নিজস্ব প্রতিবেদক : কঠিন দুঃসময় ও অন্ধকার সময় আমরা অতিক্রম করছি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ঘর থেকে বের হলে কেনো যেনো পরিচিত একটি দেশে বাস করছি বলে মনে হয় না।
একটা স্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যে আমরা আছি বলে মনে হয় না। গাড়িতে যখন আসি ডান দিকে বাম দিকে সবসময় উকি দেই। মনের মধ্যে আতংক থাকে গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে বের করে ফেলবে কিনা? বা গাড়ির উপর আক্রমণ করবে কিনা? অথবা সিএনজিতে আছি, সিএনজি থামিয়ে আমাকে অদৃশ্য করে দিবে কিনা। এই আতংক এই ভয় আমাদেরকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করে চলে।
সোমবার (১৫ মার্চ) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল অসুস্থ নেতাকর্মীদের রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিলের বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
রিজভী আহমেদ বলেন, করোনা টিকার ব্যাপারে আমরা এমনি এমনি বিরোধিতা করিনি। আন্তর্জাতিক নিউজ এজেন্সি রয়টার্স বলেছে বাংলাদেশে-ভারত যে টিকা পাঠাচ্ছে সেটা ট্রায়াল করার জন্য পাঠাচ্ছে। অর্থাৎ গবেষনাগারে তেলাপোকা, ব্যাঙ কেটে এর ইন্টারনাল এনাটমি আমরা জানতাম। ঠিক তেমনি আমাদের ল্যাবরেটরির ব্যাঙ হিসেবে গণ্য করছে ভারতের নীতিনির্ধারকরা। আর একারণেই তারা এখানে পরীক্ষামূলকভাবে পাঠিয়েছে। দেখি কত লোক মারা যায়। তারপর আমরা আমাদেরটা দিবো।
আমি যতটুকো জানি অন্য দু'একটি দেশে যেখানে দিয়েছে সেখানে কিন্তু বন্ধ করে দিয়েছে। নতজানু সরকার থাকলে, আত্মসমার্পনকারী সরকার থাকলে তারা কিছুই এগুলোর পরোয়া করেনা। তারা প্রহসন করছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি ভ্যাকসিন নিয়েছেন। কিভাবে নিয়েছেন সেটা কিন্তু তিনি জানাননি। গতকাল গত পরশুদিন ওই যে গাজীপুরের মন্ত্রী আছে না আ ক ম মোজাম্মেল হক তার ওখানে সিরিঞ্জ ধরছে কিন্তু তা পুশ করার মতন কোন ছবি নেই। কারণ ওরা নিজেরাও ভীতসন্ত্রস্ত। ওরা নিজেরাও জানে এটা দুই নম্বর। এই টিকার কার্যকরীতা নাই। এদের মতন নাটক আর কেউ করতে পারবে না। বড় বড় অভিনেতা রাজ্জাক, অমিতাভ বচ্চন এরা সব ফেল আওয়ামীলীগের কাছে।
রিজভী বলেন, আমাকে অনেক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছেন আপনি টিকা নিবেন কিনা? আমি বলেছি ন্যায় সঙ্গতভাবে আমি যে টিকার বিরোধীতা করেছি বাঁচি আর মরি ওই টিকা আমার শরীরে প্রবেশ করতে দিবো না। আমি আমার কথা রেখেছি।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলছেন, ‘বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছে।’ ব্যক্তিগত আক্রমণতো বিএনপি করছে না ওবায়দুল কাদের সাহেব, আপনি কি বলেন? ঘরের মধ্যে থেকে আপনার মানসিক সমস্যা হয়েছে। কারণ আপনাদের অধিকাংশেরই মানসিক সমস্যা। আপনার ব্যক্তিগত সমস্যা আপনার আত্মীয়স্বজনরাই তুলে ধরছে। আমাদের আর বলার কি দরকার।
আমরা কেনো ব্যক্তিগত আক্রমণ করবো? খবরের কাগজ খুললে বড় বড় মির্জা কাদের তার নামে মামলা মানুষ হত্যার, তাদের
আওয়ামীলীগ এর মধ্যে মারামারি হয়ে সিএনজি চালক মারা গেছেন। এটার কি উত্তর দিবেন ওবায়দুল কাদের সাহেব? এটাতো গণমাধ্যমে পত্রপত্রিকায় বড় বড় করে উঠেছে। আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, আপনি ও আপনার ছোটভাই ওখানে বিএনপির বলার কি আছে। এটাতো গণমাধ্যম বলছে সাংবাদিক বলছে। এলাকার লোকরা বলছে, বড় বড় করে হেডলাইন বসছে। আপনি এখন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে কোনই লাভ হবে না।
তিনি আরও বলেন, আপনার ছোটভাই বলছে বেগমগঞ্জে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য দায়ী আপনি। কোম্পানীগঞ্জের জন্য দায়ী তার ভাবি, অর্থাৎ ওবায়দুল কাদের সাহেবের স্ত্রী। এই যে গৃহ বিবাদ সেটাও পত্রিকায় এসেছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনার এলাকায় কি ঘটছে পত্রপত্রিকায় আপনি পড়েন না? আপনার ভাই কি বলছে, আপনার আওয়ামীলীগ এর নেতারা কি বলছে? আপনার ব্যক্তিগত বিষয়তো আপনার ভাই তুলে ধরছে, আপনারাই তুলে ধরছেন।
বিএনপির আর কি বলার আছে। বিএনপির বলার আছে আপনাদের সরকারের চরিত্রটাই একেবারে মাফিয়াদের মতন। ঘরের মধ্যে বসে থেকে জাস্ট ইশারা দিয়ে মানুষ হত্যা করা।
রিজভী বলেন, ওই যে ছেলেটি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছে ভোট ছাড়া তার কথাবার্তা দেখুন। একটি ব্যারিস্টার ছেলে তার কথাবার্তাতো একটু মার্জিত হবে, পরিশালীত হবে। কেমন যেনো ধররে, মাররে, কেটে ফেলবো এই ধরনের তার কথাবার্তা। তার ফলাফল বহিঃপ্রকাশ দেখেন। তিনি গোপালগঞ্জ যাবেন সেখানে ফেরিতে দু'জন লোক পুলিশের অনুমতিতে উঠেছে। তার সিকিউরিটি যারা ছিলেন তারা তাদের মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। তাপস আপনি কে? আপনার ওই ফেরিতে একজন সাধারণ মানুষ যেতে পারবে না আর গেলে পরে হবে রক্তাক্ত। আপনি মেয়র নামের অযোগ্য। আপনি বিনা ভোটের মেয়র বলেই আপনার মধ্যে মানবতা নেই। আপনার মধ্যে ন্যুনতম কোন সংস্কৃতি নেই। আপনি একটা গুন্ডার মতো আচরণ করছেন।
তিনি বলেন, যারা জনগণের ভোটে মেয়র হয়না তারা হয় বেপরোয়া, জমিদার। এই দেশটাকি আপনাদের জমিদারি? ফেরি কি আপনাদের ব্যক্তিগত মালামাল যে আপনি ছাড়া আর কেউ উঠতে পারবে না। আর উঠলে পরে পরিণাম হবে রক্তাক্ত হওয়া। আজ গুন্ডারা হয় মেয়র, মাফিয়ারা হয় মন্ত্রী।
আয়োজক সংগঠনের সদস্য ও বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুর সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সাননিউজ/টিএস/এম