নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘দেশে পাঁচ লাখ ভারতীয় বিনা পাসপোর্টে কাজ করে’ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাম্প্রতিক এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ নিজেকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবী বলে দাবি করেন- আমি সেটাকে সম্মান করি। কিন্তু তিনি যখন বলেন যে, দেশে পাঁচ লাখ ভারতীয় বিনা পাসপোর্টে কাজ করে- এই তথ্য তিনি কোথায় পেলেন? কোন তথ্যের ভিত্তিতে তিনি এ মন্তব্য করেছেন? এটি একটি ভ্রান্ত তথ্য। তিনি জাতিকে বিভ্রান্ত করতে এসব কথা বলছেন।
মন্ত্রী বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে পাকিস্তানিরা এ ধরণের ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে ও ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে ২৩ বছর শোষণ করেছিল। দেশের একদল বুদ্ধিজীবী, রাজাকার, আলবদর ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘ভারত বাংলাদেশ দখল করে ফেলবে- এমন মিথ্যাচার ও জুজুর ভয় দেখিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। সেই একই গোষ্ঠী, স্বাধীনতাবিরোধী-শক্তি, পাকিস্তানের এ দেশিয় দোসর ও সহযোগীরা বিভ্রান্তমূলক ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে, মিথ্যাচার করে জাতিকে এখনও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
কৃষিমন্ত্রী শনিবার (১৩ মার্চ) ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কৃষিবিদ সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
এসময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিবান্ধব ও কৃষকদরদী। তার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরলস কাজ করছে। করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্যসংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনানুয়ায়ী প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষের আওতায় আনতে সম্প্রতি ৪৩৮ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় ও পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হবে। ফলে খাদ্য উৎপাদন আরও বৃদ্ধি হবে।
নতুন জাতের ফসলের বীজের উৎপাদন ও বিতরণে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে বিএডিসির কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে বীজ, সার, সেচসহ কৃষি উপকরণের প্রাপ্তি ও বিতরণে বিএডিসির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের গবেষক ও বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে ফসলের অনেক উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। দ্রুত এসব জাতের বীজের উৎপাদন ও কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করতে হবে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি; এখন নিরাপদ ও পুষ্টিসম্মত খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে কাজ করছি। সেটি অর্জন করতে হলে কৃষিবিদদেরকে আরও কঠোর ও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে।
কর্মকর্তাদেরকে বদলি পদায়নের জন্য তদবির না করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, আপনাদের অনেকেই প্রকল্পের পরিচালক (পিডি), প্রকল্প উপপরিচালক বা পছন্দমত পদে পদায়ন ও বদলির জন্য নানাভাবে তদবির করেন। এটি কোন মতেই কাম্য নয়। যারা তদবির করেন তাদেরকে আমি একদম পছন্দ করি না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. নজরুল ইসলাম। বিএডিসি কৃষিবিদ সমিতির সভাপতি রিপন কুমার মণ্ডলের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চন্দ্র দে ও সাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জয় রায়। বীজ ও সার ব্যবস্থাপনায় বিএডিসির কৃষিবিদদের ভূমিকার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মো. আজিম উদ্দিন। সাধারণ সভায় সারা দেশে কর্মরত বিএডিসির তিন শতাধিক কৃষিবিদ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
সান নিউজ/এমআর/এসএস