচ্ছে। সমস্যা নিরসনে বিভাগীয় ৮টি গঠন করা হয়েছে। এ টিমের দায়িত্ব প্রাপ্তরা তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে আগামী কাউন্সিল পর্যন্ত কাজ করবে। যাতে নতুন করে বিএনপি- জাসায়াতসহ ফ্রিডম পার্টি থেকে আর কেউ ঢুকতে না পারে।

তিনি বলেন, অনুপ্রবেশ কারীদের দলে যারা তাদের প্রশ্রয় দিয়েছে, তাদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। তাদের ব্যাপারেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিড নেতারা জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগের সহবাসে । তারমধ্যে উল্লেখ স্থানগুলো হলো: ২০১৬ সালে বিজয়ের মাসে আওয়ামী লীগে যোগ দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারঘরিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল খায়ের। তার আগে একই বছর ১ অক্টোবর জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা সোহরাব আলী, জামায়াতের শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় নেতা আফরোজ জুলমত আলী, জামায়াত নেতা আবদুল্লাহহেল বাকী, মিজানুর রহমান আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

২০১৫ সালের ৮ জুন জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগের এমপি সামছুল আলম দুদুর হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন নাশকতা ও সহিংসতার ১০ মামলায় অভিযুক্ত পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আবদুস সালাম।

২০১৫ সালে রাজশাহী বাগমারার উপজেলা ইসলামী ছাত্রশিবির রাজশাহী পশ্চিম সাংগঠনিক জেলার সাবেক সভাপতি মোল্লা এম আলতাফ হোসেন আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি বর্তমানে শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। একই বছর আওয়ামী লীগে যোগ দেন বাগমারায় বাংলা ভাইয়ের সহযোগী হিসেবে পরিচিত জেএমবি নেতা আবদুস সালাম। তিনি বর্তমানে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক।

সাননিউজ/এমআর/টিএস/বিএস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সবজির বাজারে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কমেছে পেঁয়াজ, সবজি...

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা, নারী আটক

জেলা প্রতিনিধি : সাভারের আশুলিয়ায় জীবিত স্বামীকে বৈষম্যবিরোধ...

বৈষম‌বিরোধী আন্দোলনে বেঁচে ফেরার আশা করেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন আন্দোল&zwnj...

বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেন পূজা 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চিত্রনায়িকা ও মডেল পূজা চেরি ডজনখানেক ছব...

ইসলামী ব্যাংকের সাথে হাব-এর মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর উদ্যোগে হ...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেশ কি...

শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

সান নিউজ ডেস্ক: প্রতি সপ্তাহের একেক দিন বন্ধ থাকে রাজধানীর ব...

শেখ হাসিনাসহ ৬১ জনের নামে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জে আদালতের নির্দেশে সাবেক প্রধা...

গুমের সঙ্গে জড়িতরা পার পাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বের কোথাও গুমের সঙ্গ জড়িতরা পার পায়নি...

বাংলাদেশিদের পাঁচ দেশ ভ্রমণে সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বের ৫ দেশে যেতে চাওয়া বাংলাদেশিদের জন...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা